নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের স্বর ও মাত্রা আরও কয়েক দাগ বাড়িয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
সোমবার তেখালির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন এবার ভোটে তিনি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন। পরে জানান, পারলে তিনি ভবানীপুরেও প্রার্থী হবেন।
দিদির সেই ঘোষণার পর পরই রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে বিজেপির মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, “মাননীয়া, আপনাকে হাফ লাখ ভোটে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।”
শুভেন্দু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তেখালিতে দিদির সভার পরদিনই তিনি হেঁড়িয়াতে সভা করে তার জবাব দেবেন। এদিন সেটাই করেন তিনি। হেড়িয়ার সভা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমরা গতকাল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীকে দেখলাম তিনি উদ্ভ্রান্ত, তিনি রাজনৈতিক ভাবে হতাশাগ্রস্ত”। এর পরই শুভেন্দু দিদিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “মাননীয়া এক জায়গায় দাঁড়াতে হবে, দু জায়গায় দাঁড়ালে হবে না। এখন থেকে প্রাক্তন এমএলএ লেটারহেড ছাপিয়ে রাখুন। হারাবই হারাব।”
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা আরও বলেন, “আমি বিজেপি করি। তাই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতে পারব না নন্দীগ্রামে কে প্রার্থী হবেন। কিন্তু মাননীয়া পারেন। কারণ, আমি তো বলেছি, ওটা দেড় জনের পার্টি। পিসি ভাইপোর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করতেই আবদুল মান্নান-সুজন চক্রবর্তীরা বলেছিলেন, “তৃণমূলনেত্রী ভয় পেয়েছেন। ভবানীপুরকে আর নিরাপদ মনে করছেন না।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, এক জায়গায় প্রার্থী হওয়ার কথা বলে শুভেন্দু পাল্টা প্যাঁচে ফেলতে চাইল তৃণমূলকে। কারণ, ভবানীপুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের পাড়া। সেখানে যতই যাই হোক, মমতা প্রার্থী হলে জিতে গেলেও যেতে পারেন। কিন্তু নন্দীগ্রামের অলি গলি তাঁর অতটা পরিচিত নয়। শুধু নন্দীগ্রামে লড়লে তা ঝুঁকিপূর্ণ যেমন হবে, তেমনই তৃণমূলকে সেখানে সময় দিতে হবে।
নন্দীগ্রামে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। শুভেন্দু দল ছাড়ার পরই তৃণমূলের অনেকে তাই আশা করছেন, নন্দীগ্রামে শুভেন্দু সংখ্যালঘু ভোট পাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার সেটাই ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারে।
এদিনের সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, “মাননীয় কার ভরসায় নন্দীগ্রামে দাঁড়াচ্ছেন। ৬২ হাজারের ভরসায়? পদ্ম তো জিতবে ২ লক্ষ ১৩ হাজারের ভরসায়। আর ৬২ হাজারেও সিঁধ কাটব।”
নন্দীগ্রামে সংখ্যালঘুদের মধ্যে শুভেন্দুর যে জনপ্রিয়তা রয়েছে তা স্থানীয় নেতারাই বলেন। কারণে, ইদে-উৎসবে, বিয়েতে পড়াশুনায় তাঁদের পাশে থেকেছেন শুভেন্দু। অনেকের মতে, শুভেন্দু ৬২ হাজার বলতে সংখ্যালঘু ভোটকেই বোঝাতে চেয়েছেন।
সোমবার তেখালি সভা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি আনিসুরের বাইকে চেপে নন্দীগ্রামে ঢুকেছিলেন।
শুভেন্দু এদিন বলেন, “সবটাই মিথ্যা। উনি নন্দীগ্রামে সেদিন ঢুকতে পারেননি। পুলিশের সামনে গিয়ে নিরাপদ স্থানে বসে ছিলেন। নন্দীগ্রামের শহিদদের নামও ভুল বলছেন।” এ কথা বলে এদিন শুভেন্দু গড়গড় বলে যান, নন্দীগ্রামে কে কবে শহিদ হয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে নন্দীগ্রামের লড়াই যে জমে গেল তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। একুশের ভোটে সব থেকে জবরদস্ত লড়াই হবে পূর্ব মেদিনীপুরের এই বালি-মাটিতেই।