দু’দিন আগে বলেছিলেন, ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও।’ দু’হাত মুঠো করে সেই গর্জনের মধ্যে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছোড়ার বার্তা ছিল।
আজ মঙ্গলবার, যেন ভয় দেখাতে চাইলেন শুভেন্দু অধিকারী। পূর্বস্থলীতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যৌথ জনসভা ছিল। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, “বালি, কয়লা, পাথর, গরু পাচার করেছে। এরা এবার জিতলে কিডনি পাচার করবে!”
রাজনীতিতে এহেন আক্রমণ মারাত্মক। এর অভিঘাত কী, কতদূর হবে জানা নেই। তবে বোঝা গেল, বর্তমান ব্যবস্থায় দুর্নীতি কীরকম মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে তা বোঝাতে চেয়েছেন সদ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা শুভেন্দু অধিকারী।
গত শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঠিক আগে তাঁর পুরনো দলের অগণিত সমর্থক ও সতীর্থদের উদ্দেশে একটা খোলা চিঠি লিখেছিলেন শুভেন্দু। তাতে তিনি বলেছিলেন, তৃণমূল দলটা ভিতর থেকে পচে গিয়েছে।
যা শুনে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “পাঁচ বছর মন্ত্রী থাকার পর মনে হল, দলটা পচে গেছে। ওনার কি ব্রেনের প্রসেসর স্লো?”
তৃণমূল এ প্রশ্ন তুলবেই। কিন্তু শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপিতে যাওয়া এক বিধায়ক বলেছেন, রাজনীতিতে সকলেই সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি কংগ্রেসের থেকে সুবিধা পাননি? ২০০৯ সালে লোকসভা ভোট, ১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস তৃণমূলের পাশে না থাকলে বাংলায় পরিবর্তন হত কি? সেই তৃণমূল ২০১২ সালে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার থেকে তো সমর্থন তুলে নিল। মওকা বুঝেই তো সমর্থন তুলেছিল। কংগ্রেসকে চোর, দুর্নীতিপরায়ণ দল বলেছিল। তা হলে তো বলতে হয়, চার বছর ধরে কংগ্রেসের সমর্থন নেওয়া, কেন্দ্রের থেকে সমস্ত সুবিধা নেওয়ার পর বোধদয় হয়েছিল?
টেটের দুর্নীতি নিয়েও এদিন সরব হন শুভেন্দু। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্থায়ী কাজে দু’চার হাজার টাকার অস্থায়ী কর্মী রাখা নিয়েও তৃণমূলের সমালোচনা করেন প্রাক্তন পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “তৃণমূল এখন কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ওটা আর রাজনৈতিক দল নেই। যাঁদের ন্যূনতম আত্মসম্মান বোধ রয়েছে তাঁরা তৃণমূলে থাকতে পারবেন না।”
এর আগে ডায়মন্ড হারবারে সম্প্রতি একটি জনসভা করেছেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করলেও সেদিন শুভেন্দুকে প্রকারান্তরে উদ্দেশ করে তিনি বিশ্বাসঘাতক, বেইমান বলেছিলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, ২৭ ডিসেম্বর তিনি আরেকটি জনসভা করতে পারেন। অনেকে মনে করছেন, এ বার অভিষেকও হয়তো কিছু পাল্টা বলতে চাইবেন। দেখা যাক, তিনি কী বলেন, বা আদৌ কিছু বলেন কিনা।