রাজনীতির প্রতি বরাবরই একটা কৌতূহল ছিল সেই ছাত্র জীবন থেকে। কলেজে পড়ার সময় তা আরও গভীর হয়ে ওঠে। অনুধাবন করি ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব। আমাদের কলেজে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ছিল। ছিল ছাত্র পরিষদ, তৃনমূল ছাত্র পরিষদ, এসএফআই, এবিভিপি, এসইউসিআই। ছিল সৌজন্যের রাজনীতিও। জানিনা এখনও আছে কিনা। এখন তো কলেজে কলেজে আর Election হয় না, হয় Selection. Selection এর নামে কোথাও কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে ছাত্র সংসদের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও চলছে তোষণের রাজনীতি।
বিগত কয়েক বছর ধরে কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ। ছাত্র রাজনীতির নামে চলছে গুণ্ডামি, মস্তানি আর তোলাবাজি। ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির নামে তোলাবাজির সিন্ডিকেট বানিয়ে নিয়েছে। ছাত্র এবং শিক্ষক/প্রফেসার এর মধ্যে সুসম্পর্ক নেই। ছাত্ররা অধ্যক্ষকের গায়ে হাত তুলছে। কলেজ পরিচালন কমিটির মাথায় অশিক্ষিত, গুন্ডা মস্তানদের মাথায় বসিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। কেউ জামার কলার ধরছে তো কেউ জলের মগ ছুঁড়ে মারছে। এই হল শিক্ষা ব্যবস্থার হাল। শিক্ষার পরিবেশ। যাদের ছাত্র জীবন শুধু হিংসা, দাঙ্গা আর মারামারির ইতিহাসে পরিপূর্ণ, তারা আগামী দিনে নিজে কি পথ ধরবে, আর অন্যকেই বা কি করে পথ দেখাবে। সৌজন্যের রাজনীতির আসল শিক্ষা শুরু হোক ছাত্র রাজনীতি থেকে …
অথচ ভাবুন, আজকের বাংলার বেশিরভাগ রাজনীতিবিদের আবির্ভাব সেই ছাত্র রাজনীতি থেকে। আপনি কি জানেন, আজকের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সোমেন মিত্র, সুজন চক্রবর্তী, শমিক লাহিড়ী কিংবা শুভেন্দু অধিকারীও ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। তাহলে আজ উনাদের এত অনীহা কেন এই ছাত্র রাজনীতি নিয়ে? কেন বন্ধ ছাত্র সংসদ নির্বাচন? কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটি থেকে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা আগামী দিনের রাজনীতিতে উঠে না আসে তবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মনিরুল, আরাবুল কিংবা বেচারাম মান্নাকে নিয়েই খুশি থাকতে হবে। পরিনাম যা হওয়ার তাই হবে।
শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তব কি তাই বলে? স্কুল, কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধুই রাজনীতি। স্কুল, কলেজের নিয়োগ থেকে ছাত্র ভর্তি সবেতেই দুর্নীতি। কিন্তু কেন? কেন রাজনীতি মুক্ত হতে পারে না। নাকি সৎ ইচ্ছার অভাব? কেন বারবার বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন শিক্ষক কিংবা প্রফেসাররা? কেন ছাত্র ভর্তিতে উঠবে টাকা পয়সা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ কেন ঘুষ দিতে না পারার কারনে ছাত্র- ছাত্রীরা আত্মহত্যা করবে, কিংবা তাদের কুপ্রস্তাব দেওয়া হবে? কবে বন্ধ হয়ে এই নোংরামি?
সেই তো কলেজে কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে স্বচ্ছতা আনতে অন লাইন ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, (বাস্তবে হবে কিনা তা সময় বলবে)তবে কেন অনলাইন-এ ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি হল? পরিনত রাজনীতির পরিচয় পাব কবে? কেন কলেজের রাজনীতিতে রাজনীতির মুল স্রোতে থাকা রাজনীতিবিদরা কলেজের সমস্যায় নাক গলিয়ে ফেলেন? কবে বন্ধ হবে এই ছ্যাবলামি…
এখন তো আবার রাজ্যে পালাবদল শুরু হয়েছে। ছাত্র পরিষদ থেকে এবিভিপি যাওয়ার একটা হিড়িক শুরু হয়েছে। শাসক দল কি সাহস দেখাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের? পারবে কি শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতি মুক্ত করতে? করা যায় যদি সৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকে, হাজার মডেল রয়েছে। শুধু শিরদাঁড়া সোজা রেখে তার সফল প্রয়োগ করতে হবে? শিক্ষা মন্ত্রী সেই সাহস দেখাবেন কি? সময় বলবে!!