এনআরএস মিডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শিকেয়। লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের সমর্থন করে সিনিয়র ডাক্তার, সুপার, প্রিন্সিপ্যাল, প্রফেসরদের তরফ থেকে চলছে গণইস্তফা। এর মধ্যেই সমাধানসূত্র বের করতে শুক্রবার সন্ধ্যায় নবান্নে গিয়েছিলেন চার বিশিষ্ট চিকিৎসক। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকেও কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি। জুনিয়র ডাক্তাররা নবান্নে যাননি। শনিবার বিকেল ৫টায় ফের নবান্নে আসতে বলা হয়েছে তাঁদের। কিন্তু যাবেন কি তাঁরা? সে দিকেই তাকিয়ে সবাই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার সন্ধেবেলা বৈঠক করেন চার প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়, মাখনলাল সাহা, অভিজিৎ চৌধুরী ও অলোকেন্দু ঘোষের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে চিকিৎসক নেতা নির্মল মাঝি। সন্ধ্যা ছ’টায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রায় তিন ঘণ্টা বসে থকার পরেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নে ডাকা হলে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, তাঁরা যাবেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএস-এ এসে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে ও সেইসঙ্গে তাঁদের দাবিদাওয়া মেনে নিতে হবে। অন্যদিকে প্রবীণ চিকিৎসকদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যাবেন না। জুনিয়র ডাক্তারদের এসেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে অভিযোগের আঙুল উঠছে আমলাদের উপরেও। কারণ যখন থেকে এই সমস্যা শুরু হলো, তখন থেকে তা সমাধানের কোনও চেষ্টা আমলাদের মধ্যেও দেখা যায়নি। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়েছে। বর্তমানে তা হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে।
এ দিকে শনিবার সকালে এনআরএস-এ এসেছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ড. শান্তনু সেন। আছেন আইএমএ-র রাজ্যের সদস্যরাও। এনআরএস-এর প্রশাসনিক কর্তা ও পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তাঁরা। এরপর হয়তো জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন আইএমএ সদস্যরা। কীভাবে রফাসূত্র বের করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দু’পক্ষই অনড়। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, তাঁর কাজ তিনি করেছেন। প্রশাসন নিজের কাজ করেছে। কিন্তু কিছু বিরোধী দল ও আউটসাইডাররা সমস্যা করছে। এটা কোনও মতেই বরদাস্ত করা যাবে না। অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তার ও ইন্টার্নদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে আহত চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এনআরএস হাসপাতালে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ১০ জুন ওই হাসপাতালে যা ঘটেছিল, বিস্তারিতভাবে তার নিন্দা করতে হবে। কাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ধারায় কেস দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে। পুলিশ এনআরএস, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও রাজ্যের অন্যত্র ডাক্তারদের হামলার হাত থেকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে গাফিলতি দেখিয়েছে। সেজন্য পুলিশের বিরুদ্ধে যে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে, তারও প্রমাণ দিতে হবে। রাজ্য জুড়ে ডাক্তার ও ডাক্তারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, তা তুলে নিতে হবে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সশস্ত্র রক্ষী মোতায়েন করতে হবে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে সবাই তাকিয়ে রয়েছেন শনিবার বিকেলের দিকে। নবান্নে কি যাবেন জুনিয়র ডাক্তাররা? মুখ্যমন্ত্রীও কি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসবেন? উত্তর দেবে সময়।