প্রাথমিক টেটে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি রাজর্ষী ভরদ্বাজ যে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৩ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ১৬ হাজার ৫০০ শূন্য পদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যাঁরা টেট উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং যাঁদের প্রশিক্ষণ রয়েছে, একমাত্র তাঁরাই আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছিল পর্ষদ। এর পর শুরু হয় বাকি প্রক্রিয়া। মেধা তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ১৫ হাজার ২৮৪ জন। জানুয়ারি মাসে ৭ দিন ধরে ইন্টারভিউ হয়।
পর্ষদ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে প্যারা টিচারদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার গভীর রাতে প্রকাশিত মেধাতালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং নিয়োগে বেনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগে ছ’টি মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি করে আদালত। এবার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা।
ইতিমধ্যেই অনেকের হাতে নিয়োগপত্র দিয়ে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিয়োগপত্র কী ভাবে ফেরানো সম্ভব? এই প্রশ্নও তুলছে পর্ষদ। প্রাথমিকে টেট দুর্নীতি নিয়ে কম অভিযোগ ওঠেনি রাজ্যে। প্যানেল প্রকাশ, তা বাতিল হওয়া, আদালতে দিনের পর দিন মামলা চলার পর অবশেষে ছাড়পত্র মেলে। গত ২৩ ডিসেম্বর ১৬ হাজার ৫০০ শূন্য পদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সম্প্রতি জেলায় জেলায় সেই নিয়োগও চলছে। কিন্তু তাতেও দুর্নীতি হয়েছে বলে শনিবার অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা হয়েছিল। একাধিক আইনি জটিলতায় সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যে ১৬ হাজার ৫০০ প্রাথমিক শিক্ষক শূন্য পদে নিয়োগ দ্রুত করা হবে। শুধু তাই নয় টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট নেওয়া হবে বলে নবান্ন থেকে ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। গত ৩১ জানুয়ারি টিচার এলিজিবিলিটি টেস্টও নেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, টেটের চাকরি বিক্রি হয়েছিল রাজ্যে। স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তারপর তা নিয়ে মামলা হওয়ায় প্যানেল বাতিল করে দেয় আদালত। শুধু তো তাই নয়, শাসক দলের নেতাদের আত্মীয়স্বজন, এমনিক গাড়ির চালকের ছেলের পর্যন্ত টেটে চাকরি হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এখন দেখার ডিভিশন বেঞ্চ কী করে।