সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই বনাম রাজ্য সরকার যখন দ্বৈরথ চলছে, তখন নাকি শিল্প সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কৌশল নির্ধারনের আলোচনায় সামিল করেছিল নবান্ন। সে যাক। সোমবার আলাপনবাবুর পদোন্নতি হয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব করা হয়েছে তাঁকে। নবান্ন সূত্রে খবর, শিগগির মন্ত্রিসভাতেও রদবদল করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী হতে পারে সেই রদবদলে?
এ ব্যাপারে গোড়াতেই বলে রাখা ভাল যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেন তা আগে থেকে দল ও নবান্নের অনেকেই টের পান না। বিশেষ করে কাকে কোথায় পাঠানো হবে, নতুন মুখ হিসাবে মন্ত্রিসভায় কাদের ঠাঁই হবে তার হদিশ দলের শীর্ষ স্তরে অনেকের কাছেই থাকে না। তবু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যে দু-পাঁচ জনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি, তা কিছু না কিছু চুঁইয়ে বাইরে আসে। এবং সে সব টুকরো খবর থেকে সামগ্রিক ছবির কখনও কখনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সে ভাবেই মন্ত্রিসভায় সম্ভাব্য রদবদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
নবান্ন ও দলীয় সূত্রে খবর, সর্বশেষ রদবদলে যেমন নতুন তিনটি মুখটি আনা হয়েছিল মন্ত্রিসভায়, এ বারও দু একজনের কপালে শিঁকে ছিঁড়তে পারে। যেমন বাঁকুড়ার কোতলপুরের বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা বর্তমানে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতি মন্ত্রী। এ বার লোকসভায় বিষ্ণুপুর থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হেরে গেছেন। তার পর শ্যামলকে বিষ্ণপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংগঠনিক সভাপতি করেছেন মমতা। তাঁকে এ বার মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হতে পারে। পরিবর্তে বাঁকুড়া থেকে নতুন মুখ আনা হতে পারে মন্ত্রিসভায়।
পঞ্চায়েত ও জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ বার বাঁকুড়া লোকসভা থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়েছেন। সুব্রতবাবুর কাছ থেকে পঞ্চায়েত দফতর নিয়ে নিতে পারেন মমতা। পরিবর্তে অন্য কোনও দফতর তাঁকে দেওয়া হতে পারে। সুব্রতবাবুর কাছে এর আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের দায়িত্ব ছিল। সর্বশেষ রদবদলে তা তাঁর কাছ থেকে নিয়ে মলয় ঘটককে দিয়ে দেন মমতা। নবান্নের একটি সূত্রের মতে, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী দফতর ফের সুব্রতবাবুকে ফিরিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মলয় ঘটকের কাছে এখন শ্রম, আইন ও বিচার বিভাগ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের দায়িত্ব রয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁর ভার লাঘব করা হতে পারে। আবার পদোন্নতি হতে পারে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পঞ্চায়েত ভোটের পর রাজীবের ডানা ছেঁটেছিলেন মমতা। সেচ দফতর থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাজীবের সঙ্গে আস্থার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। আবার লোকসভা ভোটে দমদমে ভাল ফল করার পর ইদানীং ব্রাত্য বসুও দিদি-র গুডবুকে রয়েছেন বলে খবর। তা ছাড়া প্ল্যানিং ও পরিসংখ্যান দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতি মন্ত্রী তাপস রায়েরও পদোন্নতি হতে পারে।
নবান্নের অন্য একটি সূত্রের মতে, বড় কোনও চমকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উইকেট বহুদিন ধরেই দুর্বল। শিক্ষা দফতরের কাছে মুখ্যমন্ত্রী যে খুশি নয়, তাও বাস্তব। এমনকি শনিবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকেও এ ব্যাপারে সকলের সামনে উষ্মা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ যাত্রায় তাঁর দফতর বদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে স্বপন দেবনাথ, গৌতম দেব, তপন দাশগুপ্ত- সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর ডানা ছাঁটার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা যে সব মন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন, আবার একই সঙ্গে জেলা সভাপতির পদে বহাল, মন্ত্রিসভায় তাঁদের ভার কমার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।