পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। তার মধ্যেই কাল লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ হবে বাংলার দুটি আসনে,- কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার।
তার চব্বিশ ঘন্টা আগে শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, রাজ্য রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দেশের সকলেরই প্রশ্ন, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে তো!
এ বার লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা বলেছেন, স্পর্শকাতর এলাকায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হবে না। প্রয়োজনে ভিন রাজ্য থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্তাকে বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হবে।
বস্তুত হয়েছেও তাই। বাংলায় শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর জন্য এই প্রথম বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। এবং কমিশন সূত্রে খবর, কাল ভোটের সময় দিনভর কোচবিহারে ক্যাম্প করে থাকবেন বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। সেখান থেকে প্রতি মুহূর্তে খোঁজ নেবেন আলিপুরদুয়ারে ভোটের।
বলে রাখা ভাল, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘন্টা আগে মঙ্গলবার বিবেক দুবের রিপোর্টের ভিত্তিতেই কোচবিহারের পুলিশ সুপার বদল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অভিষেক গুপ্তকে সরিয়ে এমন অফিসারকে পুলিশ সুপার করা হয়েছে, যাঁকে ভোটের পর্যবেক্ষক হিসাবে ভিন রাজ্যে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে দিয়েছিল নবান্ন।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই অসন্তুষ্ট তৃণমূল। তাদের সরাসরি অভিযোগ, বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে কমিশন। বিপরীতে কমিশনের এখনও পর্যন্ত ভূমিকায় খুশি বিরোধীরা।
দুই জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাস্তব হল কোচবিহারে অশান্তির আশঙ্কা বেশি। তুলনায় আলিপুরদুয়ারে সামগ্রিক ভাবে অশান্তির আশঙ্কা কম। কারণ, আলিপুরদুয়ারে বিজেপি সংগঠন পোক্ত। দলের প্রার্থী জন বার্লা আরএসএসের বহুদিনের সংগঠক এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। ফলে অধিকাংশ বুথে তৃণমূলের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার সাংগঠনিক শক্তি সেখানে রয়েছে। কোচবিহারে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ। সেখানে বিজেপি-র প্রার্থী তথা সদ্য তৃণমূলত্যাগী নেতা নিশীথ অধিকারীর প্রচুর অনুগামী রয়েছে ঠিকই, তবে এও ঠিক ক্ষমতাসীন দল হিসাবে তৃণমূলের বুথস্তরে সংগঠনের পরিকাঠামো মজবুত। এই পরিস্থিতিতে আবার বুধবার একটি অডিও টেপ ফাঁস করেছে বিজেপি (যদিও দ্য ওয়াল ওই অডিও টেপের সত্যতা যাচাই করেনি), যাতে শোনা যাচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বুথে বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য কর্মীদের ভোকাল টনিক দিচ্ছেন।
সব মিলিয়ে ভোটের আগে রাতে এখন উত্তেজনার পরিস্থিতি রয়েছে দুই জেলাতেই। কমিশন শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে পারে কিনা এখন তারই পরীক্ষা।