যখন আমরা বাঙালির নববর্ষকে উদযাপন করি, তখন এ প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক এবং এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি জরুরি প্রশ্ন আর অন্য কিছু নয়, যে বঙ্গাব্দের শুরু কোথা থেকে?
বাংলা সন প্রথম কবে কার দ্বারা প্রচলিত হয়েছিল, এ নিয়ে একাধিক মত আছে, তার মধ্যে তিনটি মত উল্লেখযোগ্য। আমি সে তিনটি নিয়ে আলোচনা করব আজ।
সন শব্দের সঙ্গে তিব্বতের বিখ্যাত শাসক স্রং সন গাম্পোর একটা যোগসূত্র নির্দেশ করেছেন সিলভ্যাঁ লেভি, এবং তাঁকে অনুসরণ করে একাধিক বাঙালি গবেষক, যেমন ব্রতীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও পঞ্চানন মণ্ডল, এবং তাঁদের মতে স্রং সন গাম্পোর জন্ম যে বছর হয়েছিল, সে বছর থেকেই তাঁর পিতা স্রং সন, যিনি সাময়িকভাবে পূর্ব ভারতের কিছু অংশ দখল করেছিলেন, নেপাল তো অবশ্যই দখল করেছিলেন বলে প্রমাণ, তিনি পুত্র স্রং সন গাম্পোর জন্মকে স্মরণীয় করে রাখতে এই সন প্রচলন করেন। এ তত্ত্বটি চমকপ্রদ এবং সত্যি হলে বাংলা সনের এই সন শব্দটি সেক্ষেত্রে আরব ভাষা থেকে আসেনি, যেমনটা ভাবা হয়।
বৃহৎ বঙ্গের নানা অংশের সঙ্গে এই সময় তিব্বতের আদান প্রদান ঘটেছে বটে। গাম্পো নিজে এরপর লিচ্ছবিবংশীয় রাজকন্যা বিবাহ করবেন, ভারত থেকে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব তিব্বতে যাবে। গাম্পো তিব্বতি লিপি এবং ধ্রুপদী তিব্বতি ভাষা এবং সেই সঙ্গে তিব্বতের সাম্রাজ্যনির্মাতা ছিলেন। গাম্পোর জন্ম ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে হয়ে থাকতে পারে, যদিও আরও কয়েকটি সালের উল্লেখও পাচ্ছি। মাৎস্যন্যায় যুগে কামরূপ অঞ্চলে গাম্পোর নেতৃত্বে তিব্বতের সামরিক অভিযান ঘটেছিল বলে জানি, ভাস্করবর্মার রাজবংশ এই তিব্বতসম্রাট স্রং সন গাম্পোর আক্রমণেই বিলুপ্ত হয়েছে বলে নীহাররঞ্জন অনুমান করেন। তিব্বতের আক্রমণ পালযুগে কয়েকবার বাংলার বুকে আছড়ে পড়েছে। একজন তিব্বত রাজ তো গঙ্গাসাগর অবধি বিজয়যাত্রা করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে লাদাখের রাজবৃত্তে। এছাড়া অতীশের আগে থেকেই বাংলার বৌদ্ধদের সঙ্গে তিব্বতের যোগাযোগ, এই যোগাযোগ নিয়ে এর আগে লিখেছি। অতএব একটি তিব্বতি অব্দ বাংলায় প্রচলিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পালরা তাদের কোনও ডকুমেন্টে এই বঙ্গাব্দের উল্লেখ করেন নি, তাঁরা প্রত্যেক রাজার রাজত্বকালের হিসেবে বছর গণনা করতেন। সেনযুগে শকাব্দের প্রচলন ছিল, তাদের নথিতে পাই, কিন্তু সেনযুগের নথিতে বঙ্গাব্দ মেনে বছর গণনা আমার চোখে পড়েনি।
সম্রাট শশাঙ্ক। তিনি বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছিলেন, এই মর্মে একটা তত্ত্ব আছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী বঙ্গাব্দ শুরু হয়েছিল ১২ই এপ্রিল, ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দ। অনুষ্টুপের পঞ্জিকা সংখ্যায় দেখছি অতিথি সম্পাদক ৫৯৪ লিখেছেন, কিন্তু সেটা ভুল। ওই পঞ্জিকা সংখ্যাতেই আশিস খাস্তগীর ৫৯৩ লিখেছেন এবং সেটিই ঠিক। ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রকৃতপক্ষে ২য় বঙ্গাব্দ শুরু হবে। তবে আমি একটি হিন্দুত্ববাদী পোস্টে দেখলাম যে ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল সোমবার ছিল, কাজেই সোম অর্থাৎ শশাঙ্ক এইদিন বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গাব্দ প্রচলনের জন্য। আমি নিজে গণনা করে দেখিনি সত্যিই সোমবার ছিল কিনা। কিন্তু ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে যদি সূচনা হয় তাহলে আমাদের এই পয়লা বৈশাখে নতুন বছর ১৪২৭ হবে না, এক বছর কমে গিয়ে ১৪২৬ হবে।
তাই বঙ্গাব্দের প্রথম বছর ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে নিঃসন্দেহে। এই সময়টাকে শশাঙ্কের সিংহাসনারোহণের বছর ধরে নিলে হিসেব মিলে যায়। কিন্তু আগের সমস্যা থাকছে, যেটা স্রং সন গাম্পোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদিও সে সমস্যার একটি পূরণ ঘটতে পারে।
কৌটিল্য বলেছেন, তাঁর সমসাময়িক ভারতে দুটিই দর্শন, সাংখ্য আর লোকায়ত। এর মানে কি বৈদিক দর্শন ছিল না? ছিল, কারণ ঋগবেদ তো অনেক আগেকার। উপনিষদও নিশ্চিত রচনা হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো তখন (অন্তত পূর্বভারতে, মগধসাম্রাজ্যে) মেনস্ট্রিম ছিল না বলে কৌটিল্য উল্লেখ করছেন না। অতএব যদি বঙ্গাব্দ ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দেই প্রচলিত হয়ে গিয়ে থাকে, কিন্তু পাল ও সেনরা তাঁদের নথিতে ব্যবহার না করে থাকেন, তার একটা যুক্তি হতে পারে এটি মেনস্ট্রিম হয়নি তখনও। কেন তখন হয়নি, কেন পরে হল, এগুলো ইতিহাসের ধাঁধা হতে পারে। যারা প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন, তারা এরকম ধাঁধার সঙ্গে সুপরিচিত।
আমি বলতে চাই, ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে শশাঙ্ক (Shashanka) সিংহাসনে বসেছিলেন কিনা, অথবা তাঁর যৌবরাজ্যে অভিষেক ঘটেছিল কিনা (সম্রাট তখন হয়ত জয়নাগ, শশাঙ্ক এই নাগবংশীয় হতে পারে, তিনি একাধিকবার গৌড়ভুজঙ্গ বলে আখ্যা পেয়েছেন শত্রুভাষ্যে এবং তিনি মুদ্রায় “জয়” নামাঙ্কিত করতেন, অনেক সময় শুধু “শ্রী জ” লেখা আছে দেখেছি, এরকম দুটি মুদ্রা এই লেখার সঙ্গে দিলাম), এগুলো কিছুটা অনুমানের বিষয়। শশাঙ্ক মারা গেছিলেন ৬৩৭/৩৮ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তাতে সন্দেহ নেই। কারণ ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হিউয়েন সাং আসবেন বাংলায়, তখন শশাঙ্ক (Shashanka) বিগত হয়েছেন।
এর কয়েক বছর পর ভাস্করবর্মার নিধনপুর শাসন, যেটা কর্ণসুবর্ণ জয়স্কন্ধাবার থেকে দেওয়া হবে। ফলে অতুল প্রতাপান্বিত গৌড়সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। কিন্তু মাৎস্যন্যায় যুগ, পাল যুগ, সেন যুগ – এবং তারপরে বখতিয়ার আগমনের ফলে মধ্যযুগের যে সূচনা, এই সময়গুলোতে বঙ্গাব্দকে কিন্তু মূলধারার বর্ষগণনা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি না। অতএব যদি এই ধারাবাহিকতা থেকে থাকে প্রান্তিকভাবে, থাকতেই পারে, আমি কৌটিল্যের বক্তব্যের তুলনাটা এনেছি সেই জন্যে, সেটা বেশ চমকপ্রদ একটা ব্যাপার।
শশাঙ্কের (Shashanka) সময় প্রচলিত বঙ্গাব্দ এত রাজনৈতিক উত্থান পতনের পর এত শত বছর ধরে কি টিঁকে থাকতে পারে? বিশেষত যখন মাৎস্যন্যায় পাল সেন বখতিয়ার পাঠান মোগল – এতগুলো যুগ কেউই বিশেষ করে শশাঙ্ককে মনে রাখেনি, মনে রাখার সেভাবে প্রয়োজন বোধ করে নি?
আমি এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে আগে একটি আশ্চর্য নিবন্ধের কথা জানাব আপনাদের, যমুনা প্রসাদ মণ্ডলের লেখা, শারদীয় মুর্শিদাবাদ সন্দেশ, ১৪০২ সনে প্রকাশিত, প্রবন্ধের নামটি চমকপ্রদ, “আলেরকোমভীরাবর্ণ”। মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে প্রচলিত একটি উৎসবের উৎস নিয়ে লিখেছেন এই গবেষক। মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের সপ্তমী তিথিতে শিব-চণ্ডীর উপাসনা হয়, এবং এই উৎসবকে স্থানীয়রা ‘মাকরী সপ্তমী’ বলেও অভিহিত করেন, তিনি এই উপলক্ষে গেয় একটি পাঁচালি সম্পূর্ণ উদ্ধৃত করেছেন এবং সেখানের একটি পংক্তি থেকেই নেওয়া ওই প্রবন্ধের শিরোনাম “আলেরকোমভীরাবর্ণ”।
গবেষক মণ্ডল একটি দীর্ঘ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল গণনা করে দেখিয়েছেন যে সময় মাঘ মাসের শুক্ল সপ্তমীর তিথিতে সূর্যের মকর রাশিতে সংক্রমণ ঘটেছিল, সেটা ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ। হিসেবটি অভ্রান্ত বলেই মনে হচ্ছে। এরপর শ্রী মণ্ডল একাম্র পুরাণ নামে একটি গৌণ পুরাণ থেকে উদ্ধৃত করে বলছেন, শশাঙ্ক কর্তৃক সেই সময় তাঁর শাসিত কলিঙ্গ অঞ্চলে ভুবনেশ্বরে লিঙ্গরাজ মন্দিরের উদ্বোধন হয় ও সেই উপলক্ষ্যে এই সময় গৌড়ে, আজকের মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে এই উৎসব শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, মাঘ মাস সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ চলে। কাজেই এই বছরেই পরের দিকটায় হিউয়েন সাং বাংলায় এসে থাকতে পারেন, এবং শশাঙ্কের জীবনাবসান এই ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দেই মাঝামাঝি সময় ঘটে থাকতে পারে।
বক্তব্য হল, শশাঙ্ক প্রবর্তিত একটি শৈব-তান্ত্রিক উৎসব যদি চোদ্দশো বছর ধরে একটানা বাংলার বুকে চলতে পারে, তাঁর প্রবর্তিত অব্দ কি পারে না?
এই প্রসঙ্গ অধিক বিস্তার না করে এইবার আমি তৃতীয় মতটিতে আসব। আকবর বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। আগের দুটির তুলনায় এই মতটিতে আস্থাবান লোকের সংখ্যা বেশি কারণ এটা বাংলাদেশ থেকে মহাসমারোহে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা শুরু হয়েছে, সম্ভবত পাকিস্তান আমল থেকেই এই প্রচার শুরু হয়েছিল। ভারতেও অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) প্রমুখ এই মতের উৎসাহী প্রচারক।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ফতেউল্লাহ সিরাজিকে নির্দেশ দেন, বঙ্গাব্দ চালু করার। হিজরি অব্দ দিয়ে বাংলায় ফসল সংগ্রহের কাজ ব্যাহত হচ্ছিল, সেজন্য এই উদ্যোগ। আকবর সত্যিই ১৫৮৪ সালে তারিখ-ই-ইলাহি বলে একটি নতুন সৌরবর্ষ শুরু করেন।
এই তত্ত্বের সমস্যা অনেক। বস্তুত তিনটি তত্ত্বের মধ্যে এটিই সবথেকে দুর্বল।
এক, আকবরের সমসাময়িক কোনও নথিতে বঙ্গাব্দের প্রচলন নিয়ে একটা কথাও নেই। মুঘলরা এমন নীরবে কাজ করতেন না। যে কাজই করতেন, তার উল্লেখ অবশ্যই থাকত। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থটি আকবর কর্তৃক বঙ্গাব্দ প্রচলনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব। তারিখ-ই-ইলাহি প্রচলিত হয়েছিল, আকবরের সিংহাসনে উপবিষ্ট হওয়ার বছর, মানে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দকে প্রথম বছর ধরে। ঘটনাচক্রে সেটা ছিল হিজরি ৯৬৩ সাল।
কিন্তু, এবং এটা দ্বিতীয় সমস্যা এই তত্ত্বের, এই তারিখ-ই-ইলাহির সঙ্গে ৯৬৩ হিজরিকে ভিত্তিবর্ষ ধরে নেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তারিখ-ই-ইলাহি কিন্তু হিজরি বছর থেকে গণনা করা হয়নি, সেটার প্রথম বছরই ছিল আকবরের সিংহাসনপ্রাপ্তির বছর। অর্থাৎ সেটা কিন্তু প্রথমেই ৯৬৩ দিয়ে শুরু হয়নি। সেক্ষেত্রে যারা তারিখ-ই-ইলাহির সঙ্গে বঙ্গাব্দকে এক করে দেখেছেন, তাদের হোমওয়ার্ক যথেষ্ট দুর্বল বলতে হবে।
এও বলার, আকবর রাজস্ব আদায়ের জন্য যদি শুরু করেন তাঁর সাম্রাজ্যে কোনও নতুন ফসলি সন, সেটা কিন্তু বৈশাখে শুরু হওয়ার কথা নয়, কারণ বৈশাখে কোনও নতুন রাজস্ব আদায় হয় না, কোনও নতুন ফসল ওঠে না।
শেষ এবং সর্ববৃহৎ সমস্যা হল ১৫৮৪ সালে বাংলার অতি অল্প অংশ আকবরের মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। ১৫৭৬ সালে শেষ পাঠান সুলতান, দাউদ কররানীর মৃত্যু ঘটেছে, গৌড়ে আকবরের প্রতিনিধি অতীব অসহায়, এবং গৌড় বঙ্গে তখন বারো ভুঁইয়ার রাজত্ব চলছে। এমতাবস্থায় যে রাজস্ব আকবরের প্রায় কিছু আদায়ই হয় না, সে রাজস্বের জন্য আকবর নতুন অব্দ তৈরি করে ফেলবেন? তপন রায়চৌধুরী বলেছেন যে ১৫৯৪ সালের আগে গৌড়বঙ্গের ওপরে মোগল অধিকারের কোনও স্থায়িত্ব ছিল না। এর দশ বছর আগেই আকবরের নির্দেশে বঙ্গাব্দ তৈরি হওয়ার কথা কাজেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এবং বাংলার প্রায় কোথাও মোগল অধিকার ঠিকমত যখন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এমন সময় নতুন বঙ্গাব্দ আকবর (Akbar) কাউকে না জানিয়ে এমনকি আবুল ফজলকেও (Abul Fazal) না জানিয়ে চুপি চুপি তৈরি করে ফেলবেন ,এবং যেটা তারিখ-ই-ইলাহির ক্ষেত্রেও করেন নি সেটা এক্ষেত্রে করবেন অর্থাৎ হিজরি থেকে বছর গণনা করবেন?
তিনটি তত্ত্বের মধ্যে আকবর তত্ত্বকে বাতিল করা চলে। সন সম্পর্কে প্রথম সিলভ্যাঁ লেভি জানিয়েছিলেন, কাজেই একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে প্রথম দুটি তত্ত্বের মধ্যে শশাঙ্ক/জয়নাগ সম্পর্কে বাঙালির স্বাভাবিক সেন্টিমেন্ট কাজ করে।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, উপমহাদেশে পঞ্জিকা বা বর্ষপঞ্জীর প্রচলন বহু প্রাচীন, সম্ভবত সিন্ধু সরস্বতী সভ্যতার সময় থেকে বর্ষপঞ্জীর প্রচলন। বৈদিক আর্যরাও হিসেব রাখতেন, যদিও ছয় ঋতু ও বারো বাসের হিসেব ছিল না তাঁদের কাছে। ঋগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলে মাত্র তিনটি ঋতুর উল্লেখঃ শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা।। তৈত্তিরীয় সংহিতা দশমাসের বছর ধরেছে, নাম এরকমঃ শুক্র, শুচি, নভস্, নভস্য, ঈষ, উর্জ, সহস্, সহস্য, মধু ও মাধব। যে কোনও উন্নত সভ্যতা বিশেষ করে যেখানে কৃষিকার্যের প্রাবল্য, যেমন বাঙালির সভ্যতা, সেখানে বর্ষপঞ্জি বা অব্দ ছাড়া কাজ চলবে না। এককালে ফাল্গুনী পূর্ণিমা থেকে বর্ষশুরু হত। গুপ্তযুগে দেখা যায় মার্গশীর্ষ বা অগ্রহায়ণ ছিল বছরের প্রথম মাস।
এই পয়লা বৈশাখের সময়টা উত্তর ও দক্ষিণ ভারত জুড়ে আরও অনেক জাতির নববর্ষ শুরু হয় আমরা জানি, বস্তুত হিসেব করলে দেখা যাবে এই বৈশাখী নববর্ষই সম্ভবত ভারতের সিংহভাগ জাতি নববর্ষ হিসেবে পালন করেন আজ। এ কথা সমালোচনার অযোগ্য এবং অতি অশ্রদ্ধেয় যে আকবরের আগে এই পয়লা বৈশাখী নববর্ষ ছিল না।
বরং ভারতের বিভিন্ন স্থানে শৈবমতের প্রাবল্য। বিখ্যাত এবং প্রচণ্ড শক্তিশালী শৈব সম্রাট শশাঙ্কের উদ্যোগে স্থাপিত বঙ্গাব্দ এবং এই পয়লা বৈশাখে নববর্ষ গণনা বাঙালির মধ্যে অন্তর্লীন ফল্গুধারার মত বহুদিন বয়ে চলে অবশেষে মধ্যযুগে এসে প্রবলস্রোতা হয়েছে, এমনটা ভাবা অনৈতিহাসিক নয়।
ঋনস্বীকার: মাৎসন্যায়