প্রতি রাতেই দেবক গ্রাম থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বিকার রয়েছে পুলিস। বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার আটকাতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না

নতুন বছরের শুরুতেই গত ৩ জানুয়ারি নৈহাটি থানার দেবক গ্রামে একটি বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ৮ কিমি জুড়ে এলাকা কেঁপে ওঠে। কম্পনের তীব্রতায় বাড়ির দরজা, জানলার কাচ ভেঙে পড়ে। অনেক বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা যায়। আর বাজি কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান চারজন শ্রমিক। ৬দিন পর জখম থাকা আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

এই দেবক গ্রাম থেকেই গত সপ্তাহে রাতের অন্ধকারে তিনটে গাড়িতে বাজি, বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার হচ্ছিল। রামচন্দ্রপুর গ্রামের কাছে তা আটকে দেয় স্থানীয়রা। পুলিস এসে সেগুলি উদ্ধার করে নৈহাটি থানায় নিয়ে যায়। বাজেয়াপ্ত বাজি, বিস্ফোরক দ্রব্যগুলি গত বৃহস্পতিবার নৈহাটির ছাইঘাটে নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে পরমাণু বোমার মতো বিস্ফোরণ ঘটে। কেঁপে ওঠে নৈহাটি, চুঁচুড়া,ব্যান্ডেলের বিস্তীর্ণ এলাকা। গঙ্গার দু’পাড় মিলিয়ে ৫০০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দেবক গ্রামে এখনও ১৫০টি বাড়িতে বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে। এবং মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য। গ্রামে ঢুকতে পারছে না পুলিস। তল্লাশি চালাতে গেলেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে এলাকা। পুলিস ঢুকতে না পারায় বিস্ফোরক দ্রব্য প্রতি রাতে বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাত ৮টা ৯টার পর ছোট গাড়িতে করে বাইরে চলে যাচ্ছে বিস্ফোরক দ্রব্য। কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না, কারণ পাচারকারীরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিস্ফোরক দ্রব্য পাচারের ঘটনা পুলিস জানে না, এমন নয়। পুলিস নির্বিকার রয়েছে।

পুলিস সূত্রের খবর, পর পর দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দুটিই ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এটা থেকে পরিষ্কার, বাজিতে যে ধরনের বিস্ফোরক বা রাসায়নিক ব্যবহার হয়, তার থেকেও মারাত্মক কিছু বিস্ফোরক ছিল। এক পুলিস কর্তা বলেন, বোমা তৈরির বিস্ফোরকও মিলেছে দেবক গ্রাম থেকে।

রাতের অন্ধকারে বিস্ফোরক পাচার হওয়ার ঘটনায় বিরোধী দল বিজেপি দুষেছে তৃণমূল ও পুলিসকে। বিজেপির বারাকপুর জেলা সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র বলেন, গত সপ্তাহে স্থানীয় লোকেরাই তিনটে গাড়ি আটকে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। প্রতি রাতেই বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার চলছে। আর এসব চলছে পুলিসের মদতেই। তৃণমূল দেবক গ্রামকে দ্বিতীয় খাগড়াগড় বানিয়ে রেখেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ছাড়া দেবক গ্রামকে বারুদমুক্ত করা যাবে না। নৈহাটি পুরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, দেবক গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানা ৫০ বছর ধরে চলে আসছে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর পুলিস তদন্ত করছে। রাজ্য পুলিসের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে। বারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, দেবক গ্রাম থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার হয়ে যাচ্ছে, এমন খবর নেই। তবে নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চলছে এলাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.