বাবার নাম অজয় কুমার মালহোত্রা। মা বাঙালি শিবানী বাগচী। তাঁদের মেয়ের নাম স্মৃতি জুবিন ইরানি।
সেই তিনিই কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী রবিবাসরীয় দুপুরে ডুমুরজলার মাঠ থেকে তৃণমূল কংগ্রেস আর দিদির বিরুদ্ধে যে আক্রমণ শানালেন, তার অধিকাংশটাই বাংলায়। সোজা বাংলায় ভিড়ে ঠাসা মাঠে স্মৃতির হুঙ্কার, “যেখানে দুর্নীতি সেখানে টিএমসি। চাল চুরিতে টিএমসি, ডাল চুরিতে টিএমসি, ত্রিপল চুরিতে টিএমসি। তাই দিদি আপনি জেনে রেখে দিন, এবার টিএমসি যাচ্ছে, আর বিজেপি আসছে।”
একেবারে জীবন বিজ্ঞান খাতায় নেফ্রন আর নিউরোনের পার্থক্য লেখার মতো করে মাঝে দাগ কেটে এক দিকে নরেন্দ্র মোদী সরকার আর অন্য দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কাজকে রেখে তফাত বোঝাতে চাইলেন অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হওয়া স্মৃতি।
কী বললেন?
স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে বললেন, “কোভিডের সময় নরেন্দ্র মোদীর সরকার দেশের মানুষকে পাঁচ কিলো করে চাল আর এক কিলো করে ডাল দিয়েছিল। আর দিদি আপনি কী করলেন? আপনি এখানে লকডাউনে লুঠ করেছিলেন। গোটা দেশে রেশন কার্ডের মাধ্যমে মানুষ চাল, ডাল নিয়েছেন, আর দিদি আপনি এখানে কুপন দিয়েছিলেন। কাকে দিয়েছিলেন? যে তৃণমূল করে তাকে দিয়েছিলেন। ক্ষুধার্ত, গরিব মানুষ যখন বিক্ষোভ দেখাল তখন আপনি পুলিশ পাঠিয়ে তাঁদের উপর লাঠি চার্জ করালেন। কেন দিদি কেন?” এরপর আরও ঝাঁঝালো ভঙ্গিতে স্মৃতি বলেন, “সবাই যখন বলছে চাল চুরি হচ্ছে, ডাল চুরি হচ্ছে তখন আপনি অফিসারদের বদলি করেছেন। কিন্তু দলের নেতাদের শাস্তি দেননি!”
চার লাইন বাংলা তো দু’লাইন হিন্দি। অদ্ভুত মিশেল। ডুমুরজলার গোটা মাঠ তখন উদ্বেল। আর সেই সমাবেশে নিজের বক্তৃতার গোটাটাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে সরব থাকলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী।
অনেকের মতে, স্মৃতির বক্তৃতা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল, কাল থেকে যখনই জেনেছেন তাঁকে বাংলায় আসতে হবে তখন থেকেই হয়তো হোমওয়ার্ক করতে বসে পড়েছিলেন। এমনিতে সর্বভারতীয় রাজনীতিকরা রাজ্য রাজনীতির খুঁটিনাটি নিয়ে খুব একটা কথা বলেন না। স্মৃতি যেন নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে তুললেন। বোঝাতে চাইলেন, বাংলার খবর তিনি রাখেন। জানেন কীহয়েছে, কী হচ্ছে।
ব্যালেন্সশিটে ফেলে বোঝালেন দুই সরকারের পার্থক্য। তাঁর কথায়, “দেশের সরকার যখন পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য বন্দোবস্ত করল তখন দিদি বললেন, না না না না, এটা করোনা এক্সপ্রেস। দিদি আপনার লজ্জা লাগল না রাজ্যের গরিব শ্রমিক, মজুরদের ভাইরাস বলতে?”
এখানেই থামেননি স্মৃতি ইরানি। আমফান নিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি তো অবাক হয়ে গেছি, আমফানের সময় কলকাতায় সাতদিন দশদিন কারেন্ট ছিল না, জল ছিল না। গ্রামীণ এলাকা দু’সপ্তাহ বিদ্যুৎহীন হয়ে ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের সাহায্যের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলায় টাকা পাঠালেন আর দিদি আপনার নেতারা পঞ্চায়েতে সেই টাকা লুঠ করল। যে মহা পাপ আপনি করেছেন তার জবাব দিতে হবে!”
কাটমানি নিয়েও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান স্মৃতি। তিনি বলেন, “দিদি কী বলেছিলেন? এই কাটমানি ফেরত দাও। মানে মেনে নিয়েছিলেন তাঁর নেতার কাটমানি নিয়েছে। আর বাংলায় পিএম কিষান চালু করতে দেননি। কারণ সেখানে তো কাটমানি নেই। এখন সবাই জেনে গেছে, বাংলায় কাটমানি ছাড়া কাজ হয় না।”