জিহাদি ও প্রশাসনের একাংশ: একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ
অবিভক্ত বর্ধমান জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার সৈয়দ মির্জাকে নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে আছে। আইডি বিস্ফোরণ ইনি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলে চালাতে চেয়ে ছিলেন। এন আই এর তদন্তকারী দল আসার আগেই বাজেয়াপ্ত আইইডি দামোদরের পাড়ে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করে ফেলেছিলেন। ঘটনা খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কান্ড।
রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশের তরফে জিহাদিদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন দেওয়ার এমন হাজারো ঘটনায় আমরা প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তবে নদীয়া জেলার নগরউখড়া অঞ্চলের বেদের মাঠের ঘটনা অভিনব। বেদের মাঠ গ্রামে মূলত হিন্দুদের বসবাস। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দুদের পুজো করার কোন মন্দির নেই। দুর্গাপূজা হয় অস্থায়ীভাবে, কিন্তু কোন শিব মন্দির নেই। ইতিমধ্যে গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী সংস্কারের ফলে কিছুটা ঘাসজমি জেগে উঠেছিল। জমিটি মূলত খাস জমি। গ্রামের প্রায় আড়াইশো মানুষ ঠিক করে এই জেগে ওঠা জমিতে একটি মন্দির নির্মাণ করবে। সেইমতো তারা নিজেদের উদ্যোগেই সেখানে একটি অস্থায়ী মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারী শুক্রবার শিবরাত্রি ঠিক আগের দিন অর্থাৎ 20 ফেব্রুয়ারি সেইখানে গ্রামবাসীরা শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে। এই দিন রাতেই গ্রামে ঢোকে হরিণঘাটা থানা। প্রায় ফিল্মি কায়দাতে চলন্ত গাড়ি থেকে একদল সিভিক ভলেন্টিয়ার নেমে তেরে যায় গ্রামবাসীদের দিকে। হতভম্ব গ্রামবাসীরা কিছু বুঝতে না পেরে পালিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় পুলিশি তান্ডব। উর্দিধারী পুলিশ অফিসারদের উপস্থিতিতে অস্থায়ী শিবমন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এলাকা ছাড়ার সময় দুইজন স্থানীয় যুবককে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রশাসনের এহেন আচরণের কোন যথাযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদীয়ার বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু দেবদেবীর মূর্তির উপর জিহাদি আক্রমণ নেমে এসেছে বারেবারে। তবে কি পেছন থেকে জিহাদিদের সমর্থন করার রাস্তা ছেড়ে এইবার প্রশাসনের একটা অংশ সরাসরি জিহাদি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলো? প্রশ্ন উঠছে, প্রশ্ন উঠবে।
পরের দিন অর্থাৎ আজ, একুশে ফেব্রুয়ারি হিন্দু সংহতি ব্যারাকপুর বিভাগের সহযোগিতায় ওই একইস্থানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সেখানে শিবরাত্রি পালন করা হয়। হিন্দু মন্দিরের উপর এমন জেহাদি সুলভ আক্রমণ ফের নেমে এলে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে হিন্দু সংহতি।
আমরা জানি, সরকারী জমিতে এই ধরণের দখলদারি আইনসম্মত নয়। কিন্তু আইন কি শুধু হিন্দুর জন্য? দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে বেআইনী মসজিদ নির্মাণ চলছে, যার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন হয়েছে। এই বেআইনী নির্মাণ নিশ্চই একদিনে হয় নি। পুলিশ কী করছিল? খোদ সল্টলেকে ১২ নম্বর ট্যাঙ্কের উল্টোদিকের এলাকায় সরকারী প্লট দখল করে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বস্তি তৈরি হয়েছে। এই বস্তির মধ্যে মসজিদ তৈরি হয়েছে রীতিমতো ইঁট গেঁথে। এটাকে চ্যালেঞ্জ করেও হাইকোর্টে একটা PIL হয়েছে। কিন্তু থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এটা হল কীভাবে? এই সময়গুলোতে পুলিশ নিষ্ক্রিয় কেন? হিন্দুরা আইন মেনে চলতে চায় বলে যত চোটপাট হিন্দুদের উপরে? এই বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। হয় সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে, না হলে শুধু হিন্দুদের উপরে চোটপাট মেনে নেওয়া হবে না।