দেবী বিপত্তারিণীর পুজো কেন হয়, হাতে লাল সুতো বাঁধার মহিমা কী

আষাঢ় মাসে বাংলার অন্যতম উৎসব বিপত্তারিণী পুজো। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই উৎসব। বিপত্তারিণী পুজোর পরে অনেকেই হাতে লাল ডোরে দুব্বোঘাস বেঁধে তাগা ধারণ করেন। এই সংখ্যাটা একেবারেই কম নয়। আর এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলার সংস্কৃতির অন্তঃস্থলে ঠিক কতটা জায়গা অধিকার করে রয়েছেন এই দেবী।

মনে করা হয় বিপত্তারিণী একান্ত ভাবেই লৌকিক দেবী। তবে পুরাণেও এই দেবীর উল্লখে পাওয়া যায়। ‘দেবীপুরাণ’ থেকে জানা যায়, বিপত্তারিণী বা সঙ্কটতারিণী দেবী দুর্গার ১০৮টি রূপের অন্যতম। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া থেকে দশমী পর্যন্ত এই দেবীর পুজোর বিধান রয়েছে।

বিপত্তারিণী বা সঙ্কটতারিণীর ব্রতে যে কাহিনিটি পাওয়া যায় তাতে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের এক রানির একজন নিম্নবর্ণের সখী ছিলেন। তিনি জাতে মুচি। এই মহিলা গোমাংস খেতেন। এটা কানে যেতেই রানি কৌতূহলী হয়ে তাঁকে গোমাংস দেখাতে বলেন। মহিলা প্রথমে রাজি না হলেও পরে রানির আদেশ মেনে নেন। রাজ অন্তঃপুরে গোমাংস প্রবেশ করার খবর পেয়ে রাজা রেগে রানিকে শাস্তি দিতে চান। রানি গোমাংস তাঁর বস্ত্রের নীচে লুকিয়ে রেখে মা দুর্গাকে স্মরণ করতে শুরু করেন। এ দিকে রাজা রানিকে তল্লাশ করলে, তাঁর বস্ত্র থেকে গোমাংসের বদলে বেরিয়ে আসে একটি লাল জবা। সেই থেকেই বিপত্তারিণীর পুজো প্রচলিত হয়। দুর্গার এই রূপটি সাধারণত বিপদহন্তা হিসেবেই গণ্য।

তন্ত্রেও এই দেবীর উল্লেখ রয়েছে। ‘বিপত্তারিণী কথামৃতম’ বা ‘তারিণ্যুপনিষদ’ নামে এক তন্ত্রগ্রন্থে জনৈক জনার্দন ঠাকুর লিখেছেন, তাঁর মা হরিপ্রিয়া এই দেবীর কৃপা লাভ করেছিলেন। এ ছাড়াও ‘বিপত্তারিণীতন্ত্রম’ নামে আরও একটি পুঁথির খোঁজ পাওয়া যায়। কিন্তু এই গ্রন্থগুলি ঠিক কোন সময়ে রচিত, তা জানা যায় না।

বিপত্তারিণী পুজো মোট চার দিনের। দেবী কোথাও সিংহবাহিনী লক্ষ্মীস্বরূপা, কোথাও চণ্ডী মূর্তির মতো। কোথাও বা দেবী কালিকা রূপেই পূজিতা হন। মহিলারাই মূলত এই ব্রত ধারণ করেন।

দেবী লৌকিক হোন বা বৈদিক, তা নিয়ে অবশ্য ভাবেন না ভক্তরা। রীতি মেনে ব্রত পালন করেন। সকলের মঙ্গলকামনা মিশে থাকে এই ব্রতপালনে। আর তারই অঙ্গ হিসেবে প্রিয়জনদের হাতে বেঁধে দেওয়া হয় বিপদ নাশের লাল তাগা।

অনির্বাণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.