প্রিয়জন আর এলাকাবাসীর চেখের জলে শেষ বিদায় নিলেন মণিপুরে শহিদ জওয়ান শ্যমল দাস। সোমবার বিকেলে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানো হয় দেশের এ বীর সেনানিকে।
সোমবার দুপুরে পানাগড় সেনা ঘাঁটি থেকে শহিদ শ্যামল দাসের নিথর দেহ আনা হয় মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের কীর্তিপুর গ্রামে। একবারের জন্য শ্যামল দাসকে দেখতে সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে ভিড় করেছিলেন স্থানীয় মানুষজন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে শ্যামল সম্প্রতি গ্রামে একটি পাকা বাড়ি করেছিলেন। সেই বাড়িতেই আনা হয় তাঁর কফিনবন্দি দেহ। মরদেহ ঘরে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শ্যামলের স্ত্রী সূপর্ণা ও পরিবারের লোকজন। কফিন খুলে পরিবারের লোকজনকে দেখানো হয় শ্যামলের দেহ। বাবার কফিনবন্দি দেখে স্তম্ভিত শ্যামলবাবুর মেয়ে দিয়া।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর ঘরে ফিরেছে স্বামীর দেহ। মৃত স্বামীর কফিনের উপরে আছড়ে পড়েন স্ত্রী সূপর্ণা। শেষবারের মতো স্বামীর মুখটা ভালোভাবে দেখতে পাননি বলে জানালেন সূপর্ণা। বললেন, মাথার উপরে ছাদ ভেঙে পড়ল। কখনও কোনও অভাব রাখেনি ও। যারা আমার স্বামীর এই অবস্থা করেছে তাদের যেন শাস্তি হয়। ভিড়ের মধ্যে ছেলেকে ভালোভাবে দেখতে পাননি বলে অভিযোগ করলেন শহিদ সেনানি শ্যামল দাসের মা। বললেন, কফিনের ডালা খুলে দিয়েছিল। কিন্তু ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।
মিনিট পনের বাড়িতে মরদেহ রাখার পর তা নিয়ে যাওয়া হয় গান স্যালুট পয়েন্টে। সেখানে ছিলেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে এলাকার রানৈতিক নেতৃবৃন্দ। ছিলেন সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। গ্রামের মানুষের বিশ্বাসই হচ্ছে না মাত্র ৩২ বছরের তরতাজা যবুক শ্যামল আর নেই। তার জন্য শহিদকে একবার দেখার জন্য ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। ধীরে ধীরে মৃতদেহবাহী শকট এসে পৌঁছয় গান স্যালুট পয়েন্টে। এখানেই শ্যামল দাসের দেহ আধঘণ্টার মতো শায়িত রাখা হয়। গান স্যালুটে জানানো হয় শেষ শ্রদ্ধা। গ্রাম জুড়ে একটাই শব্দ, ‘ শ্যামল দাস অমর রহে’ ।
আত্মীয়-সহ পরিবারের লোকজনের সবারই একটাই দাবি, শহিদ শ্যামলের জন্য কিছু প্রতিশ্রুতি দিক সরকার। শ্যামল দাসের মা বলেন, ছেলে তো চলে গেল। এখন বৌমা-নাতনির চলবে কীকরে। ওর কিছু না হলে আমাদের জন্য ও কিছু করতে পারবে না।