শিল্প দফতর তাঁর হাত থেকে চলে যাওয়ার পর নাকি পার্থ চট্টোপাধ্যায় হাউহাউ করে কেঁদেছিলেন মুকুল রায়ের ঘরে গিয়ে। এমনই দাবি করলেন মুকুল রায়ের ছেলে তথা বীজপুরের সাসপেন্ডেড তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়।

শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের মহা সচিব পার্থবাবু ঘোষণা করেন, শুভ্রাংশুকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হচ্ছে। এবং তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই। দলের এই সিদ্ধান্তের পর শুভ্রাংশু এতটুকু আক্ষেপ করেননি। বরং বলেছিলেন, “বাঁচা গেল! এ বার খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নিতে পারব।” সেই সঙ্গে মুচকি হেসে পার্থর কান্নার কথা টানলেন বীজপুরের বিধায়ক। মুকুল-পুত্র বলেন, “সাসপেন্ড যখন করেই দিয়েছে, তখন আর আমার কিছু বলার নেই। তবে আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ছে। তখন মনে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো চলছে। তার কিছু দিন আগে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রীকে শিল্প দফতর থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। তারপর তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে গিয়ে হাউহাউ করে কাঁদছিল। সেই মুখটা খুব মনে পড়ছে।”

তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মানে পার্থবাবু, আর সাধারণ সম্পাদক মানে মুকুল রায়। পার্থবাবুর হাত থেকে শিল্প দফতর নিয়ে তা দেওয়া হয়েছিল অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর হাতে। তাঁকে সাসপেন্ডের পর পার্থর ওই ঘটনার কথাই টেনে আনলেন শুভ্রাংশু। এবং তা টিপ্পনির সুরে।

ভোটের আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, দীনেশ ত্রিবেদীকে সব চেয়ে বেশি লিড দেবেন বীজপুর থেকে। কিন্তু তা হয়নি। হাপুনের বিধানসভায় লিড পেয়েছেন অর্জুন। গতকাল দুপুরেই সাংবাদিক বৈঠক করে শুভ্রাংশু বলেন, “আমার বাবার কাছে আমি হেরে গিয়েছি।” ঘুরিয়ে তোপ দাগতে ছাড়েননি যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। অভিষেক ব্যারাকপুরে ভোট প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছে করলে রোজ লক্ষ লক্ষ মুকুল রায় তৈরি করতে পারেন।” অভিষেকের সেই কথাকেই কটাক্ষ করে মুকুল-পুত্র বলেন, “আমি আমার বাবার জন্য গর্বিত। কেউ কেউ বলেছিল, লক্ষ লক্ষ মুকুল রায় তৈরি করবে। কিন্তু যে লোকটা একা হাতে তৃণমূলকে দাঁড় করিয়েছিল, সেই লোকটা একা হাতে গোটা তৃণমূলটাকে তছনছ করে দিল।”

মুকুলবাবু যখন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড, তখন সংগঠনের সবটা তিনিই দেখতেন। তাঁর কাছেই যেতেন সব নেতারা। তাই ব্লকের নেতা থেকে রাজ্যের নেতা, সবার নাড়িনক্ষত্র জানেন তিনি। পার্থবাবুও হয়তো মুকুলের কাছে দুঃখ শেয়ার করেছিলেন সে সময়। সেই হাঁড়িই হাটের মাঝে ভেঙে দিলেন শুভ্রাংশু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.