বিজেপি বিরোধী ঐক্যে শান দিতে কিছুদিন আগেই মুম্বই গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্ধব-পুত্র আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। এমনকী শরদ পাওয়ারকে পাশে নিয়ে ইউপিএ জোটকেও অস্বীকার করেছেন। সেই দৃশ্য দেখার পর, অনেকেই মনে করছিলেন, তাহলে কি এবার বিরোধী জোটের স্টিয়ারিং কংগ্রেস নয়, বরং মমতার হাতেই থাকছে। কিন্তু সেই সব চিন্তা ভাবনায় আজ একেবারে জল ঢেলে দিয়েছে শিবসেনা। শিবসেনার মুখপত্র সামনায় আজ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনওভাবেই বিরোধী জোট করা যাবে না।
বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে বিজেপির নীল বাড়ি দখলের স্বপ্নকে এককভাবে দুরমুশ করে দিয়েছেন মমতা, তার প্রশংসা করেছে শিবসেনা। এমনকী তৃণমূল সুপ্রিমোকে বাঘিনীর সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু, জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল নিজের জমি দখলের লড়াইয়ে যেভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ে নেমে পড়েছে, তা একেবারেই মেনে নিচ্ছেন না উদ্ধব ঠাকরেরা। বরং পরোক্ষে রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধীদেরই পাশে দাঁড়িয়েছে শিবসেনা। সামনার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে চলা যে, কোনওভাবেই শিবসেনা বরদাস্ত করবে না, তারও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
মমতা মুম্বইয়ে গিয়ে আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী জোট নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। বৈঠক শেষে, আদিত্য ঠাকরের কথাও কোনওরকম আভাসই পাওয়া যায়নি, যে এমন একটি বোমা ফাটাতে চলেছে শিবসেনা। মমতা ইউপিএকে পাশ কাটিয়ে যে বিকল্প জোটের কথা বলেছেন, তাও মেনে নিচ্ছে না শিবসেনা। সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে, বিরোধীদের একজোট রাখতে ইউপিএ-কে দরকার। ইউপিএকে পাশ কাটিয়ে বিকল্প কোনও বিরোধী জোট তৈরি করা হলে, তা আখেড়ে বিজেপিকেই বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলে মনে করছে শিবসেনা।
উদ্ধব-আদিত্যদের মতে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনওরকম জোট করা মানে, তা পরোক্ষভাবে বিজেপিরই হাত শক্ত করবে। ইউপিএ জোটের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে, “নরেন্দ্র মোদীর এনডিএকে প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিরোধীদের অবশ্যই ইউপিএকে দরকার।”
কোনও রাজনৈতিক দলের সরাসরি নাম না করে বলা হয়েছে, “যদি কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট নিয়ে কারও কোনও সমস্যা হয়, তাহলে তাদের উচিত সেই নিয়ে সরাসরি কথা বলা।” এ ক্ষেত্রে কোথাও তৃণমূলের নাম নেওয়া হয়নি ঠিকই, তবে উদ্ধব ঠাকরেদের আঙুল যে কোনদিকে ইঙ্গিত করছে, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে একইসঙ্গে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর মতো কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে ইউপিএর ভবিষ্যৎ গতি প্রকৃতি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট দিক নির্দেশ করা উচিত বলেও মনে করছে শিবসেনা।
এর আগেও বিরোধী জোটের প্রসঙ্গে মমতার থেকে সোনিয়া-রাহুলদের পাশেই দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে শিবসেনাকে। শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ২০২৪ সালে ক্ষমতায় আসবে একটি জোট সরকার এবং তাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে কংগ্রেস। তাঁর কথায়, “কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনও সরকার তৈরি হতে পারে না। দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একেবারে শিকড়ে গেঁথে থাকা একটি দল হল কংগ্রেস। কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দলও কংগ্রেস। অন্যান্যরা আঞ্চলিক দল।”
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী ঐক্য বিষয়টি যেন ক্রমেই আলগা হয়ে আসছে। প্রতিদিন কংগ্রেসকে আক্রমণ শানাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুল গান্ধী অবশ্য বিষয়টি নিয়ে যখনই প্রশ্ন উঠছে, তখনই কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।