#ShivaKaaliKshetraKolkata কালীক্ষেত্র কলকাতার শিবের মন্দিরে মন্দিরে – পর্ব ২

দ্বিতীয় পর্ব

নমঃ শিবায় শান্তায় কারুণাত্রায়

হেতবে নিবেদিতামি চাত্মানং ত্বং গত্বিং পরমেশ্বর॥

তিন কারণের (সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের)হেতু শান্ত শিবকে প্রণাম ।হে পরমেশ্বর তুমিই পরমগতি ।তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করি ।

সুপ্রাচীন ভারতবর্ষের বলি রাজার পুত্রের রাজত্ব বঙ্গ, সেথায় হতো শিবের উপাসনা। সেই বঙ্গ যেখানে  এক সময় সূচিত হয় #নাথ_যোগী যুগ। উত্থান হয় শৈব নাথ সম্প্রদায়ের। এই নাথ যোগের অন্যতম যোগী গুরু ছিলেন #মৎস্যন্দ্রনাথ। যাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন নেপালের রাজা। সেই সময় নেপালে সপ্ত বর্ষ ব্যাপী খরা চলছে। নেপালের রাজা একদা রাত্রে স্বপ্নে দেখলেন যোগীগুরু মৎসেন্দ্রনাথকে একবার যদি  নেপাল রাজ্যে  আনা যায় তাহলে সপ্তবর্ষ ধরে চলা খরা-অনাবৃষ্টি অবসান ঘটবে।

স্বপ্ন দেখার পর গুরুকে আনার জন্য জনৈক বিশ্বস্ত লোককে পাঠানো হল। মৎসেন্দ্রনাথের তখন বয়স হয়েছে। তিনি গৃহত্যাগী যোগী সন্ন্যাসী ।জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন রাজ পরিবারের সন্তান ।তার মা ছিলেন #বাংলার_রানী_ময়নামতী। রানীর নাম অনুসারে কুমিল্লার কাছে রাজধানীর নাম রাখা হয়েছিল ময়নামতী। 


কলকাতা পুরনো শহর। পুরনোর থেকেও তিলোত্তমা কলকাতা অনেক বেশি ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যমন্ডিত। কালীক্ষেত্র কলকাতা, তন্ত্রের কলকাতা যেমন পুরনো কলকাতার অনেক বড় পরিচয় তেমনি পুরনো কলকাতায় শৈবক্ষেত্রও কিছু কম নেই। সেই শিবের মন্দির নিয়েই গত পর্বের কিছু আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে বাকিটুকু করব –
গঙ্গা পারে নিমতলা মহাশ্মশান। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর পূর্বে এই শ্মশানের মাঝেই ছিল এক শিবলিঙ্গ। তখন তাঁর নাম ছিল #রামশরণেশ্বর। ১৮৫০ সালে সেই শিবকে ঘিরেই নির্মিত হল মন্দির। তবে ঐতিহাসিক তথ্যঃ অনুসারে এর পূর্বেই ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা আজবীর সেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। হয়ত সে মন্দির পরে পুনরায় সংস্কার করা হয়। এই মন্দিরের নাম নিয়ে বহু কিংবদন্তি আছে। নিমতলা শ্মশান ঘাট মহা শ্মশান। এখানে নানা লৌকিক, অতিলৌকিক , অলৌকিক , প্রেতযোনি জাত কাহিনীর প্রচলন আছে। যিনি শিব তিনিই মহাকাল, তিনিই ভূতনাথ। প্রাণীকুলের ভূত ভবিষ্যৎ এবং মরনের পরের অংশ তাঁরই অধিকারে। তিনি যেমন দেবরূপে, যোগীরূপে, কৃষক বা জেলে বা বৈদ্যরাজ রূপে লৌকিকে বিরাজিত তেমনি, মাশান রূপে শ্মশানে বিরাজিত। তিনি ত্রিগুনাতীত । তাই সকল ভয় , সকল প্রেত , সকল অতিলৌকিক বিষয় তাঁর পদানত। সেই জন্য তিনি মা ভৈঃ বাণী শুনিয়ে #ভূতনাথ নাম নিয়ে নিমতলা শ্মশানে অধিষ্ঠান করছেন। নিমতলা শশ্মান মন্দিরে শ্বেত শুভ্র শিবলিঙ্গ । এখানে মহাদেব #ভৈঁঁরোবাবা বলেও ডাকা হয়। 


জয় যোগেন্দ্র জায়া মহামায়া, মহিমা অসীম তোমার,
একবার দুর্গা বলে যে ডাকে মা তোমায়,
তুমি করো তায় ভবসিন্ধু পার।

হ্যাঁ, ২৪৪ বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রীট , কলকাতা -১২ , বউবাজার সেন্ট্রাল মেট্রো ক্রসিংয়ের নিকট অবস্থান করছে #ফিরিঙ্গি_কালীবাড়ির মা কালী। তবে, মহাকাল ব্যতীত কোনো মহাকালী অবস্থান করবেন কি করে ? ফিরিঙ্গি কালীমন্দিরের গর্ভগৃহে অবস্থান করছেন মহাদেব। মন্দিরের সঙ্গে পর্তুগিজ খ্রিস্টান থেকে বাঙ্গালী হিন্দু হয়ে ওঠা কবিয়াল এন্টনি ফিরিঙ্গির নাম জড়িয়ে রয়েছে , আর স্মৃতিতে বিজড়িত আছে লুপ্ত হয়ে যাওয়া কবির লড়াই।   ৯০৫ বঙ্গাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। 
শিব তো সয়ম্ভূ । তিনি পৃথিবীর সকল কিছুর মাঝে , সকলের মাঝে অধিষ্ঠান করছেন। তাই তাঁর মন্দির , তাঁর পূজার স্থল যেকোনো স্থান হতে পারে। তার একটি বড় উদাহরণ হল , ২০৫/১ মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডের শিব মন্দির। অমরনাথ , কেদারনাথের দুর্গম যাত্রা পথকেও হারিয়ে দেবে এই মন্দির খুঁজে বের করার পথ। কলকাতার বড়বাজার, তার উপর পোস্তা….চারিদিকে লরি, টেম্পো, ঠেলার দাপটে হারিয়ে গেছে মন্দিরের চারিধার । কেবল মন্দিরের সামনে ঢোকার  জায়গা রয়েছে ।তাতেই বোঝা যায় এটি একটি মন্দির। ভিতরে শিবলিঙ্গ রয়েছে। উনিশ শতকের প্রথমদিকে বিশ্বাস পরিবারে এই মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। প্রাচীন এই মন্দিরের নাম #কালীকিংকর_শিবমন্দির। মন্দিরের অধিকাংশটাই এখন আর দেখা যায় না।


৯ নম্বর মন্ডল স্ট্রিট ,মহর্ষি দেবেন্দ্র রোড থেকে এই রাস্তায় যাওয়া যায় । জোড়াবাগান এলাকার এই অঞ্চলে উনিশ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত হয়েছিল শিব মন্দিরটি। মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন সাধুখাঁ পরিবার ।বিশাল দালান সমেত সেই পুরনো মন্দির এখন আর নেই। বছর ১০- ১২ আগেই সেসব  ভেঙে তৈরি হয়েছে নতুন মন্দির। এই মন্দিরই #জোড়াবাগান_শিবমন্দির নামে পরিচিত । পুরাতন বিগ্রহেই নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের থেকে জানতে পারা যায়।


৩৯ নম্বর হরকুমার স্ট্রীট কলকাতা- ৩৬ , কলকাতার বরানগরের এই মন্দিরটি #জয়_মিত্র_কালীমন্দির নামেই সুপরিচিত । মূল মন্দিরের নাম #কৃপাময়ী_কালীমন্দির । ১৮৪৮ মতান্তরে ১৮৫০ সালে জমিদার জয়রাম মিত্র নির্মাণ করিয়েছিলেন। গঙ্গার ধারে নবরত্ন কালী মন্দিরের দুই ধারে আটচালা স্থাপত্যের শিবমন্দিরও রয়েছে এখানে। প্রতি মন্দিরে পৃথক পৃথক শিবলিঙ্গ রয়েছে। কিংবদন্তি প্রচলিত আছে, রানী রাসমণি যখন দক্ষিণেশ্বরের মন্দির নির্মাণ করেন , তখন এই মন্দির স্থাপত্যের অনুকরণে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরটি গড়ে তোলেন।

ঠিকানা ৫৯ নম্বর বাগবাজার স্ট্রীট। ১৮৩৫ সালে এই শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডঃ প্রসন্নকুমার মিত্র।  এই মন্দির #বাগবাজার_শিবমন্দির নামে বিখ্যাত । মাঝারি আটচালা ধরনের এই মন্দিরটি আকারে ছোট হলেও ইতিহাসের নানা চরিত্র জড়িয়ে রয়েছেন এর সঙ্গে। প্রসন্নকুমার মিত্রের কন্যা , পরবর্তী সময়ে  শ্ৰীরামকৃষ্ণ এবনভ সারদামায়ের শিষ্যা হয়ে , যোগীন মা নামে খ্যাত হয়েছিলেন । তাঁরই আমন্ত্রণে , ১৮৫১ সালের ১৬ ই জানুয়ারি ঠাকুর শ্ৰীরামকৃষ্ণদেব এই মন্দির দর্শন করতে এসেছিলেন। আটচালা ধরনের এই মন্দির নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে।

১৮৫২ সালে কৌতুকরাম বিশ্বাস , ১ নং হরিনাথ দে রোড, কলকাতা ৯ , ঠিকানায়  নির্মাণ করলেন #কৌতুকেশ্বর_শিবমন্দির। ১৯৯৩ সালে এই মন্দির সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ছিল। তখন স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা আবার নতুন করে তৈরি করা হয়। এখন অবশ্য চুড়ো ছাড়া রাস্তা থেকে কিছুই দেখা যায় না।মন্দির চত্বরের মধ্যে লোকের বাস । এখন মন্দিরে মা কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। 


৬৩ নম্বর মানিকতলা মেন রোডে , উনিশ শতকের মধ্যভাগে #রামেশ্বর_শিবমন্দির তৈরি হয়। এই মন্দির কাঁকুড়গাছি অঞ্চলের একটি বিখ্যাত মন্দির। কোনও এক বসাক পরিবার এই মন্দিরতৈরি করেন।ছোট আটচালা ধরনের এই মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছে । নাটমন্দির তৈরি হয়েছে মন্দিরের সামনে । তবে মূল কাঠামোকে অক্ষুন্ন রেখেই রেখেই সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। 


আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড থেকে সুকিয়া স্ট্রিট ধরে এগিয়ে গেলে আর্মহার্স্ট স্ট্রিট ক্রসিংয়ের পরেই রয়েছে #মহেশ্বরঠাকুর_শিবমন্দির। ঠিকানা ৭২ , কৈলাস বোস স্ট্রিট। ১২৯০ বঙ্গাব্দে শ্ৰীমহেশচন্দ্র সেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার ফলকে এই মন্দিরের শিবকে #মহেশ্বরমহেশ বলা হয়েছে। সেই থেকেই এই মন্দিরের নাম মহেশ্বরঠাকুর শিবমন্দির। 


২৫ , বাগমারি রোডে প্রায় দুইশত বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয় #রামেশ্বরনাথ_মহাদেব_মন্দিরটি। সেই সময় বাগমারি অঞ্চলের নাম ছিল #দিহি_পঞ্চান্নগ্রাম। রামকৃষ্ণ মালী এবং স্বর্ণ সিংহ তাঁদের জমিতে আজকের বাগমারি রোডের রামেশ্বরনাথ মহাদেব মন্দিরটি নির্মাণ করান। কোন সালে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল সে ব্যাপারে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে, যে সময় এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল, সে সময় পুকুর ছিল মন্দির সংলগ্ন এলাকায়।  সেই পুকুরের মাটি আর ছোটইঁট দিয়ে এই মন্দির নির্মিত হয় । বর্তমানে স্থানীয় মানুষ কমিটি তৈরি করে মন্দিরটি চালাচ্ছেন।


১৩ নম্বর হরিতকী বাগান লেনে উনিশ শতকের মধ্যভাগে  #শৈলেশ্বর_শিবমন্দির তৈরি করেন যাজ্ঞিক পরিবার। বর্তমানে ভট্টাচার্য্য পরিবার এই মন্দিরের দেখভাল করছেন। কত বছর বয়স এই মন্দিরের? সে প্রশ্নের উত্তরে জানা যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা সাল বা তারিখের কোন তথ্য কারোর কাছে নেই ।তবে অনেকদিন আগে এক সরকারি ইঞ্জিনিয়ার মন্দিরের ইঁট পরীক্ষার সময় বলেছিলেন বাঁকুড়ার টেরাকোটা মন্দিরের সনসাময়িক এই শিব মন্দির । মন্দির এখন শিবলিঙ্গের পাশাপাশি শনি ঠাকুর এবং মা কালী অধিষ্ঠিত রয়েছেন। 


২২ নম্বর শ্যামবাজার স্ট্রিট ঠিকানায় উনিশ শতকের মধ্যভাগে নির্মিত হয় #শ্যামবাজার _শিবমন্দির। ভূপেন বোস এভিনিউ থেকে চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে উঠে দ্বিতীয় নম্বর রাস্তার ডান দিকে একটু গেলেই চোখে পড়বে ছোট আটচালা ধরনের এই মন্দির । শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভট্টাচার্য্য পরিবার । ৫৫/বি শ্যামপুকুর স্ট্রিটে একই সময় ছোট আটচালা ধরনের আরও একটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এই পরিবার।


কুমোরটুলির পিছনদিকে বনমালী সরকার স্ট্রিট। ২/৫ নম্বর বনমালী সরকার স্ট্রিটে আঠারো শতকের এক বিশাল আটচালা শিবমন্দিরের অবস্থান করছে।  যা নির্মাণ করেছিলেন বনমালী সরকার । তাঁর নামেই কুমোরটুলির পিছন দিকের এই রাস্তার নাম বনমালী সরকার স্ট্রিট। তাঁর নির্মিত এই আটচালা মন্দিরটি #বানেশ্বর_শিবমন্দির নামে বিখ্যাত । প্রাচীন মন্দিরের গাত্র টেরাকোটার কাজ দিয়ে সাজানো। তবে , এখন তা কেবল অতীতের ধ্বংসাবশেষ । খুব ভালো করে দেখলে ইঁটের গায়ে টেরাকোটা শিল্পের কিছু নমুনা চোখে পড়বে । এখনো নিয়ম করে মন্দিরে নিত্যপূজা হয় । এলাকার মানুষজন মিলিত প্রচেষ্টায় এখনো মন্দিরটিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে ঠিকই …..তবে অবিলম্বে এর সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।
বলরাম ঘোষ থাকতেন ঢাকায় । পরে খাজাঞ্চির কর্মে যোগদান করে চলে আসেন কলকাতায়। তবে তিনি কার খাজাঞ্চি ছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে।  কিংবদন্তি অনুসারে তিনি মুর্শিদকুলি খাঁর অধীনে কাজ করতেন । আবার অনেকে বলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির খাজাঞ্চি ছিলেন। কলকাতায় আসার পরে বলরাম ঘোষ হাতিবাগান অঞ্চলে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করলেন । তাঁর নামে এই অঞ্চলের রাস্তার নাম দেওয়া হয় । পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র তুলসীরাম আবার ঢাকায় ফিরে গেলেও তুলসীরামের ছেলে ভবানীপ্রসাদ এবং  নাতি হরপ্রসাদ কলকাতায় থেকে যান। হরপ্রসাদ ঘোষ স্বপ্নে মা ভবতারিণীর দেখা পান এবং তাঁর মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা কাজ শুরু করেন।  কিন্তু কিছুদিন পরে তাঁর মৃত্যু হয়।  হরপ্রসাদ এই কর্ম সম্পূর্ণ করতে এগিয়ে আসেন হরপ্রসাদের স্ত্রী দয়াময়ী ঘোষ।  ঢাকায় থাকা হরপ্রসাদের অংশের সম্পত্তি, নিজের গহনা বিক্রি করে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন #ভবতারিণী_মন্দির। মূলত এটি দক্ষিণাকালী মায়ের মন্দির । দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের নবরত্ন স্থাপত্যের আদলে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দির । এর ঠিক দুইপাশে আটচালা ধরনের শিবমন্দির রয়েছে।যার ভিতরে হরেশ্বর এবং মহাপ্রসন্ন নামে দুইটি শিবলিঙ্গ আছে।  এই দুই শিব মন্দির হাতিবাগানের #জোড়া_শিবমন্দির নামে পরিচিত। তিনটি মন্দির  একটি লম্বা বারান্দা দিয়ে যুক্ত আছে। ১২৯৫ বঙ্গাব্দে ৫ ই বৈশাখ পঞ্চমী তিথিতে  এই মন্দির উদ্বোধন হয়েছিল ।হাতিবাগান অঞ্চলে এই মন্দিরের ঠিকানা হল – ২/২/ এ , বলরাম ঘোষ স্ট্রিট। 


৯৬/১/১, মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটে আঠারো শতকের শেষদিকে সেন পরিবারের পক্ষ থেকে নির্মিত হয়েছিল #সেনদের_জোড়ামন্দির । এখানে দুটি শিবমন্দির রয়েছে । তবে বাইরে থেকে একটাই দেখা যায়।  সেন পরিবারের ইতিহাস থেকে জানা যায় সাতকড়ি সেন এই মন্দির তৈরি করেছিলেন । পরবর্তী সময়ে তিনি সেটি ডাঃ যাদবকৃষ্ণ  সেনকে অর্পণ করেন ।  ডাঃ সেন মন্দির সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন । ইঁটের নির্মিত জোড়া আটচালা ধরনের মন্দির এখন রঙ হয়েছে, চারপাশ বাঁধাই হয়েছে ঝুড়ি দিয়ে। তবেমন্দিরের দেওয়াল বেয়ে  গাছের ঝুরি নেমে,মূল মন্দিরকে বেশ কমজোরি করে দিয়েছে।


১৮৮ / ২ রামকৃষ্ণ সমাধি রোডে, কাঁকুড়গাছি সিআইটি রোডের কাছে একটি ছোট্ট আটচালা মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরের নাম #জগদীশ্বর_ও_কনকেশ্বর_শিবমন্দির। এখন অবশ্য সংস্কার হয়ে গ্রানাইট পাথরের ঢাকা পড়েছে। তার সঙ্গে ঢাকা পড়ে গেছে পুরনো আঙ্গিক। সঙ্গে মন্দির এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে চাতাল। মন্দির গাত্রের ফলকে মন্দিরের নির্মাণ কাল লেখা আছে ১২৫৯ বঙ্গাব্দ। মন্দির নির্মাণ করেছিলেন জগন্মোহন বসাক। মা কনকময়ী দাসী এবং বাবা জগদীশ্বরের নাম অনুসারে তিনি জগদীশ্বর এবং কনকেশ্বর শিবমন্দির নির্মাণ করেন তিনি । পরে শিবমন্দিরকে ঘিরে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন মনীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । তাই এই মন্দিরের বর্তমান নাম #শ্ৰী _শ্ৰী_মনোরমা_দক্ষিণাকালী_মন্দির।

অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি বাওয়ালির মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা টালিগঞ্জ রোডে বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন।  ১৮৩৫ সালে উদয়নারায়ন মন্ডল , ৭৮, টালিগঞ্জ রোড ঠিকানায় তৈরি করেছিলেন #বড়_রাসবাড়ি । এখানে বিশাল আটচালা মন্দিরে #রাধামদনমোহন রয়েছেন। আর কি আছে? আছেন ১২ টি শিব মন্দির , যার একটি পঞ্চরত্ন স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত হয়েছে। বাকি শিব মন্দির গুলি আটচালা ধরনের । এর ঠিক পাশেই রয়েছে ৯৩ , টালিগঞ্জ  রোডের মন্দির, যা ছোট রাসবাড়ি বা হরিহর নামে পরিচিত । এখানে নবরত্ন স্থাপত্য ধরনের কৃষ্ণমন্দির বা রাসমন্দির রয়েছে।  তার পাশেই ১০টি আটচালা এবং দুটি পঞ্চরত্ন শিব মন্দির আছে । সবগুলোরই ভগ্ন দশা। ১৮৪৭ সালে প্যারীলাল মন্ডল এবং মণিমোহন মন্ডল এই মন্দিরগুলি নির্মাণ করেন।


শহর ও বর্তমানে বৃহত্তর কলকাতা শহর জুড়ে এখনো বেশ কিছু পুরনো মন্দির আছে। যেগুলি কলকাতার ইতিহাসের সাক্ষী , মহাকালের ন্যায় কলকাতার সময়কে ধারণ করছেন। কিছু মন্দিরের অবস্থা খারাপ। অনেক মন্দির সংস্কার করতে গিয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটার কাজকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে – যেমন সখেরবাজারের সাবর্ন রায়চৌধুরীদের দ্বাদশ শিব মন্দির। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে আশা রইল।

সমাপ্ত
This piece has been authored by Durgesh Nandinee, for a joint initiative by Baarta Today and the Indic Collective.
তথ্যঃ কলকাতার শিবমন্দির : জয়দীপ চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.