দিদি দেখুন: ভোটের আগে রব ওঠে, মাপজোকও হয়, কিন্তু মুজনাইয়ে সেতু পায় না বড়ডোবা

দু’টো পাড় এক হতে চায়। এবং সেতুরও প্রয়োজন আছে। এতদিন ছিল বাঁশের সাঁকো। ভরা বর্ষার মুজনাই নদীর স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সেটিকে। অনেক অভিযোগ-অনুযোগ হলো। কিন্তু মুজনাই নদীর উপর পাকা সেতু আজও তৈরি হল না।

ফালাকাটা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে মুজনাই নদী। শহর থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বে বড়ডোবা গ্রাম। গুয়াবরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে এই গ্রামের জংসংখ্যা হাজার আটেক। সাঁকো ভেঙে পড়ায় ফালাকাটা ও বড়ডোবার মধ্যে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। যাতায়াত বন্ধ স্কুল-কলেজের কয়েকশো পড়ুয়ার, নিত্যযাত্রী-সহ রোজ নদী পারাপারকারি হাজার খানেক বাসিন্দার। চাষিরাও উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা কয়েকটি নৌকা। সেই নৌকা চাপতে গেলেও ভাড়া গুনতে হয়। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, পাকা সেতু যখন নেই, এই পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে নৌকা চেপে নদী পারাপারের কোনও ব্যবস্থা করে না জেলা পরিষদ।

ফালাকাটাও বড়ডোবার মাঝে মুজনাই নদী পার হতে একমাত্র ভরসা ছিল ওই বাঁশের সাঁকো। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রতি বছরই বাঁশের সাঁকো তৈরি হয়। আর বর্ষার বন্যায় জলস্রোতে সেই সেতু ভেঙে পড়ে। অথচ স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, অফিস সব কিছু জন্যই ফালাকাটার উপর নির্ভরশীল বড়ডোবা।

সেতু তৈরির দাবি ওঠে সেই বামফ্রন্টের আমল থেকেই। সেতু নির্মাণ না হলে ভোট বয়কট করা হবে বলে একবার গর্জেও উঠেছিল বড়ডোবা। তবে জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসে সেই আন্দোলন ধামাচাপা পড়ে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিশ্রুতির মধ্যে সেতুর বিষয়টিও বার বার ওঠে। আর মাঝেমধ্যে সেতু তৈরি হবে বলে নদীর পাড়ে কিছু লোকজন মাপজোক করেন। ব্যস, প্রাপ্তি বলতে ওইটুকুই! যদিও ফালাকাটার বিধায়ক অনিল অধিকারী বলেছেন, ‘‘বড়ডোবায় সেতুর প্রস্তাব উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে দেওয়া রয়েছে। অনুমোদন পেলেই মুজনাই নদীর উপর সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে।’’

স্থানীয়দের দাবি, বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়ার পর থেকে স্কুল-কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। ফি দিন নৌকা ভাড়া গুনে নদী পারাপারের সামর্থ্য কারোর নেই। তার উপর হাতে গোনা লৌকায় ভিড়ও হয় প্রচণ্ড। এলাকার বাসিন্দা আশুতোষ দাসের কথায়, ‘‘শহরের পাশে থেকেও এই এলাকায় কোনও উন্নয়ন নেই। কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই সাঁকো ভেঙেছে। প্রতি বছর একই অবস্থা হয় আমাদের।’’

নির্বাচন আসে, আবার চলেও যায়। প্রতি বছর সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি পায় বড়ডোবা। কিন্তু, ইচ্ছাপূরণ হয় না। মুজনাই নদীর উপর সেতু তৈরি হলে ছোট্ট এই গ্রামটির আর্থ-সামাজিক চেহারাই বদলে যাবে। হাসি ফুটবে মলিন মুখগুলোতে। দিদি যদি একবার দেখেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.