দিদি দেখুন: বৃদ্ধার মাথায় ভেঙে পড়ছে ঘর, কোনও যোজনা নেই, কারও বাড়িও নেই পলাশবনে

মাথার উপর ছাদ খসে খসে পড়ছে সেই কবে থেকে। দেওয়ালও তথৈবচ। সরকারি প্রকল্পে একটা মাথা গোঁজার আশ্রয় নিশ্চিত করতে দিনের পর দিন ঘুরেছেন আঙুর রায়। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। এ সপ্তাহের গোড়াতেই ভাঙা টিনের ছাউনি আর ফুটিফাটা হয়ে যাওয়া মাটির ঘর ভেঙে পড়ল তাঁর গায়ের উপরেই। চাপা পড়া দেওয়ালের মাটি সরিয়ে গ্রামবাসীরা কোনওমতে তাঁকে উদ্ধার করে ভর্তি করেন কোতুলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু ভেঙে গিয়েছে পা। একটা চোখের আঘাত গুরুতর। এখন হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন ৭০ পার করা ওই বৃদ্ধা।

ভাঙা ঘর ভেঙে পড়ে আঙুরদেবী জখম হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে ভুগছে কোতুলপুরের মির্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পলাশবন গ্রাম। এ গ্রামে বাস ৩৫ টি পরিবারের। সবারই বাস দারিদ্রসীমার নীচে। মাথার উপর নড়বড়ে ছাদ তাঁদের প্রত্যেকের। কিন্তু সরকারি কোনও আবাস যোজনাতেই বাড়ি জোটেনি তাঁদের। তাই বর্ষার মরসুমে যদি ভেঙে পড়ে, এ ভেবেই চিন্তার মেঘ ঘরে ঘরে।

বুলা রায়, নিতাই রায়, স্বদেশ রায়রা বলছেন, “ভোটের সময় যত প্রতিশ্রুতি। ভোট ফুরোলে এ গ্রামের চৌহদ্দি কেউ মাড়ায় না। একাধিকবার বাড়ি তৈরির জন্য কাগজে লেখাপড়া হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। আমরা ভয়ে থাকি, কখন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ঘর।”

বৃদ্ধা আঙ্গুর রায়ের বৌমা ফুলেশ্বরী রায় সে দিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, “আমরা খুব গরিব। ঘর সারানোর ক্ষমতা নেই। শাশুড়ি মা ভাঙাচোরা ঘরে একাই থাকতেন। সরকারি প্রকল্পে যাতে ওনার একটা ঘর হয় তার জন্য শাসক দলের নেতা থেকে পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস পর্যন্ত অনেক ঘোরাঘুরি হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। ওই দিন রাতে ভাঙা বাড়িতে শুয়ে থাকার সময় দেওয়াল চাপা পড়ে যান তিনি।”

মির্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিকাশ মাঝি অবশ্য দাবি করেন, সরকারি প্রকল্পে চারটি পরিবারের ঘরের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। আঙুর রায়ের ঘর যে ভেঙে পড়েছে অতশত জানেন না তিনি। বললেন, “সরকারি বাড়ি তৈরির প্রকল্পে যদি ওনার নাম থাকে উনি বাড়ি পাবেন, না হলে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে যদি বাড়ি দেওয়া যায়, দেখা হবে।”

বাকিদের কী হবে সেটা অবশ্য জানাতে পারেননি তিনি। তাই মাথার উপর একটুকরো ছাদের জন্য দিদির দিকে তাকিয়ে পলাশবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.