প্রহৃত হলেন শ্রী গণেশ সরদার, পেশায় একটি (মূর্তিপূজা বিরোধী অহিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার) উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরাজী শিক্ষক, আধুনিক ও যুক্তিবাদী, সেকুলার নন, সংসারী মানুষ, আমার ও আপনার মত দেশপ্রেমীক ও ধর্মবিশ্বাসী! (ছবিটা ওনার ফেসবুক প্রফাইল থেকে সংগ্রিহীত।) এটাই কি ওনার অপরাধ?
খুব বড় সেকুলারও নিজের বাড়িতে পূজা-পাঠ করান না এমন দৃষ্টান্ত বিরল। সরস্বতী পূজার আগে গণেশদাও কুল খান না। গোড়াতেই বলে রাখা ভালো যে- গত আট বছর ধরে ওনার বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজা বন্ধ হয়ে গেছে, আর তা উদ্যক্তার অভাবে এমনটা কিন্তু নয়, বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মূর্তিপূজন বিরোধী জনতার ঘৃণ্য নীচ বাধায়। সরস্বতী প্রতিমা ছুঁড়ে ফেলা হয়ে ছিল। এবার নিজের প্রতিষ্ঠানটাতে সরস্বতী পূজা হবে এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। সেটাই কি তার অপরাধ? আর এই অপরাধে প্রহৃত হলেন এক তপশীলি জনজাতি তালিকা ভুক্ত এক ইংরাজী শিক্ষক!
তাও সরস্বতী পূজা করতে চাওয়া ছাত্রদের সমর্থন করার অপরাধে!
গতকাল শুক্রবার সকালে সরস্বতী পূজা করতে চেয়ে রাস্তায় আন্দোলনে বসে ছাত্ররা। দুপুর দুটোর পরে (জুম্মার নামাজের পরেই) অগণিত লোক বিদ্যালয়ে চড়াও হয়! আন্দোলনরত ছাত্রদেরকে মারধর করা হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয় স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িতে। বাদ যায় না বিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষকরাও। গণেশদাদের সন্ধার পরে পুলিশ ও বিশাল RAF বাহিনী গিয়ে উদ্ধার করে আনেন।
এখন প্রশ্ন জাগে আপনি কি বাড়িতে কাঁশার ঘন্টা বাজিয়ে শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে পূজা আচ্চা করছেন? আমিও তো তেমনটাই করি। তাহলে কি আমার সেই অনুষ্ঠানটা কারো কারো কাছে ধার্মিক-সংবিধান বিরোধি? আপনি কি আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরস্বতী পূজার সময় অঞ্জলী দিতে বা আয়োজনে সহায়তা করেন? আমি তো তেমনাই করি! তবে কি আমার আপনার নাম খাতায় লেখা হয়ে থাকছে? আর সেই অনুপাতে মূর্তিপূজকের প্রডাকশন রেট বাড়ানো হচ্ছে? প্রয়োজন মতো ইম্পোর্টও করা হয়ে চলেছে প্রতিবেশি দেশের উচ্চ ফলনশিল হ্যাচারি থেকে?
আজ গণেশ সরদারের পালা। কারন গণেশ প্রতিবাদী মুখ। সমসাময়িক অন্যায় অবিচার কুরীতির বিরুদ্ধে গণেশ সরব। তাইকি আন্দোলন শুরু হতে না হতেই আক্রমণ? আর আমরা সরস্বতীর উপাসকেরা কুলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে জিহ্বার রসনা সম্বরণ করে চলেছি! ও তো…. ভক্ত! চাড্ডি! গোরুরবাচ্চা!.. ওতো মার খাওয়ার জন্নেই জম্মেছে! আমার কি, আমি তো বেশ ভালোই আছি লোপকম্বল মুড়ি দিয়ে! “আপনি বাঁচলে বাপের নাম! বাব্বাঃ!” কিন্তু প্রশ্নটা হল আর কতো দিন?
আফজল প্রেমী টুকড়ে টুকড়ে গ্যাঙের জন্য ভরত বন্ধ হলো, আজ সরস্বতী পূজার জন্য আন্দোলন রত ছাত্র শিক্ষক দের হেনস্থা করা হল আন্দলন হবে কি বন্ধু? এক জনজাতীয় শিক্ষককে হেনস্থা করা হল , আন্দলন হবে কি বন্ধু?
বিস্তারিত সংবাদ নিচে।
স্কুলে বন্ধ হওয়া সরস্বতী পুজো চালুর দাবিকে ঘিরে শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল হাড়োয়া থানার চৌহাটা। দু’টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ১৫টিতে বাড়িতে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ, প্রথমে পুলিস এলে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠত না। তাণ্ডব চালানোর অনেক পরে সন্ধ্যায় পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চৌহাটা আদর্শ বিদ্যাপীঠে গত আট বছর ধরে সরস্বতী পুজো বন্ধ রয়েছে। বিদ্যাপীঠে পুজো চালুর দাবিতে এদিন সকাল ১১টায় স্কুলের সামনে পথ অবরোধে নামে পড়ুয়ারা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোলঘাটা-হাড়োয়া রাস্তা। স্কুল পড়ুয়াদের প্রত্যেকের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, বন্ধ হওয়া বিদ্যাদেবীর পুজো ফের চালু করতে হবে। অবরোধ ঘিরে বিশৃঙ্খলা হতে পারে, এমন খবর পেয়েও পুলিস আসেনি বলে অভিযোগ।
বিকেল তিনটের পর পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। একদল অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। কয়েকজন স্কুল পডুয়াকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। ভয়ে কচিকাঁচার দল পালিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে একদল লোক সশস্ত্র অবস্থায় এসে চৌহাটা গ্রামের দু’টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ১৫টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।
বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সোমনাথ বিশ্বাস বলেন, সরস্বতী পুজো চালুর দাবিতে আমাদের অবরোধ ছিল। একদল এসে ইটপাটকেল ছুঁড়ে অবরোধ তুলে দেয়। এরপর আমাদের বাড়িগুলিতে হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর, আগুন দিয়েছে। পুলিসকে প্রথম থেকে জানানোর পরেও আসেনি। প্রথম থেকে পুলিস এলাকায় থাকলে, এমন ঘটনা ঘটত না। বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক হিমাংশুশেখর মণ্ডল বলেন, একটি ঘটনা ঘটার কারণে আট বছর আগে সরস্বতী পুজো বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে বন্ধই রয়েছে। পড়ুয়ারা আমাকে জানিয়েছে, পুজো চালুর জন্য। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা যা নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।