যদি এক কথায় জানতে চাওয়া হয়— এবার লোকসভা ভোটের মূল প্রাপ্তি কী কী?
উত্তর খুব স্পষ্ট।
(ক) আঞ্চলিক রাজনীতি খতম। সংকীর্ণ মনোভাবাপন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির ওপর মানুষ বিশ্বাস হারিয়েছে।
(খ) বামপন্থার জামানত জব্দ। প্রায়। গোটা দেশেই বামপন্থীরা এখন ফকির।
(গ) কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির মেকি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কফিনে দেরিতে হলেও মানুষ শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়েছে।
(ঘ) মানুষ বিশ্বাস রেখেছে জাতীয়তাবাদ ও বোধের ওপর।
(ঙ) হিন্দুত্বই আসল ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষ এই তত্ত্বের সপক্ষে রায় দিয়েছে।
(চ) নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর মতো লৌহসম ব্যক্তিত্ব ও প্রশাসকের ওপর ভরসা রেখেছে মানুষ। ভরসা রেখেছে তার সংস্কার পন্থায়।
(ছ) ভরসা রেখেছে অমিত শাহর মতো দলীয় সংগঠকের ওপর যিনি সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে গোটা দেশের অশুভ রাজনৈতিক শিবিরগুলিকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পেরেছেন।
জাতীয় স্তরে যখন মূল প্রাপ্তি এগুলিই, তখনই একবার বুঝে নেওয়া যাক রাজ্যস্তরে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ফলাফল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কোন কোন গুরত্বপূর্ণ প্রাপ্তিগুলি। জাতীয় স্তরে প্রাপ্তিগুলি এ রাজ্যেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে তৃণমূলি তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিসদৃশ এবং অনভিপ্রেত নির্লজ্জ জনবিরোধী রাজনীতি যুক্ত করেছে আরও কয়েকটি প্রাপ্তিকে। যেমন :
(ক) রাজ্যকে বিরোধীশূন্য করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানকে মানুষ নস্যাৎ করে বিরোধীপক্ষেই সায় দিয়েছে বেশিমাত্রায়।
(খ) পাহাড়ে ও জঙ্গলমহলে তোষণ এবং হিন্দুত্বের বিরোধিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মানুষ।
(ঘ) মুসলমান তোষণ হয়েছে ইমাম ভাতা আর বৃত্তি দিয়ে। কিন্তু মুসলমানদের মূল উন্নয়ন কিছু হয়নি তা বুঝেছে মুসলমান জনগোষ্ঠীই।
(ঙ) তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারিবারিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে মানুষ।
(চ) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেন তেন প্রকারেণ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নির্লজ্জ প্রচেষ্টায় চিরতরে জল ঢেলে দিয়েছে জনতার রায়।
(ছ) প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্লজ্জ এবং অসাংবিধানিক ভাষা উগরে দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা এবারের ভোটের ফলাফলে প্রমাণিত।
(জ) মুকুলবিহীন তৃণমূল কংগ্রেস জিরো, প্রমাণিত তাও।
গোটা ভারতবর্ষে যখন ৫৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ৩০৫টি আসনে বিপুল জয় পেয়েছে, যখন কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল সংখ্যার বিচারে নেমে এসেছে ৪৯-এ, যখন কংগ্রেস তার শরিকদলগুলি সহ জয়ী হতে পেয়েছে কোনোরকমে মাত্র ৮৫ আসনে, যখন সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ হাজারো চুনোপুঁটি মিলেও ১০৫-এর বেশি আসনে জয়ের পতাকা তুলতে পারেনি, তখন পশ্চিমবঙ্গের ফলাফলটা কেমন? একবার দেখে নেওয়া যাক।
মোট আসন : ৪২
তৃণমূল কংগ্রেস গোটা দেশ জুড়ে আওয়াজ তুলেছিল—এবার ভোটে ৪২-এ ৪২টিই পাবে তৃণমূল। পেয়েছে ২২।
বিজেপির লক্ষ্য ছিল ২২টি আসন। প্রাপ্তি ১৮।
বামপন্থীদের একজন প্রার্থী ছাড়া জামানত জব্দ হয়েছে সব প্রার্থীর। পরাজিত সকলেই।
কংগ্রেসের প্রাপ্তি দুটি আসন। কিন্তু ফলাফলটা এখানেই শেষ নয়। ২০১৪ সালের ভোটের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা না করলে অস্পষ্ট থেকে যাবে যে গেরুয়া ঝড় এবার কতখানি তীব্র ছিল।
২০১৪-য় পশ্চিমবঙ্গে ঘাসফুলের ঝড়কে নিষ্প্রভ করতে পারেনি মোদীঝড়। সেবার তৃণমূল পেয়েছিল ৩৪টি আসন। প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৯.০৫ শতাংশ। বামফ্রন্ট অর্থাৎ লালশিবির পেয়েছিল ২টি আসন। ভোটপ্রপ্তির হার ছিল ২৯.৭১ শতাংশ। বিজেপিও জিতেছিল ২টি আসনে। ভোট প্রাপ্তির হার ১৭.০২ শতাংশ। অন্যদিকে মাত্র ৯.৫৮ শতাংশ ভোট পেয়ে কংগ্রেস কিন্তু ৪টি আসনে জয় পেয়েছিল। মাঝে ২০১৬ সালে হলো রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। সেবারও তৃণমূলের জয়জয়কার। প্রাপ্ত আসন ২১৩। প্রাপ্ত ভোট একলাফে পৌঁছে গিয়েছিল ৪৫ শতাংশে। বিষাদ নেমেছিল গেরুয়া শিবিরে। তার ভোটপ্রাপ্তির হার ২০১৪-র ১৭.০২ শতাংশ থেকে কমে এসে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশে।
ফিনিক্স পাখির মতো ডানা মেলে ওড়ার, পুনর্জাগরণের মূল ইন্ধন ছিল এই পরাজয়। সেটা স্পষ্ট এবারের ফলাফলে। এবার তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৬-র তুলনায় ২ শতাংশ কম। আর বিজেপির প্রাপ্তি ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৬-র তুলনায় বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ। শুধু তাই নয়, এবার লোকসভা ভোটের সঙ্গেই ৮টি বিধানসভার উপনির্বাচনও হয়েছে। তৃণমূল জিতেছে ইসলামপুর, নওদা, উলুবেড়িয়া এবং কান্দি আসনে। প্রাপ্ত ভোট ৩৭.০৪ শতাংশ। বিজেপি জিতেছে। দার্জিলিং, হবিবপুর, কৃষ্ণগঞ্জ ও ভাটপাড়ায়। প্রাপ্ত ভোটের হার তৃণমূলের থেকে সাড়ে । তিন শতাংশ বেশি— ৪০.৫০ শতাংশ।
তৃণমূল সুপ্রিমো এবার ডাক দিয়েছিলেন কর্পোরেশন, পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিতে দায়িত্বশীল পদাধিকারীদের সকলকে ভোটে লিড দিতে হবে তৃণমূলের সপক্ষে। যেখানে যত বেশি ভোট সেখানে তত বেশি টাকা দেওয়া হবে পুরস্কার হিসেবে। ফলাফলটা কী হলো দেখে নেওয়া যাক।
কলকাতা পুরসভা ৬৫টি ওয়ার্ডে তৃণমূল হেরেছে যাচ্ছেতাই ভাবে। এর মধ্যে আছে রাসবিহারী, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুর। বিধাননগর পুরসভার বেশিরভাগ আসন তৃণমূলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে। বারাসাত পুরসভার ২৮টি ওয়ার্ডে ভয়ংকরভাবে পিছিয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র ভৎসনা এবং অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সংকটের মুখে রাজ্যের ১৬ জন মন্ত্রী। এঁদের মধ্যে রয়েছেন হঠাৎ করে ফকির থেকে রাজা হয়ে যাওয়া (বৃদ্ধবয়সে প্রথম মন্ত্রী হওয়া) শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গের মস্তান দি গ্রেট মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, নিষ্কর্মা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব, হুগলির কোণঠাসা নেতা তপন দাশগুপ্ত, রক্তচক্ষু বুলি সম্বল যার সেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, হাওড়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং ছাপ্পা ভোটে সিদ্ধহস্ত লক্ষ্মীরতন শুক্লা, একদা বামপন্থী দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, বাচ্চু হাঁসদা প্রমুখ। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যিনি ব্যারাকপুর ও বনগাঁ আসনে বিজেপিমিলিয়ে যাবে বলে আস্ফালন করেছিলেন, তাঁর নিজস্ব নির্বাচনী ক্ষেত্র হাবড়াতেই বিজেপি ২০ হাজার ভোটে লিড পেয়েছে। সুজিত বসুর জেতা বিধানসভা কেন্দ্র বিধাননগরেও বিজেপি এগিয়ে ১৯ হাজার ভোটে। হাওড়ায় বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত পরাজিত হলেও লক্ষণীয় বিষয় হলো ২০১৪-র তুলনায় বিজেপি এবার দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছে। ২০১৪ বিজেপি হাওড়া সদর কেন্দ্রে ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার বিজেপি পেয়েছে ৪১ শতাংশ। হাওড়ার মুসলমান ভোট তৃণমূল ধরে রেখেছে বলেই রন্তিদেব সেনগুপ্তর পরাজয় হয়েছে।
দমদমে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য এবার সাড়ে চার লক্ষ ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় জিতেছেন মাত্র ৫৩ হাজার ভোটে। তারপর নিজেই চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করেছেন বিজেপি আমার কেন্দ্রে এত ভোট পেয়েছে দেখে আমি বিস্মিত।
বিস্ময় ব্যারাকপুরেও। আমডাঙ্গা ছাড়া সর্বত্র বিজেপি সামান্য ভোট হলেও এগিয়ে। নৈহাটিতে ২০০০ ভোটে, বীজপুরে (এখানকার বিধায়ক মুকুল রায় পুত্র শুভ্রাংশু রায়) ৭৫০০ হাজার ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। জগদ্দলেও তৃণমূলের হাল বেশ শোচনীয়।
হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে — এবার লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে ২৯৪টা বিধানসভা কেন্দ্রের ১২৯টিতেই বিজেপি জয়ী হয়েছে। তৃণমূল দখলে রাখতে পেরেছে ১৫৮টি।
প্রশ্ন হলো : এই ফলাফলের জন্য দায়ী কোন কোন ফ্যাক্টর?
মোদী/বিজেপি ফ্যাক্টর
মোদীর ক্যারিশমা, দেশজুড়ে গেরুয়া ঝড় তোলা, এ রাজ্যে ১৮টি ভিড়েঠাসা জনসভা করা, মমতার তীব্র মোদী বিরোধিতার যুক্তিপূর্ণ এবং যোগ্য জবাব দেওয়া, বিরোধীদের অনৈতিক জোটের মুখোশ খুলে দেওয়া, মোদীর অর্থনৈতিক সংস্কারের সুফলের সংবাদ মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার হওয়া এবং রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গদান বিজেপির জয়কে সুনিশ্চিত করেছে।
মমতা/তৃণমূল ফ্যাক্টর
মমতার রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, নিজের স্ট্রিট ফাইটার ইমেজকে ত্যাগ না করতে পারার ব্যর্থতা, এত বছর পরেও তৃণমূল দলটিকে জাতীয় স্তরে উন্নীত করতে না পারার ব্যর্থতা, তাঁর অযৌক্তিক দাবি দাওয়া ও অকারণ কেন্দ্র তথা মোদী বিরোধিতা, বস্তির ভাষায় কথা বলা, ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতির সব বাঁধ ভেঙে মিথ্যাচারকে সঙ্গী। করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য জিভের লালা ফেলা, মাওবাদীদের সাহায্যে ক্ষমতায় । এসে মাওবাদীদের খুন করা এবং যে কোনো মানুষকে মাওবাদী বলে জেলে পোরা, এমনকী নিজের দলীয় মন্ত্রী থেকে সাধারণ কর্মী, মুখ্যসচিব থেকে সামান্য পুলিশ কনস্টেবল সবাইকে ব্যক্তিগত ভৃত্যে পরিণত করার মানসিকতা— এ সবই খুব বড়ো মাপের অনুসঙ্গ হিসেবে গোটা দলটাকেই পাঠিয়ে দিয়েছে ভাগাড়ে।
তার ওপর তীব্রভাবে কাজ করেছে দলের অভ্যন্তরে সিন্ডিকেট রাজ নিয়ে দ্বন্দ্ব, আদি তৃণমূল এবং নব্য তৃণমূলের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব, পরিবারতন্ত্রে মমতার স্পষ্ট সায়। এবং নিজের ভাইপোকে তুলে আনার জন্য দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের পদে পদে অপমান করা, মুকুল রায়ের মতো সংগঠন বোদ্ধা নেতাকে অপমান করে দল থেকে তাড়ানো, মুসলমান তোষণ, ক্লাব এবং পুজো কমিটিগুলিকে কোটি কোটি টাকা বিতরণ করা নিয়ে দলের মধ্যে তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্বও দলকে অস্তিত্বহীন করে তোলার পথে এগিয়ে দিয়েছে অনেকটাই।
এবার কী হবে?
সৌগত রায় জিতেও বিস্মিত। আর বাকিরা যারা শিকার হলেন লিড না পেলে সিট নয় তত্ত্বের অর্থাৎ ২০২১-এ আর টিকিট পাবেন না তারা। এবার তারা কী করবেন? মোদীজী তো প্রকাশ্য জনসভাতেই ফাস করে দিয়েছেন, তৃণমূলের ৪০ জন নেতা-মন্ত্রী বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। ভোটের ফল প্রকাশের পরই মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন শতাধিক বিধায়ক ও সাংসদ। সুব্রতমুখোপাধ্যায়ের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদও বুঝতে পারছেন, তাঁকে কলকাতা ছেড়ে বাঁকুড়ায় পাঠানো হয়েছিল হারানোর জন্যই। বহু নেতাই বুঝে গেছেন, নুসরত জাহান, মিমি চক্রবর্তী, মুনমুন সেন, দেবের মতো প্রার্থীদের দিয়েই সস্তায় বাজিমাত করাটাই মমতার উদ্দেশ্য। সৎ এবং স্বধর্মোচিত রাজনীতি করার কোনও সদিচ্ছাই তার নেই। অতএব ফল যা হবে তা স্পষ্ট। হয়তো ২০২১-এর অনেক আগেই তৃণমূল কংগ্রেস নামক রাজনৈতিক দলটিকে ঘাসের মতোই পদদলিত করে দলের লক্ষ্মণরেখা পার করবেন শত শত বিধায়ক, সাংসদ, কর্মীবাহিনী। কারণ এবার গেরুয়া টর্নেডো গোটা ভারতবর্ষে। পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম হয়ে থাকবেনা। থাকতে পারে না। অপেক্ষা হাতে গোনা কয়েকটা মাসের মাত্র।
সনাতন রায়
2019-05-31