আপনি হয়তো থাকেন বীরভূমের নানুরে, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আপনারই কোনও নিকটাত্মীয়। দ্রুত তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা মনস্থ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে সেখানে আর পৌঁছোনোই হল না আপনার। তার আগেই তালেগোলে, গল্পকথায় বদলে গেছে আপনার ডেস্টিনি। গোলাপ বাগ দিয়ে শহরে ঢুকেই রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ছুটলো খোসবাগানের ডাক্তারপাড়ায়। পকেটে পয়সা থাক আর নাই থাক, অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়িয়ে পড়ল কোনও পরিচিত বা আধা পরিচিত নার্সিং হোমের সামনে।
কোনও ক্ষেত্রে আপনি প্রভাবিত হলেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকের আশঙ্কা বা আশ্বাসে, কখনও বা আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো আর কারও মিষ্টি কথায়। কিছুক্ষণের জন্য তো আপনি সম্মোহিত। ততক্ষণে দালালচক্রের কাজ শেষ। লাভের গুড় বাটোয়ারার পালা। এ ছবি খুবই পরিচিত তামাম মুর্শিদাবাদ, বীরভূমে। এবং পুরোটাই যে চলে খুব গোপনে, এমনটা মোটেও নয়।
এখন কিন্তু উলট পুরাণ। কথায় ভুলিয়ে বা জোর করে কাউকে আনতে হচ্ছে না। এমনিতেই রোগীর ঢল সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে খোসবাগান। ডাক্তার পাড়ার প্রতিটি নার্সিংহোম, ডাক্তারের চেম্বারে গিজগিজ করছে রোগীদের ভিড়। কেউ এসেছেন বীরভূমের নানুর, রামপুরহাট বা পারুই থেকে। কেউ মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, বেলডাঙা বা হরিহরপাড়া থেকে। কেউ আবার এসেছেন হুগলির আরামবাগ বা গোঘাট থেকে। তাঁদের সবারই যে পটেকে পয়সা রয়েছে এমন নয়। বেশিরভাগই গিয়েছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ বা অন্য কোনও সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে পরিষেবা শিকেয়। চলছে ধর্না-স্লোগান। তাই বাধ্য হয়ে রোগ সারাতে ছুটে আসতে হয়েছে এখানে। তাই ডাক্তারপাড়ার নাসিংহোম, ল্যাব সর্বত্রই থিকথিক করছে রোগী আর তাদের স্বজনদের ভিড়।
বেসরকারি বিভিন্ন নার্সিংহোম ও ল্যাবের মালিকরা জানান, তিন দিন হল প্রচুর চাপ বেড়েছে তাঁদের। চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের তো আর ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই চিকিৎসা পরিষেবা চালু রেখেছেন তাঁরা। একই কথা জানান বেসরকারি ল্যাব ও ক্লিনিক মালিকরাও। নানা শারীরিক পরীক্ষার জন্য আসা রোগীদের ভিড়ে তাদেরও নাভিশ্বাস। তাঁরা এও জানালেন, অনেকের কাছেই টাকা নেই। সাধ্য মতো তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করছেন তাঁরা।
তবে এটা তেমনই সুযোগ, যখন মোটা টাকা আয়ের সঙ্গেই সমাজসেবার গৌরবটুকুও চেটেপুটে নিচ্ছে ঘোষবাগানের ডাক্তারপাড়া।