বিমানবন্দরে সোনা-কাণ্ডে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় (নারুলা)কে শুল্ক দফতরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে রুজিরার আবেদন খারিজ করে উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা জানিয়ে দিলেন ৮ এপ্রিল শুল্ক দফতরের জয়েন্ট কমিশনারের দফতরে হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। তবে এখন তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে না শুল্ক দফতর। গ্রেফতারও করতে পারবে না তারা।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ রাতে কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটেছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা ব্যাঙ্কক থেকে ফেরার সময়ে তাঁর ব্যাগ পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন শুল্ক দফতরের কর্তারা। তা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। শুল্ক দফতরের কর্তাদের অভিযোগ, রুজিরা তাঁর স্বামী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন। তার পরে রাজ্য পুলিশের বিশাল বাহিনী এসে শুল্ক দফতরের কাজে বাধা দেয়। বিষয়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টেও জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই ঘটনার সূত্রেই ২৬ মার্চ অভিষেকের স্ত্রী-কে সমন পাঠিয়েছিল শুল্ক দফতর। তাঁকে ৮ এপ্রিলের মধ্যে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু শুল্ক দফতরের ওই সমনকে চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক-পত্নী মামলা দায়ের করেন হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার ওই মামলারই শুনানির পর রুজিরার আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট। আদালত নির্দেশ দেয়, রুজিরাকে শুল্ক দফতরে হাজিরা দিতেই হবে। সেই সঙ্গে দু সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করে শুল্ক দফতরকে হাইকোর্টে তাদের অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়আশয় জানাতে হবে। ওই হলফনামা পেশ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এভিডেভিট জমা দিতে হবে রুজিরাকে। তার চার সপ্তাহ পরে মামলার ফের শুনানি হবে।
প্রসঙ্গত, শুল্ক দফতরের বক্তব্য, রুজিরা এক জন থাই নাগরিক। ১৫ ও ১৬ মার্চের মাঝের রাতে তিনি ব্যাঙ্কক থেকে থাই এয়ারওয়েজের বিমান কলকাতায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গে অন্য এক জন মহিলা ছিলেন। এবং দু’জনের কাছে মোট সাতটি ব্যাগ ছিল। গ্রিন চ্যানেল দিয়ে যাওয়ার সময় শুল্ক দফতরের কর্তারা তাঁদের দু’টি ব্যাগ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় স্ক্যান করতে চান। কিন্তু তাতে বাধা দেন রুজিরা। শুধু তা নয়, বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে শুল্ক দফতরের কাজে বাধা দেয়। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এ কথা সুপ্রিম কোর্টকেও সম্প্রতি জানিয়েছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ৮ এপ্রিল যখন রুজিরা শুল্ক দফতরে হাজিরা দেবেন, তখন এ ব্যাপারে শুনানি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টেও।
এ দিকে বিমানবন্দর বিতর্কের মধ্যেই অভিষেকের স্ত্রী-কে নিয়ে নতুন বিতর্ক দানা পাকতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি নোটিস ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, থাই নাগরিক হিসাবে রুজিরা ওসিআই কার্ড পাওয়ার জন্য এবং ভারতে প্যান কার্ডে আবেদন করার সময় ব্যক্তিগত তথ্যে গরমিল করেছেন। তাঁর বাবার নাম একেক আবেদনপত্রে একেক রকম লেখা রয়েছে। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টিপ্পনিও করেছেন মুকুল রায়।
ভোটের আগে এ ঘটনায় অভিষেক তথা তৃণমূল যে এতে প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে সন্দেহ নেই। তবে গোটা পর্ব থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আগেই জানিয়েছেন, “আমাকে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, আমি কিছু জানি না।”