লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ককে দলে নেওয়া নিয়ে বিজেপিতে ক্ষোভ চলছেই। এর সঙ্গে যুক্ত হল আরএসএস-এর আপত্তি। জেলা ও রাজ্য স্তরে আলোচনা না করে যাতে তৃণমূলের কোনও নেতাকে বিজেপিতে না নেওয়া হয় তার জন্য ইতিমধ্যেই সঙ্ঘের পক্ষ থেকে বিজেপির উপরে চাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি। এর আগেও কয়েকজন তৃণমূল নেতার যোগদান নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিল রাজ্য আরএসএস। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এবার তাই সঙ্ঘ চাইছে সর্বভারতীয় স্তরে চাপ তৈরি করতে।
এর আগে যাঁদের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে সঙ্ঘের আপত্তি ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। কিন্তু মনিরুল ইসলামকে অপছন্দের পিছনে অনেক কারণ। ইতিমধ্যেই সেই অপছন্দগুলি প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন অনেক নেতা। এমনকী বীরভূম জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ কালোসোনা মণ্ডল বলেছেন “এই মনিরুল ইসলামই একদিন বলেছিলেন হিন্দুদের তিনি পায়ে দলে মেরে দেবেন। তিনি একজন ক্রিমিনাল, তিনি ২০জন আদিবাসীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন, আমাদের কর্মীদের মারধর করেছেন। তাই এনাকে আমরা কোনও ভাবেই দলে জায়গা দেব না। তার জন্য যতদূর যেতে হয় ততদূর যাব। দল হয়তো দিল্লিতে নিয়েছে কিন্তু বীরভূম ওঁকে নেব না। একঘরে করে রেখে দেব। ওঁকে কোনওভাবেই আমরা মানব না, মনিরুল চলবে না।”
বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার ক্ষেত্রে অনুব্রত মণ্ডলের পাশাপাশি মনিরুল ইসলামও বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের বড় ইস্যু হয় নির্বাচনের সময়ে। বিজেপির স্লোগানই ছিল, ‘মমতার দু’টি দুল, আরাবুল আর মনিরুল।’ বীরভূমে হিন্দু-বিরোধী নেতা হিসেবে মনিরুলের পরিচয় তুলে ধরে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার। সেই মনিরুল ইসলাম এখন বিজেপিতে এসে যাওয়ায় সাংগঠনিক ক্ষেত্রে বিজেপির সমস্যা হবে বলেই মন্তব্য করেছেন কালোসোনা মণ্ডল। আর এক সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত প্রকাশ্যে দলের বিরোধিতা শুরু করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “অনুপম হাজরার হাত ধরে মনিরুল ইসলাম প্রবেশ করলেন বিজেপিতে। এতে বিজেপির কতখানি লাভ হল বা হবে তা আমি জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, মনিরুলদের তাণ্ডবের প্রতিবাদেই ওই জেলার মানুষরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। এখন বিজেপি সম্পর্কে তাদের কী ধারণা হবে?”
শুধু বিজেপির অন্দরেই নয়, সাধারণ সমর্থকদের মধ্যেও মনিরুল ইসলাম নিয়ে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, লোকসভা নির্বাচনে দুরন্ত ফলের পরে বিজেপির যে হাওয়া তৈরি হয়েছিল তা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে মনিরুল ইসলামের যোগদানের ফলে। এই প্রসঙ্গে সঙ্ঘের রাজ্য স্তরের এক কর্তা বলেন, “বীরভূম জেলায় সঙ্ঘের সাধারণ স্বয়ংসেবকরাও মনিরুলের বিজেপিতে যোগদান মানতে পারছেন না। এর ফলে সংগঠনের ক্ষতি হতে পারে।”
সঙ্ঘের অভিযোগ, জেলা স্তরে তো নয়ই, রাজ্য স্তরেও কোনও আলোচনা না করেই এই মনিরুলকে দলে নিয়েছে বিজেপি। যোগদানের আগে বিজেপি রাজ্য নেতারদের অনেকেই অবগত ছিলেন না বলেও অভিযোগ। ক্ষোভ বিক্ষোভ এড়াতে তাই আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি তুলেছে সঙ্ঘ।
তবে বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দাবি, সঙ্ঘ চাইলেও সব সময়ে এই ধরনের দলবদল সবাইকে জানিয়ে করা সম্ভব নয়। আলোচনা করতে গেলে সাংসদ, বিধায়ককে দূরের কথা, কোনও কাউন্সিলারকেও দলে আনা যাবে না।