“পরিষেবা দিতে হবে। এ ভাবে পরিষেবা বন্ধ রাখা যায় না। চার ঘণ্টার মধ্যে কাজে ফিরতে হবে।”– এসএসকেএমে পৌঁছে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলেন কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি।
তাঁর কঠোর বার্তা, “পাবলিককে পরিষেবা দিতে হবে। কাজে যোগ না দিলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। কাজে যোগ না দিলে হস্টেল খালি করে দেওয়া হবে প্রয়োজনে। যত নেতা আছে ধরে নিয়ে আসুন। আমি পুলিশকে বলব যারা এখানে আন্দোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া অ্যাকশন নিতে। চার ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে সমস্ত ডাক্তারকে।”
মমতা আরও জানিয়ে দেন, পরিষেবা না দিলে ডাক্তার হওয়া যায় না। তাঁর যুক্তি, অনেক পুলিশ মারা যান, তাই বলে পুলিশ কখনও স্ট্রাইক করতে পারে না। রোগী পরিষেবা যারা বন্ধ রাখবে, তাদের সরকার কোনও সাহায্য করবে না। প্রয়োজনে হস্টেল খালি করে দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি চলে যান এমার্জেন্সি বিভাগে। রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বেশ কিছু রোগী দূরদূরান্ত থেকে এসে চিকিৎসা না পেয়ে বসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা।
সূত্রের খবর, আজ আন্দোলনের তৃতীয় দিন সকাল ন’টা থেকে এসএসকেএমের আউটডোরের টিকিট দেওয়া শুরু হয়। চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু কিছু পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীরা। এমার্জেন্সি পরিষেবাও না মেলার অভিযোগ ওঠে। এই সময়েই মমতা পৌঁছন সেখানে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসতেই অভিযোগে ও ক্ষোভে ফেটে পড়েন জুনিয়র চিকিৎসকেরাও। আন্দোলনরত ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান তুলতে থাকেন জোর গলায়। দাবি করেন, তাঁরা বিচার চান। চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাতে আরও রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন হাসপাতালগুলিতে চক্রান্ত চলছে। বহিরাগতরা হাসপাতালে ঢুকে পড়ে হাঙ্গামা বাধাচ্ছে।
এর পরেই মমতা ঘোষণা করেন, চার ঘণ্টায় কাজে ফিরতে হবে। জানান, রোগী পরিষেবা ব্যাহত হওয়া বরদাস্ত করা হবে না। পরিষেবা সচল করতে জুনিয়র ডাক্তারদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন নবান্ন যাওয়ার পথে, এসএসকেএম-এ পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী।
এর পরেই পাল্টা ক্ষোভে ফেটে পড়েন চিকিৎসকেরা। প্রশ্ন তোলেন, এই কড়া মুখ্যমন্ত্রী এত দিন কোথায় ছিলেন, যখন একের পর এক চিকিৎসক নিগৃহীত হয়েছেন! তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, কাজে ফেরার প্রশ্নই নেই!
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের তরফে তীব্র নিন্দা করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণের। জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএম-এ গিয়ে শুধু রোগী ও তাদের পরিবারের সঙ্গেই দেখা করে কথা বলেন। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি তিনি। মাননীয়া এ রাজ্যের অভিভাবিকা। সকলের কথাই সহানুভূতির সঙ্গে শোনার কথা ছিল তাঁর।
মমতা বলেন, “যেটা ঘটেছে সেটা মর্মান্তিক। আমরা কেউ সমর্থন করি না। এ রকম কত ঘটনা ঘটে। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ এসে বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। লাগানো উচিত নয় তাও। সে রকমই একটা ঘটনা তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় ঘটে গেছে। আমি পুলিশ বসিয়েছিলাম। কে সরিয়ে দিয়েছে জানি না। আমি সিপিকে পাঠিয়েছিলাম এনআরএসে। চন্দ্রিমাকে পাঠালাম পরিবহকে দেখতে। আপনারা কেউ জানেন না, আমি ফোন করে কথা বলতে চেয়েছিলাম এনআরএসের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। চন্দ্রিমা ফোন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওরা কথা বলেনি, এত অডাসিটি।”
তিনি আরও জানান, এক জন চিকিৎসককে তৈরি করতে ২৫ লক্ষ টাকা খরচ হয় সরকারের। যারা বাংলাকে ভালবাসে, তারা বাংলায় কাজ করেন। কিন্তু অনেকেই চলে যান বাইরে। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “চোট নিয়ে পড়ে আছে এভাবে লোকজন। একটা বাচ্চা পুরুলিয়া থেকে এসেছে পেটে নল নিয়ে। তোমাদের মায়া নেই! আমরা মর্মান্তিক ঘটনাকে সাপোর্ট করি না। অ্যাকশন নিয়েছি। তোমরা কেন ইনঅ্যাকশন করছো!”
তাঁর কথায়, “আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করব আমি। দু’পক্ষই মারপিট করেছে। কেন মারপিট হল, দেখতে হবে। কেন লোকটা মারা গেল, সেটাও দেখতে হবে। একটা ইঞ্জেকশনে মারা যাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটাও খতিয়ে দেখব। আমি সব দিক খতিয়ে দেখে সবাইকে জানাব। এর মধ্যে পুলিশ পিকেট বসিয়ে দেব।”