” ঢাকের উপর পড়ল কাঠি
পুজো কাটুক ফাটাফাটি
খুশীর জোয়ারে ভাসুক সবাই
পূজো হবে জমজমাটি “…..
এবছর করোনা নামক অসুররূপী ভয়ঙ্কর ভাইরাস পুজোয় সাধারন মানুষ থেকে শিল্পী সকলেরই মুখের হাসি, মনের খুশী ছিনিয়ে নিয়েছে। করোনার কোপে প্রতিমা শিল্পী থেকে ঢাকিরাও। বছরের এই সময়টা পুরোনো ঢাক মেরামতি থেকে শুরু করে নতুন ঢাক তৈরী এবং পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকেন ঢাক বাদকেরা। কিন্তু এবার করোনার আবহে পুজোই হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়, আর তাই এবার এখনও পর্যন্ত ঢাকি পাড়ায় দেখা মেলেনি কোনও পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের। ফলে একপ্রকার চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন রায়গঞ্জ শহরের নট্টপাড়ার ঢাকি শিল্পীরা। তবে স্বস্তি এটাই সরকারের দেওয়া রেশন ও খাদ্যসামগ্রী পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এখনও বেঁচে রয়েছেন তাঁরা।
আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘের বাহার আছে, আছে নদীর ধারে কাশফুলের সমারোহ। বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ এলেও করোনা যেন এবার সেই পুজোর আমেজকেই মৃত্যু আর সংক্রমণের আবহে কালো মেঘের চাদরে ঢেকে দিয়েছে। করোনার করাল গ্রাসে সকলেই। পুজো মানেই উৎসব আর উৎসব মানেই আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। সেই আনন্দ আর উচ্ছাস মানুষের মনে আসে তখনই যখন পুজোর মন্ডপে ঢাকের বাদ্যির রোল ওঠে। ঢাকের বাদ্য ছাড়া কোনও পুজোই পুজো নয়, আর দুর্গাপুজা ঢাক ছাড়া হতেই পারে না। ঢাকের তালেই মায়ের আবাহন বোধন থেকে বিসর্জন। কিন্তু রায়গঞ্জ শহরের নট্টপাড়ায় ঢাকিদের মনে আশঙ্কা আদৌ এবার মা দুর্গার আরাধনা হবে তো! তাঁরা মন্ডপে মন্ডপে নেচে ঢাকের বোল তুলে মানুষের মনে খুশীর জোয়ার তুলতে পারবেন তো! এই হাজারো প্রশ্ন উকি মারছে তাদের মনে।
আর এই প্রশ্নের উত্তরের উপরেই নির্ভর করছে তাদের রুজি রুটি। রায়গঞ্জ শহরের নট্টপাড়ায় বাস একশো ঢাকি পরিবারের। এমনিতেই বছরের শুরুতেই করোনার কারনে সমস্ত সামাজিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বছরের দুর্গাপুজার মরশুমের দিকেই তাকিয়ে থাকেন প্রভাত, অক্ষয়, রামেশ্বর, গঙ্গা ঢাকিরা। দুর্গা মন্ডপে ঢাক বাজাতে কেউ থাকেন লোকালয়ে কেউবা আবার যান ভিন জেলায় বা ভিনরাজ্যেও। দুটো বাড়তি পয়সা রোজগার করে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটাবার পাশাপাশি বেশ কয়েকমাসের সংসারের খরচের টাকাও রোজগার হয় এই সময়। কিন্তু করোনা এবার তাদের জীবনে বোধহয় বাদ সেধেছে। এখনও পর্যন্ত একটি টাকাও পূজোয় ঢাক বাজানোর জন্য বায়না বা অগ্রীম পাননি তাঁরা। কোনও পুজো কমিটি বা বাড়ির পুজোর লোকেরাও যোগাযোগ করেনি তাঁদের সাথে। চরম আশঙ্কায় দিন গুনছেন কয়েকশো পরিবার। দুর্গাপূজা কি এবার হবেনা বা হলেও কি ঢাকের বাদ্যি ছাড়াই মায়ের পূজো হবে মন্ডপে মন্ডপে!
স্বরূপ দত্ত