ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে আইএসএফ কর্মী হাসানুজ্জামানের খুনের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মঙ্গলবার ধৃতদের বারাসাত আদালতে পেশ করা হলে তাদের তিনদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। জানা গিয়েছে, ধৃতরা হলেন মীরাজুল হক, এমতাজুল হক ও ইসরাফিল আলি।
পুলিশ ও সিবিআই সূত্রে খবর, আগে এই মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এ বার সেই তালিকায় আরও তিনজনের গ্রেফতারিতে মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭। নির্বাচনের অনতিপরেই, ৩মে দেগঙ্গার কদম্বগাছির উলা গ্রামের বাসিন্দা হাসানুর জামান নামের ওই আইএসএফ কর্মীকে মাঠের মধ্য়ে বোমা মেরে খুন করা হয়েছিল। মাঠে কাজ করতে গিয়ে বোমার আঘাতে মৃত্য়ু হয় তাঁর। অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। যদিও, সেই অভিযোগ অস্বীকার করে শাসক শিবির।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইএসএফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই মৃত্যু ঘটেছে। কদম্বগাছিতে নির্বাচনের পর প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ টালবাহানার পর নিহত আইএসএফ কর্মীর বাড়িতে সাক্ষাত্ করতে আসেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী ও মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল।
তদন্তের সুবাদে এর আগে বারদুয়েক নিহত আইএসএফ কর্মীর বাড়িতে ‘স্পট ভিজিট’ করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা। কথা বলেছেন নিহতের পরিজনের সঙ্গে। মঙ্গলবার নতুন করে যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হল, তাঁদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে রাজ্য সরকারের জন্য। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজের রিপোর্টে উল্লেখ করে, এ রাজ্যে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন রয়েছে। যা তীব্র অস্বস্তির মধ্যে ফেলে রাজ্যকে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের থেকেও মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টই যেন গলার কাঁটা হয়ে ফুটছে। যে কারণে গোটা মামলায় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয় রাজ্য সরকার।
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ইতিমধ্যেই প্রায় চারটি চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই। পরে সেই চার্জশিটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫টি। বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। আরও ৩ টি এফআইআর রুজু করেছে সিবিআই। মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫। ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন।
এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।
প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কর্তা। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যেই হিংসা মামলার তদন্তে হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।