‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলায় প্রথম থেকেই তদন্তে তৎপর সিবিআই। হাইকোর্ট দায়িত্ব দেওয়ার সময় জানিয়ে দিয়েছিল, পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া হবে হাইকোর্টের নজরদারিতে। আর সেই মত ধাপে ধাপে কিছুদিন অন্তর একের পর এক চার্জশিট পেশ করে যাচ্ছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই, যার মধ্যে রয়েছে কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ সরকার, মনোজ জয়সওয়াল, জয় প্রকাশ যাদবের মত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ। নদিয়ার পলাশ মন্ডল নিয়ে এবার চতুর্থ চার্জশিট পেশ করল সিবিআই।
নদিয়ার কোতোয়ালিতে পলাশ মণ্ডল খুনের ঘটনায় ১৫ জনের নাম রয়েছে এই চতুর্থ চার্জশিটে। যাঁদের মধ্যে ১২ জনই আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছেন। অভিযোগ, ভোট পরবর্তী হিংসার বলি হন নদিয়ার কোতোয়ালি থানা এলাকার বিজেপি কর্মী পলাশ মণ্ডল। অভিযোগ, গত ১৪ জুন পলাশ মণ্ডলকে বাড়িতে গুলি করে, বোমা মেরে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় নিহতের বাড়ির দেওয়ালে এখনও বোমার দাগ লেগে রয়েছে।সিবিআই তদন্ত ভার নেওয়ার পর থেকে একাধিকবার সেখানে গিয়েছেন। নিহত পলাশের বাড়ির দেওয়ালে বোমা ও গুলির চিহ্ন থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পলাশের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। যে ১২ জন জেল হেফাজতে, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলা হয় সিবিআইয়ের তরফে। বাকি তিনজনের ক্ষেত্রেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বীরভূমের বাসিন্দা মনোজ জয়সওয়ালের মৃত্যু মামলায় প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিবিআই। গত ১৪ মে মনোজকে খুনের অভিযোগ ওঠে। এলাকায় তিনি বিজেপি কর্মী হিসাবে পরিচিত বলেই পুলিশের কাছে দাবি করা হয়। ২ সেপ্টেম্বর এই চার্জশিট জমা পড়ে। ভোটের ফল প্রকাশের পর পরই গত ১৪ মে বীরভূমের নলহাটির এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। মনোজ জয়সওয়াল নামে ওই ব্যবসায়ী নলহাটিতে পাথর শিল্পের যন্ত্রাংশের ব্যবসা করতেন বলে জানা যায়। নলহাটি ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। নলহাটি থানার মধুরা গ্রামের কাছে খালের ধারে তাঁর ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। ধীরে ধীরে এই ঘটনায় রাজনৈতিক হিংসার রং লাগে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়।
৩ সেপ্টেম্বর বিজেপি কর্মী জয়প্রকাশ যাদব খুনে ব্যারাকপুর আদালতে চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিবিআই। চার্জশিটে নাম রয়েছে টুনটুন চৌধুরী নামে একজনের। এ ছাড়াও আরও তিনজনের নাম রয়েছে সেখানে। তদন্ত ভার গ্রহণের দু’ সপ্তাহের মধ্যেই দু’টি চার্জশিট জমা দেয় গোয়েন্দারা। গত ৬ জুন, ভাটপাড়া এক নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তারপুর এলাকায় বিজেপি কর্মী জয়প্রকাশ যাদবকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ ওঠে। হেঁটে বাড়িতে এসে তাঁকে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা বলে অভিযোগ। চার-চারটি বোমা মারা হয় বলে অভিযোগ। বোমার স্প্লিন্টারে় মাথা ফেটে যায় জয়প্রকাশের। তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
১০ সেপ্টেম্বর জমা পড়ে তৃতীয় চার্জশিট। বীরভূমের কাঁকড়তলার বিজেপি কর্মী মিঠুন বাগদি খুনে চার্জশিট জমা পড়ে এদিন। এই খুনের ঘটনায় আগেই পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তিনজন জেল হেফাজতে থাকলেও বাকি দু’জনের জামিন হয়েছে। গত ১২ জুন বীরভূম জেলার খয়রাশোল ব্লকের কাঁকড়তলা থানার অন্তর্গত নবসন গ্রামে বিজেপির বুথ সহ সভাপতি মিঠুন বাগদি খুন হন। সেই ঘটনার তদন্তে পুলিশ ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।