বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মারা গিয়েছিলেন সজল কাঞ্জিলাল। এমনটাই জানা গেল ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। পুড়ে যাওয়ার দাগও মিলেছে তাঁর শরীরে। চিকিৎসকেরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর হার্ট। মারা যান তিনি। তবে তাঁর মাথার ডান দিকে, ঘাড়ের ডান দিকে এবং ডান হাতে চোটের চিহ্ন আছে। আঘাত আছে কোমরে, বুকে, পায়ে। কোনও হাড় অবশ্য ভাঙেনি বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে মাথার বাম পাশে তীব্র আঘাত লাগায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছিল সজলবাবুর। কানের পাশেও ক্ষত রয়েছে তাঁর।
মেট্রোয় হাত আটকে গিয়ে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু ঘটনায় ইতিমধ্যেই চালক ও গার্ডকে সাসপেন্ড করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। শুরু হয়েছে তদন্ত। দায়িত্বে থাকা মোটরম্যান (চালক) সঞ্জয় কুমার, কনডাক্টিং মোটরম্যান (গার্ড) সুদীপ সরকারের বয়ান রবিবার রেকর্ড করে ওই তদন্ত কমিটি। রেকর্ড করা হয়েছে চিফ লোকো ইনস্পেক্টরের বয়ানও। মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি সি শর্মার নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে।
পরপর দুর্ঘটনায় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগে সরব সাধারণ যাত্রী থেকে সব মহলই। দরজায় এক ব্যক্তির হাত আটকে থাকা সত্ত্বেও কেন কাজ করল না সেন্সর? যাত্রীদের প্রাণপণ চেষ্টার পর কেনই বা কাজ করেনি টকব্যাক? স্টেশনে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরাই বা কোথায় ছিলেন? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
শনিবার সন্ধে ছ’টা ৪০ নাগাদ কবি সুভাষগামী মেট্রোতে পার্কস্ট্রিট ছাড়ার পর সজল কাঞ্জিলাল নামের এক যাত্রীর হাত আটকে যায় দরজায়। শরীর ঝুলতে থাকে বাইরে। সেই অবস্থাতেই প্রায় ৬০ মিটার এগিয়ে যায় ট্রেন। শেষে লাইনে মুখ থুবড়ে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
সঙ্গে সঙ্গে ডাউন লাইনের বিদ্যুৎ বন্ধ করে সেখানে ছুটে যান মেট্রোর নিরাপত্তারক্ষীরা। ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ট্রেন টানেলের মধ্যে আটকে যাওয়ায় চালকের কেবিন দিয়ে বাকি যাত্রীদের বার করে নিয়ে আসা হয়।
মৃত সজলবাবু নন্দন অ্যাকাডেমি চত্ত্বরের পরিচিত মুখ ছিলেন। বিক্রি করতেন নাটকের পত্রিকা। একটা সময়ে আর্ট কলেজের মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন কসবা বোসপুকুর রোডের বাসিন্দা সজলবাবু। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্প-সাহিত্য মহলেও। শনিবারের ওই ঘটনার পরে আতঙ্কে যাত্রীরাও। তাঁদের কথায়, প্রতি বার একটা করে দুর্ঘটনায় হয়, মেট্রো কর্তৃপক্ষ বলে তদন্ত করছে। ফের সেটা ধামা চাপা পড়ে যায়। যাত্রী নিরাপত্তার কথা কেউই মাথায় রাখে না।