যখন ভারতের বিভাজন সম্পূর্ণ হয়, সে সময়ে ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৯.৮ শতাংশ। এখন সেটা বেড়ে ১৪.২% হয়েছে (২০১১ সেন্সাস অনুযায়ী, অর্থাৎ ১৭ কোটি ২২ লক্ষের কিছু বেশী। অন্যদিকে দুই পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধদের জনসংখ্যা কমতে কমতে প্রায় বিলুপ্তির স্তরে পৌঁছেছে। দুই দেশের জনগণনা থেকেই তাদের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিরাট নেহেরু-লিয়াকৎ হিমালয়প্রতিম ব্যর্থতার কথা অনুমান করা যায়। ১৯৫০ সালেই বোঝা গিয়েছিল পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠছে। কিন্তু  তথাপি নেহেরু যাতে পাকিস্তানী হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য তিনি লিয়াকৎ আলীর সাথে কুখ্যাত নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তি সম্পাদন করলেন। এইভাবে নেহেরু কট্টরপন্থি ইসলামিক মৌলবাদীদের হাতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতিত হবার রাস্তা পাকা করলেন। ফলে সেখানকার সংখ্যালঘুদেরকে দেশ বিভাজনের সময় যে কথা দেওয়া হয়েছিল, সেই সত্যরক্ষার পথ থেকে দেশ ভ্রমিত হল।

আজও যে সব হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তু দেশ ভাগের সাত দশক পরেও নাগরিকত্বের সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা দেশীয় এবং সাংস্কৃতিক সন্তানদের প্রতি কংগ্রেসের বঞ্চনার জীবন্ত প্রমাণ। ভারতের নেতৃবৃন্দ এইভাবে দেশভাগের নামে যে প্রতারণার কুৎসিত ঐতিহ্য চালু করলেন, তা এখনও সেকুলারিজমের শূন্যগর্ভ বাণীর নামে প্রবাহমান।

পাকিস্তান জনবিন্যাসের পরিবর্তন

পাকিস্তান মুসলিম হিন্দু শিখ খ্রিস্টান
১৯৪১ ৭৯.২ ১৩.৫ ৫.২ ১.৫
সূত্র : ১৯৪১ সালের জনগণনা
প্রশাসনিক বিভাগ মুসলিম খ্রিস্টান হিন্দু (জাতি) কাদিয়ানি (আহমাদি) তফশিলী জাতি
সব মিলিয়ে ৯৬.২৮ ১.৫৯ ১.৬০ ০.২২ ০.২৫
গ্রামীণ ৯৬.৪৯ ১.১০ ১.৮০ ০.১৮ ০.৩৪
নগর ৯৫.৮৪ ২.৫৯ ১.১৬ ০.২৯ ০.০৬
সূত্র : পাকিস্তান সরকার দ্বারা কৃত ২০১৫ সালের জনগণনা

বাংলাদেশের জনবিন্যাসের পরিবর্তন

সাল মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান অন্যান্য
১৯৫১ ৭৬.৯ ২২.০ ০.৭ ০.৩ ০.১
১৯৬১ ৮০.৪ ১৮.৫ ০.৭ ০.৩ ০.১
১৯৭৪ ৮৫.৪ ১৩.৫ ০.৬ ০.৩ ০.১
১৯৮১ ৮৬.৭ ১২.১ ০.৬ ০.৩ ০.১
১৯৯১ ৮৮.৩ ১০.৫ ০.৬ ০.৩ ০.১
২০০১ ৮৯.৭ ৯.২ ০.৭ ০.৩ ০.২
২০১১ ৯০.৪ ৮.৫ ০.৬ ০.৩ ০.১

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে পাস হওয়া একটি আইন। এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব পাওয়ার সুযোগ হয়েছে এই বিলের মাধ্যমে। তাঁদের ভিসা ফুরিয়ে গেলে বা অন্য কোন অনুপ্রবেশ আইন সংক্রান্ত কারণে যাতে তাঁদের হেনস্তা না করা হয়, এ আইনের সেটাই উদ্দেশ্য। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। নতুন সংশোধনীতে তা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।

এই বিলের মধ্যে উপরোক্ত দুই বিশেষ ধারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ধারা ২, নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ (এর পরে মূল আইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে) এর ধারা ২, উপ-ধারা (১) এর ধারা (খ) এ, নিম্নলিখিত বিধিগুলি সন্নিবেশ করা হবে, যথা:

শর্ত করা হল যে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কোনও ব্যক্তি, যিনি ২০১৪ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং যাকে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বা পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯৪০ এর ধারা ৩ এর উপ-ধারা (২) এর ধারা (গ) এর অধীনে বা বিদেশি আইন, ১৯৪৬ এর বিধানের প্রয়োগ বা এর অধীন প্রণীত কোনও বিধি বা আদেশের অধীন হইবে না এই আইনের উদ্দেশ্য হিসাবে অবৈধ অভিবাসী হিসাবে বিবেচিত হবে না”।

ধারা ৬ মূল আইনের তৃতীয় তফসিলে, ধারা (ডি) এ, নিম্নলিখিত বিধিগুলি সন্নিবেশ করানো হবে, যথা: –

‘শর্ত করা হল যে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ব্যক্তিদের জন্য, এই ধারা অনুসারে ভারতে সরকারী বাসভবন বা চাকরীর সামগ্রিক সময়কাল “এগারো বছরের চেয়ে কম নয়” এর জায়গায় “ পাঁচ বছরের চেয়ে কম নয়” বলে পরিগণিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.