বাংলার ‘শহিদ’ পরিবার নিয়ে দিল্লিতে গণশুনানি বিজেপির! ‘মানুষ কীভাবে এত বর্বর হতে পারে’, তৃণমূলকে তোপ সুষমার

দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে প্রাক্তন বিচারপতিদের সামনে তাঁদের গণশুনানি বসানো হল। সুষমা স্বরাজের উপস্থিতিতে আক্রান্ত পরিবারেরা তাঁদের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরেন বিচারপতিদের সামনে।

পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এবার সরব হলেন সুষমা স্বরাজ৷ বুধবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে, এ রাজ্যের ২৩ জন ‘শহিদ’ বিজেপি কর্মীর পরিবারের সঙ্গে কথা বললেন তিনি৷ শুনলেন রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তাঁদের সমস্ত অভিযোগ৷ এবং এরপরই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী৷ বিস্ময়ের সুরে জানালেন, ‘‘সমস্ত ঘটনা শোনার পর আমি দুঃখিত৷ আমি ভাবতে পারছি না, মানুষ কীভাবে এত বর্বর হতে পারে৷’’

রাজনীতিতে ভিন্ন মেরুতে থেকেও দু’জনের সুসম্পর্ক সুবিদিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকের পরে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যিনি অতীতে একাধিকবার রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছেন, তাঁর শাসনে কী ভাবে এত মানুষের উপর অত্যাচার হচ্ছে, সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।’’

পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসায় নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিবারগুলি যাতে সুবিচার পায়, তার জন্য গত কালই তাঁদের দিল্লি উড়িয়ে এনেছিল দল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুই নিহতের পরিবারকে ব্যাক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানান।

গণশুনানিতে পরিবারের সদস্যদের হত্যার কথা তুলে ধরেন বিপুলা সহিস-ডলি বর্মনেরা। পুরুলিয়ার বাসিন্দা বিপুলার অভিযোগ, তাঁর স্বামী বিজেপির হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলন। তাই তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে দেয় তৃণমূল সমর্থকেরা। পুলিশে অভিযোগ করা সত্ত্বেও অপরাধীরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

দাঁড়িভিটার স্কুল নিয়ে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বছর একুশের তাপস বর্মন। বোন ডলির অভিযোগ, টাকা নিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। বলা হচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে। আবার ‘জয় শ্রীরাম’ বলার অভিযোগে হাওড়ার সমতুল দলুইকে হত্যা করা হয়েছে বলে সরব হন তাঁর স্ত্রী অর্পিতা দলুই। এ সব শুনে ক্ষুব্ধ সুষমা বলেন, ‘‘মমতার রাজত্বে কেউ সুবিচার পাচ্ছেন না, এটা অবাক করার মতো বিষয়। যা দেখছি তাতে পুলিশ অভিযোগ পর্যন্ত নিচ্ছে না। একমাত্র সিবিআই তদন্ত হলে নিহতদের পরিবার ভরসা পাবে।’

সুষমা স্বরাজ ছাড়াও যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী এবং প্রাক্তন বিচারপতিরা৷ তাঁদের কথা শুনেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সুষমা স্বরাজ৷ স্পষ্ট জানান, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি অনেকদিন ধরে চিনি৷ বাম আমলে তিনি নিজেই রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছেন৷ যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন না৷ তখন থেকেই ওনার সঙ্গে আমার তখন সম্পর্ক ভাল৷ পরে ওনার মুখে হিংসার কথা শুনে আরও ভাল হয়েছিল৷ উনি বলেতেন, কীভাবে সিপিএমের হাতে তাঁর দলের লোকজন মার খাচ্ছেন৷ আমি হতবাক, ওনার শাসন ব্যবস্থায় কীভাবে এই সমস্ত হিংসার ঘটনা ঘটতে পারে৷’’

এমনকী, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় পুরুলিয়ার মৃত বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর খুনের ঘটনাও উল্লেখ করেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী৷ দুঃখপ্রকাশ করে জানান, ‘‘ত্রিলোচনের ঘটনায় আমি বিস্মিত৷ একটি রাজনৈতিক দল করায়, তাঁকে এভাবে খুন করা হতে পারে৷ আমি ভাবতে পারছি না৷ যুব সমাজ যাতে বিজেপি না করে, সেজন্য ভয় দেখানো হচ্ছে৷’’ এখানেই শেষ নয়, রাজ্যের ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও এদিন উষ্মাপ্রকাশ করেন সুষমা৷ জানান, ‘‘রাজ্যে ওনারা ন্যায় পায়নি বলেই দিল্লিতে এসেছেন৷ পুলিশ সেখানে কারও অভিযোগ নিচ্ছে না৷ খুন হলেও, পুলিশকে আত্মহত্যা বলছে৷ এফআইআর নেওয়া হচ্ছে না৷ তাই ন্যায়ের সন্ধানে এনারা দিল্লিতে এসেছেন৷ আমার মনে হয়, সিবিআইকে ছাড়া এসবের তদন্ত সম্ভবপর নয়৷’’

এই অনুষ্ঠানটি যা ‘পিপলস টারবুনাল অন পলিটিকাল ভাওলেন্স’ নামে নামাঙ্কিত একটি গবেষণামূলক সংস্থার দ্বারা আয়োজিত হয়।একটি বিবৃতিতে বলা হয়,” এখন পর্যন্ত বঙ্গে ৭২ জন বিজেপি কর্মী রাজনৈতিক হিংসার স্বীকার হয়েছেন। দিল্লীতে এইরকমই ২৩ টি পরিবারকে আনা হয়েছে যাঁরা কেন্দ্রের সামনে অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরবেন।”

একটি টুইটে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব এই অনুষ্ঠানটির কথা উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.