একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, রাজনৈতিক – জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের রাজনৈতিক আঙ্গিক ব্যতিরেকেও অনান্য পন্থা রয়েছে। শ্রীঅরবিন্দ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন
১. ‘বন্দেমাতরম’ -এর মতো সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ উজ্জীবিত করা যায়। আজকের দিনে বিক্রি হয়ে যাওয়া সাংবাদিক, সম্পাদক ও অপরাপর সংবাদ-মাধ্যমগুলি দেখিয়ে দেয়, দেশবিরোধিতার কৌশল শিক্ষিত সমাজকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং অজান্তেই তারা প্রতিবেশী দেশের প্যাসিভ সাপোর্টার হয়ে যান। কাজেই সুস্থ সাংবাদিকতাও একটি দেশপ্রেম।
২. দেশপ্রেম জাগ্রত হয় দেশের মঙ্গলময় ও শুভঙ্করী ঐতিহ্যের সঙ্গে মানসিক নৈকট্যে। শ্রীঅরবিন্দের অগুনতি লেখা ভারতবোধ সঞ্জাত।
৩. রাষ্ট্রবাদী শিক্ষা ব্যবস্থায় যোগ্য সঙ্গত করাও দেশপ্রেম। শ্রীঅরবিন্দ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে সে পথ দেখিয়েছেন।
৪. ভারতের অধ্যাত্ম-সংস্কৃতির অনুসরণ মানেই জাতীয়তাবাদ, শ্রীঅরবিন্দ তাঁর উত্তরপাড়া অভিভাষণে তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, অন্যত্রও তার প্রকাশ আমরা বারে বারে দেখেছি।
৫. সামাজিক মেলবন্ধন ও মিলনমন্দির ভাবনা এক অনবদ্য জাতীয়তাবোধের প্রকাশভূমি। শ্রী অরবিন্দ পাঠ মন্দির, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের হিন্দু মিলন মন্দির, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ‘শাখা’, বিবেকানন্দ ভাব প্রচার কেন্দ্র, শ্রীরামকৃষ্ণ মহামণ্ডল প্রভৃতিকে এককথায় সামাজিক জাতীয়তাবাদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস বলা যায়।
কাজেই প্রত্যেক ভারতবাসী তার পরিস্থিতি অনুয়ায়ী জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের কাজ করবেন। রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ নিঃসন্দেহে একটি জোর-ঝটকা, কিন্তু জাতীয়তাবাদের ভিত্তিভূমি নড়বড়ে হলে চলে না। অন্য নানান পথে সমন্বিতভাবে এগোতে হবে তবেই গৈরিক-জাতীয়তাবাদ ভারতরাষ্ট্রে চিরায়ত (sustainable) সংস্কৃতির অঙ্গ হবে। নইলে ‘বানের জল’ এসে রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদকে ‘ঘোলা’ করে দিতে পারে।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী