খাকি পোশাক। মাথায় টুপি। কাঁধে বন্দুক। তাতে ঠাসা কার্তুজ। কিন্তু কাঁধের বন্দুক কাঁধেই থেকে গেল। আর চোখের সামনে দাপিয়ে বেড়াল দুষ্কৃতীরা। ‘বেচারা’ রাজ্য পুলিশ! ভয়ে বন্ধ করে দিলেন বুথের দরজা। ঢুকে পড়লেন স্কুলের ক্লাস রুমে। প্রথম দফার ভোটে কোচবিহারের দিনহাটায় সংবাদমাধ্যমের সামনে এমনই করুণ দশার কথা স্বীকার করে নিলেন রাজ্য পুলিশের এক কনস্টেবল।
বৃহস্পতিবার দিনহাটার ওই বুথে ইভিএম-এ গোলমালের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশ কিছুটা দেরিতেই ভোট শুরু হয়। ওই পুলিশকর্মী জানান, মক পোলের পর সাতটা ৫৬ মিনিট নাগাদ ভোট শুরু হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন ভোটার ভোট দিয়েছেন কী দেননি, ওমনি বাইরে শুরু হয়ে যায় ব্যাপক মারামারি। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী জানান, “হঠাৎ দেখি বাঁশ নিয়ে মারামারি শুরু হয়ে গেল।” বাইরে এমন উত্তেজনা দেখে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটাররাও সরে পড়েন। কিন্তু আপনি কী করলেন? তাঁর উত্তর, “আমি আর কী করব! দরজায় তালা-চাবি দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
দিনহাটার এই বুথে কেন্দ্রীয়বাহিনী ছিল না। মোতায়েন ছিল সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ। তিনি বলেন, “অস্ত্র কাঁধে আছে, আরমস দিয়ে লোড করেছি। গুলি করব কী করব না, বুঝতেই পারছি না। আমাকে তো একটা অর্ডার পেতে হবে। আমার সেক্টর অফিসারকে ফোন করলাম। অনেক কষ্টে ফোন লাগল। তারপর তিনি যখন এলেন তখন সব শান্ত হয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “কালকে স্থানীয় নেতারা এসে বললেন, এখানে নর্মাল ভোট হবে। কোনও অসুবিধে নেই। হঠাৎ আজ সকালে দেখি এজেন্ট উধাও।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, গত কয়েক বছরে রাজ্য পুলিশের এমন কিছু ছবি সামনে এসেছে, যা থেকে পরিষ্কার, পুলিশের মনোবলটাই ভেঙে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেই দেখা গিয়েছিল ভবানীপুর থানার ভিতরে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে জনৈক পুলিশ কর্মী টেবিলের তলায় লুকিয়ে পড়ছেন। মাথায় যাতে ইঁট পাটকেল এসে না পড়ে, তা থেকে বাঁচতে চাপা দিচ্ছেন ফাইল। এ বার ভোটেও দেখা গেল সেই এক চিত্র। তালা দিয়ে পুলিশকর্মী বন্দুক কাঁধে ঢুকে পড়লেন ক্লাসরুমে। পঞ্চায়েতের তুলনায় সংঘর্ষ বা হিংসার ঘটনা কম হলেও, পুলিশের এমন দশা দেখে প্রাক্তন এক পুলিশ কর্তা বলেন, “দেখে কষ্ট হচ্ছে।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “কয়েক মাস আগেই পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন, কুইক অ্যাকশন নিতে। আজকে বোঝা গেল মাননীয়ার অনুপ্রেরণায় কেমন দ্রুত রিয়্যাক্ট করছে পুলিশ।” বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, “রাজ্য পুলিশের মেরুদণ্ড বলে কিছু নেই। এ তো সবাই জানেন।” যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এ দিন যা গণ্ডগোল হয়েছে তা বিজেপি-ই করেছে। মানুষের কাছে ওঁদেরই এর জবাব দিতে হবে।”