#প্রথম_অধ্যায়
সুপ্রাচীন ভারতবর্ষ , সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানও কৃষি , বাণিজ্যযাত্রা ইত্যাদির কারণে পন্ডিতগণের আশু কর্তব্য ছিল মাস , ঋতু, বৎসর, যুগ এবং তৎসহ নক্ষত্র, রাশি , তিথি গণনা। সে সময় বিদ্যাচর্চা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। পরা বিদ্যা ও অপরা বিদ্যা। পরা বিদ্যা হল ব্রহ্মবিদ্যা বা শ্রেষ্ঠ বিদ্যা। অপরা বিদ্যা হল প্রকৃতপক্ষে ব্যবহারিক জ্ঞানের অনুশীলন। এই সকল ব্যবহারিক বিদ্যা আশ্রয় পায় বেদাঙ্গে। এই সকল পরা ও অপরা বিদ্যার চর্চা আজও সমগ্র পৃথিবী জুড়ে জ্ঞানে বা অজ্ঞানে অব্যাহত আছে এবং সুদূর ভবিষ্যতেও থাকবে। এর সব থেকে অসীম ও অধিক প্রভাব আছে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষচর্চায়।
জ্যোতিষ হলো সেই বিদ্যা, যার দ্বারা আকাশে অবস্থিত গ্রহ স্থিতির দ্বারা অতীত, ভবিষৎ এবং বর্তমান সম্বন্ধে আমরা জানতে পারি। জ্যোতিষ শাস্ত্রের অপর নাম জ্যোতিঃ শাস্ত্র। জ্যোতি শাস্ত্রের অর্থ হলো যে শাস্ত্র জীবনে আলো দেয়, প্রকাশ দেয় অর্থাৎ জ্যোতি দেয়। তাই জ্যোতিষ বিদ্যা হল অন্যান্য সকল বিদ্যার চক্ষু স্বরূপ।
ঋক বেদ থেকে শুরুকরে অথর্ব বেদ এর বিবিধ ক্ষেত্রে জ্যোতিষের গভীর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় সমূহ রূপক ও ছন্দ আকরে বিবিধ বিষয় প্ৰক্ষিপ্ত ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । সেগুলির মাঝে সংবৎসর বিভাগ থেকে সময়ের হিসাব , দিন , ইত্যাদি থেকে শুরু করে তিথি নির্ণয়ের পদ্বতি ও আলোচিত আছে। সে বেদাঙ্গ জ্যোতিষ কে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। তুলনামূলক ভাবে অথর্ব বেদে এর পূর্ণাঙ্গতা লক্ষণীয় । সেখানে শুভ সময়ের বিবরন, দিন , গ্রহের নাম ইত্যাদি সবিশেষ বর্ণিত রয়েছে। কল্প অংশে আশ্বল সূত্র , পারাক্ষর সূত্র ও বেদাঙ্গ জ্যোতিষ সমৃদ্ধ ।
বেদের আরেক প্রধান শাখা নিরুক্ত । সেখানে নিরুক্তকার য়াস্ক নীহারিকা বলছেন –
” অন্তরীক্ষাস্যুপরি স্যানদনশিলা আপা: “
আবার বাল্মীকি রামায়নে নীহারিকার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন –
সাগরঙ চাম্বরঙ প্রখ্যাম্বরম সাগরপমম ।
সাগরম চাম্বরম চেতি নির্বিশেষম দৃশ্যতে।।
এর সাধারণ অর্থ হল সাগর অম্বর তুল্য আর অম্ভর সাগর তুল্য । এই দুয়ের মধ্যে ভেদ নেই ।
মহর্ষি ব্যাস গঙ্গাকে উপলক্ষ করে রূপকার্থে লিখেছেন –
‘ দিবি ছায়াপথো যস্তু অনু নক্ষত্র মন্ডলম
দৃশ্যতে ভাস্বর রাত্রও দেবী ত্রিপমগা তু গা ।।
ছায়াপথ সম্পর্কে ব্যাস দেবের সে জ্যোতিষ শাস্ত্রে গ্রহ নক্ষত্রদির সম্পর্কিত উপলব্দি যে কত গভীর ছিল তা বলাই বাহুল্য। এখানে ত্রিপথমগা মানে ত্রি পথ স্বর্গ , মর্ত্য ও পাতাল এই তিনপথে গঙ্গা প্রবাহিত হয়েছেন । তাই ত্রিপথমগা বলা হয়েছে । গঙ্গা শব্দের মূল আভিধানিক অর্থ গমন কারিণী । তিনি জ্যোতি সমূহে অনুগমন করেন সে নদী কোটি কোটি তারা সমাযুক্ত। । তাই সেখানে ছায়াপথ কে গঙ্গার সাথে তুলনা করা হয়েছে ।
আবার জ্যোতিষ শাস্ত্রের মর্ম বাণী ক্ষেত্রে স্মরণাপন্ন হয়ে সেটাই বলি –
হিরন্ময়েন পাত্রেশ সত্যসপিহিতন্ম মুখম ।
তৎ ত্বম পুষন্ন।প বৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে ।।
অর্থাৎ , হিরন্ময় পাত্রের দ্বারা সত্যের মুখ আচ্ছাদিত আছে । হে আদিত্য পুষন তুমি সত্য ধর্ম জানার জন্য সে আবরণ উন্মোচন কর ।জ্যোতিষ মানে জ্যোতি: যিনি সে আবরণ উন্মোচন করতে সমর্থ হবে তার কাছে জ্যোতিষের জ্যোতি তার কাছেই প্রতিভাত হবে ।
সৌর মন্ডলের প্রধান গ্রহ সূর্য । বেদে সূর্যকে নিন্ম রূপে বর্ণনা করেছে এই ভাবে –
তরনির্বিশ্বদর্শতো জ্যোতিষ্কদসী সূর্য বিশ্বমাভাসি রোচনম ।
অর্থাৎ যিনি ত্রান করেন বিশ্বাদর্শন করান ।জ্যোতিষ্কের স্রষ্টা সূর্য বিশ্ব কে আভাষিত করে।
এই ভাবে সুর্যের শ্রেষ্ঠত্ব কে প্রতিপন্ন করা হয়েছে ।
পরবর্তী কালে , আর্যভট্ট তার সূর্য সিদ্ধান্ত গ্রন্থে গ্রহের গতিপথ বর্ণনা সম্পর্কে লিখেছেন যে – ” সূর্যামুক্তা উদিয়ন্ত্রে শীঘ্রশচরকে দ্বিতীয়গা ।
সমাসতৃতীয়গে জ্ঞেয়া মন্দা ভানো চতুর্থগে।।
বকরা:স্যু পঞ্চ ষষ্টহরকে অতি বক্র নগাস্টকে।
নবমে দশমে ভানো জায়তে কুটিল গতি ।।
দ্বাদশ একাদশে সূর্যে ভজনতে শীগ্রতা পুনঃ ।”
সে শ্লোক টির সরালার্থ নিন্মরূপে – সূর্য যে রাশির যত অংশে থাকে সেই রাশির তত অংশে হতে নিস্ক্রান্ত হলে দুই রাশি পর্যন্ত সূর্য মুক্তা গ্রহাশীঘ্রগামী হয় । সূর্য হতে তৃতীয় রাশিতে চলার সময় গ্রহ সমগামী হয় । চতুর্থ রাশিতে মন্দ্গামী । পঞ্চম ও ষষ্ঠম রাশিতে চলার সময় বক্রগামী হয় । সপ্তম অষ্টম রাশিতে অতিবক্র গামী হয় নবম দশম রাশিতে সঞ্চার কালে সরল গতি প্রাপ্ত হয় । একাদশ ও দ্বাদশ রাশিতে পুনঃ শীঘ্র গতি প্রাপ্ত হয়।।
প্রাচীন ভারতে অরণ্যবাসী , গুহাবাসী মুনি ঋষি এবং রাজ্য শাসনকারী রাজা ছাড়াও আরণ্যক , পাহাড়ি , মরুবাসী ,সুদূর দ্বীপবাসী নানা উপজাতি গোষ্ঠীর বাস ছিল। তাঁরাও কিন্তু তাঁদের মতো করে জ্যোতিষ চর্চা করতেন। তাঁদের নিজ চর্চিত জ্যোতির্বিদ্যা অনুশীলনে দিন , মাস , বৎসর গণনা হত। । হয়ত তার সঙ্গে শিল্প , কল্প, ব্যাকরণের কোনো ছন্দ ছিল না। আকাশের তারাদের নিয়ে তাঁদেরই মুখে ছড়িয়ে পড়ত কত শত গল্প গাঁথা।
সেই সুপ্রাচীন জম্বুদ্বীপ বা আর্যাবর্ত বা ভারতবর্ষে সূর্য এবং চন্দ্র কে কেন্দ্র করে কেবল দিন, রাত, তিথি, ক্ষনের বিচারই হত না। বরং তাঁদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল নানা আচার। পরে সেইসব আচার ব্যবস্থাই লোকাচার নামে খ্যাত হয়েছে।
কার্তিক পূর্ণিমা কাটলে আসবে হেমন্তের অগ্রহায়ন মাস।
অগ্রহায়ণের কাব্যিক নাম ‘অঘ্রান’। দিকে দিকে এখন যুগপৎ সোনালী আমন ধান কাটার ও বোরো ধান লাগানোর আয়োজন। কালের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ‘মরা’ কার্তিকের পর এদেশের মানুষ প্রবেশ করছে এক সার্বজনীন মৌখিক উৎসবে। পাকা ধানের মউ মউ গন্ধে দশদিক হবে বিমোহিত।
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন :
বৃহত্সাম তথা সাম্নাং গায়ত্রী ছন্দসামহম্।
মাসানাং মার্গশীর্ষোহমৃতূনাং কুসুমাকরঃ ।।
বেদাঙ্গ মতে বর্ষ শুরু হতো অগ্রহায়ণ মাসে। উল্লেখ্য সংস্কৃত ‘অয়ন’ বৎসর। বৎসরের অগ্র হিসাবে এই মাসের নাম ছিল ‘অগ্রহায়ণ’। মূলত সে সময়ে বৎসর শুরু হতো বৃশ্চিক রাশিতে, মৃগশিরা নামক নক্ষত্রের নামানুসারে মাসের নাম মার্গশীর্ষ না হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘অগ্রহায়ণ’।
অগ্রহায়ণ বা অঘ্রান বাংলাসনের অষ্টম এবং শকাব্দের নবম মাস। এই মাসের আরেক নাম মার্গশীর্ষ।প্রাচীন বাংলা ভাষায় এই মাসটিকে আঘন নামে চিহ্নিত করা হত।মৃগশিরা নামক তারা থেকে ‘মার্গশীর্ষ’ নাম এসেছে ।তবে আমাদের কাছে এই মাসের নাম অগ্রহায়ণ ।এখন এটি বাংলা সালের অষ্টম মাস ।কিন্তু এক সময় অগ্রহায়ণ ছিল বছরের প্রথম মাস ।’অগ্র’ শব্দের অর্থ ‘আগে’ আর ‘হায়ণ’ শব্দের অর্থ ‘বছর’।
তবে ওই যে বললাম আরণ্যক , পাহাড়ি , মরুবাসী ,সুদূর দ্বীপবাসী নানা উপজাতি গোষ্ঠীর বাস ছিল , তাঁরাও তাঁদের মতো করে যে জ্যোতিষ চর্চা করতেন তাঁরা #মাঘ মাসের পয়লা দিনকে শুভ মানতেন। আমরাও তো মানি ? মানি না ?
যাক গে, তো ওই দিনকে তাঁরা বলতেন #আখিয়ান যাত্রা বা #এখ্যান যাত্রে।
যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি তাঁর “পূজা- পার্বন” গ্রন্থে বলেছেন :
ষোলোশত বৎসর পূর্বে পৌষ – সংক্রান্তির দিন উত্তরায়ণ আরম্ভ হইত। পরদিন পয়লা মাঘ নূতন বৎসরের প্রথম দিন । সেদিন আমরা দেব- খাতে প্রাতঃস্নান করি। লোকে বলে #মকরস্নান।
পূর্বের দিন ছিল পৌষ মাসের শেষ দিন অর্থাৎ #মকরসংক্রান্তি ।গোটা পৌষ মাস জুড়ে গ্রাম- ঘরে যে টুসুগান গাওয়া হতো ,পৌষ সংক্রান্তির দিন সেই টুসু ঠাকুরের ভাসান হত। টুসু লৌকিক পূজা, তাই উপবাস বা মন্ত্রোচ্চারণ নেই । একটি মাটির সরায় গোবর এবং তুষ মিশ্রিত একটি পিন্ড রেখে তাতে চালবাটা পিটুলি দিয়ে চোখ মুখ ফুটিয়ে তোলা হত। একে তুষতুষালী ব্রতও বলা হয়। বছর দশেক আগেও চোখ মুখ ফুটিয়ে তোলা এই মূর্তিকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হত। এখনো কিছু কিছু জায়গায় হয়। তবে রঙিন মূর্তি দেখতে পাওয়া যায় অধিকমাত্রায়। টুসু হলেন লৌকিক রূপে দেবী লক্ষ্মী, তিনি ঘরের মেয়ে, শস্য উৎসবের সঙ্গে জড়িত। তাই তার ভাসান বা বিদায় হয় না। হয় পুনরায় ফিরে আসার এখ্যান। শস্যের পুনরুজ্জীবন বা পুনর্জন্মের আচার।
পরের দিন পয়লা মাঘ ,নতুন কৃষি বর্ষের সূচনা । তাই বৎসর সমাপ্তির দিন ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস , মাছ-মাংস , নতুন জামা কাপড় পরার কখনোই থাকত না যদি এটি বিসর্জনের উৎসব হত । এ এক আনন্দ উৎসব , ভগবান সূর্যনারায়ণকে কৃতজ্ঞতা জানানো। কৃষি কেন্দ্র করে এই আনন্দ উৎসব আজও থেকে গেছে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে। সেখানে কেবল টুসু নয়, সারা ভারত জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সেই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । যেমন -তামিলনাড়ুর পোঙ্গল , মহারাষ্ট্রের তিলগুল, অন্ধ্রপ্রদেশের পেদ্দাপনদুগা, পাঞ্জাবের লোহরি, অসমের বিহু আর নবান্ন উৎসব। মকর সংক্রান্তি ব পৌষ সংক্রান্তি উৎসব আজকের শারদীয় দুর্গা পূজার মতোই অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ এবং চিত্তাকর্ষক , অতীত ভারতবর্ষ থেকে আজকের দিনেও।
অশোক কলিঙ্গ জয় করে তৌসলী এবং সমাপা নামক দুটি নগরীকে কলিঙ্গদেশের শাসনকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করেন প্রসঙ্গত বলে রাখি এই তৌসলী বর্তমানে ধৌলী এবং সমাপা বতর্মানে জৌগড় নামে সুপরিচিত।
উক্ত দুই স্থানে নতুন গিরিশাসন পাওয়া যায় । কলিঙ্গের শাসনকার্যে নিযুক্ত কর্মচারী ও কলিঙ্গের নাগরিকগণের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে নির্দেশিত এই দুইটি অনুশাসনকে ঐতিহাসিক ও পন্ডিতেরা মনে করেন #কলিঙ্গের_স্বতন্ত্র_গিরিশাসন । বলাবাহুল্য, দুইটি অনুশাসন বিশেষ একটি সময় পাট ও প্রচারের নির্দেশ আছে। দুটি অনুশাসনের শেষের অংশ দুটি আচার্য দীনেশ চন্দ্র সরকার মহাশয় অনুবাদ করেছেন-
” যেন মহামাত্রগণ প্রত্যন্তবাসীদের আমার সম্পর্কে আশ্বস্ত করার জন্য এবং তাদের মধ্যে ধর্মাচরণ বৃদ্ধি করার জন্য সবসময় এই লিপি অনুসরণ করে। এই লিপিটি তোমাদের সকলের চাতুর্মাসী এবং তিষ্যা নক্ষত্রের মধ্যবর্তী সময়ও সুযোগ পেলেই একা – একাও শুনবে। ( পঞ্চদশ মুখ্য গিরিশাসন : জৌগড়ার পাঠ )
প্রতি তিষ্যা নক্ষত্রে এই লিপিটির পাঠ তোমাদের সকলের শুনতে হবে। দুটি তিষ্যা নক্ষত্র যুক্ত দিনের মধ্যে সুযোগ ঘটলে মাঝে মাঝে তোমরা লিপিটি একা – একাও শুনবে । ( ষোড়শ মুখ্য গিরিশাসন : ধৌলির পাঠ )
“কলিঙ্গের স্বতন্ত্র গিরিশাসন” দুটি পাঠ করে আচার্য সুকুমার সেন তাঁর #বঙ্গভূমিকা গ্রন্থে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছেন । সেই মন্তব্য আলোচনা আমাদের নববর্ষ আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করে থাকে –
অশোকের সময়েও ভাদু পরব ও পৌষ পার্বণ অনুষ্ঠিত হতো । তবে হয়তো সবটা এখনকার মতো নয় । আমাদের দেশের ফসল ওঠার সময় দুইটি – ভাদ্র ও পৌষ । তিথি ধরে হিসাব করলে দুই ই তিষ্যা ( নামান্তর পুষ্যা )। এই দুই মাসে এই তিথিতে লোকে উৎসব করত। অশোক বলেছেন যে, তাঁর এই অনুশাসন যেন ওই উৎসব উপলক্ষে এবং ইচ্ছা হলে যেকোনো দিন সকলে শোনে।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তিষ্যা সম্পর্কে বলেন , ” যাহাতে তিষ্যযুক্ত #পৌর্ণমাসী আছে ; পৌষমাস । ” পৌর্ণমাসী অর্থে আমরা বলি #পূর্ণমাস অর্থাৎ মাস পূর্ণ হল। আবার কেউ কেউ মনে করেন , #পূর্ণিমাতিথি । এ প্রসঙ্গে বলা যায় পুরনো দিনে মাস ছিল দু’ধরনের পূর্ণিমান্ত ও অমান্ত। এক পূর্ণিমা থেকে গণনা শুরু করে আরেক পূর্ণিমায় শেষ হলে পূর্নিমান্ত মাস। আর এক অমাবস্যা থেকে শুরু হয়ে পরের অমাবস্যায় শেষ হলে তাহলে অমান্ত মাস।
তবে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তিষ্যযুক্ত যে পৌর্ণমাসীর কথা বলেন, তা তিষ্যা নক্ষত্রের নিকট অবস্থানকারী চন্দ্রের পূর্ণিমা তিথি।
বলা বাহুল্য অশোক কথিত তিষ্যা নক্ষত্র পুষ্যা নক্ষত্র নামেও প্রচলিত ছিল বা আছে সেই অথর্ব বেদের কাল থেকে। মহাকাশে তিষ্য নক্ষত্রের যে তারকা পুঞ্জ আছে তা পুষ্পগুচ্ছের ন্যায় বলেই তার নাম পুষ্পা । এই পুষ্পা থেকেই পুষ্যানক্ষত্র এবং তা থেকে পৌষ একটি মাসের নাম হয়েছে।আর টুসুর অবয়ব তুষ দিয়ে গড়া। তিষ্য থেকেই বোধয় তুষ শব্দটির উৎপত্তি। তুষ অর্থাৎ ধানের খোসার চূর্ণিত রূপ।
#ক্রমশঃ
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১ . লোকায়ত রাঢ় বঙ্গ ২. বিজ্ঞান চর্চায় প্রাচীন ভারত ও সমকালীন অন্যান্য দেশ ৩. ঋগ্বেদ সংহিতা ৪. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৫. বঙ্গাব্দ