অর্শের (Piles) থেকে মুক্তি পেতে অস্ত্রোপচার। কিন্তু মলদ্বারটাই যে বন্ধ হয়ে যাবে কে জানত! প্রায় সাড়ে তিন মাস টানা নরক যন্ত্রণা। প্রচুর পরিমাণে ‘ল্যাক্সিট’ খেয়ে কোনওক্রমে মলত্যাগ। সমস্যার সমাধান করাতে এক ‘হাতুড়ে’র পাল্লায় পড়েন উত্তর ২৪ পরগনার সিরাজুল সরদার। অর্শের বদলে মলদ্বারের একাংশ কেটে দেন সেই ‘চিকিৎসক’। শেষপর্যন্ত এনএরআসের চিকিৎসকদের চেষ্টায় সুস্থ হলেন তিনি।
ঘণ্টাখানেকের অস্ত্রোপচারে সিরাজুল সরদার নামে উত্তর ২৪ পরগণার সেই ব্যক্তিকে শাপমুক্ত করল কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল (NRS Medical) কলেজ হাসপাতাল। পুনরায় অস্ত্রোপচার করে মলদ্বারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন এনআরএসের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. উৎপল দে ও তাঁর সহকারী ডা. সুচেতা সরকার। উৎপলবাবু জানালেন, আগের অস্ত্রোপচারের কোনও কাগজ নেই। সম্ভবত কোনও কোয়াকের পাল্লায় পড়েছিলেন রোগী। অর্শ সারানোর নাম করে এমন অস্ত্রোপচার করেছিলেন যে মলদ্বারটাই প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সিরাজুলের বাড়ি ন্যাজাটের রায়ামাড়ি হুলোপাড়ায়। সাড়ে তিন মাস আগে স্থানীয় একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু কোনও কাগজপত্র নেই। অস্ত্রোপচারের পর মলদ্বার এতটাই ছোট হয়ে যায় যে কনিষ্ঠ আঙুলও ঢুকছিল না। স্বাভাবিক মলত্যাগ না হওয়ায় নরক হয়ে যায় সিরাজুলের জীবন। বাধ্য হয়েই কলকাতায় আসেন তিনি। এই সব ক্ষেত্রে বেশ দেরি হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করা ঝুঁকির হয়। তাই দেরি না করে সিরাজুলকে ১১ জানুয়ারি ভরতি নিয়ে নেন উৎপলবাবু। ১৬ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার করা হয়। উৎপলবাবুর দাবি, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এখন আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে পারছেন রোগী। দু-একদিনের মধ্যেই ছুটি দেওয়া হবে।
অর্শ সারানোর নামে গ্রামেগঞ্জে এমনই সব ঝুঁকির ‘অস্ত্রোপচার’ চলছে। কারা করছে বোঝার উপায় নেই। কাঠগড়ায় দাঁড় করানোরও উপায় নেই। কারণ অস্ত্রোপচারের কোনও কাগজপত্র রোগীকে দেওয়া হচ্ছে না। পুরোটাই ‘আনঅফিশিয়াল’। স্থানীয় কোনও হাসপাতালে ভরতি করে একদিনেই সেরে ফেলা হচ্ছে অস্ত্রোপচার। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিরাজুলের মতো সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা। এমনই পর্যবেক্ষণ উৎপলবাবুর। তাঁর মত, এই ব্যাপারে নজরদারি জোরদার করতে হবে। নাহলে আরও অনেক সিরাজুলকে যন্ত্রণা সইতে হবে।