জুলাই মাসের ১২ তারিখে কলকাতায় মিছিল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জল রক্ষার অঙ্গীকার করে পথ হেঁটেছিলেন দিদি। সরকারের উদ্যোগে সেই মিছিল হয়েছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে মেয়ো রোড পর্যন্ত। কিন্তু সেই মিছিলে যে টাকা খরচ হয়েছে, তা শুনে অনেকেই চোখ কপালে তুলছেন।
গত বছর জুন-জুলাই মাসের কথা মনে পড়ে?
জলের আকালে শুকিয়ে কাঠ ভারতের একাধিক রাজ্য। কখনও সংবাদ শিরোনামে আসছে রাজস্থানের সীকরে ১০ কিলোমিটার ঠেঙিয়ে জল আনতে যাচ্ছেন গ্রামের মহিলারা তো কখনও চেন্নাইয়ের মানুষের মুখে জল দিতে ট্রেন বোঝাই জল পৌঁছে দিচ্ছে রেলমন্ত্রক। সেই সময়েই জুলাই মাসের ১২ তারিখে কলকাতায় মিছিল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জল রক্ষার অঙ্গীকার করে পথ হেঁটেছিলেন দিদি। সরকারের উদ্যোগে সেই মিছিল হয়েছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে মেয়ো রোড পর্যন্ত। কিন্তু সেই মিছিলে যে টাকা খরচ হয়েছে, তা শুনে অনেকেই চোখ কপালে তুলছেন।
পূর্ত দফতরের নথি বলছে, গোটা অনুষ্ঠানের বরাত পেয়েছিল শরৎ বোস রোডের একটি সংস্থা। এক্সিবিটস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের ওই সংস্থাই সবটা করেছে। আর ওই মিছিল এবং মিছিল শেষে সভা করতে তারা সরকারের থেকে নিয়েছে ১ কোটি ২৯ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯৫৬ টাকা।
রবীন্দ্রনাথের জন্মভিটে থেকে মেয়ো রোডের গান্ধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত দূরত্ব ৩.৮ কিলোমিটার। সেখানে সভা হয়েছিল। পূর্ত দফতরের ওই নথিতে লেখা রয়েছে, মঞ্চ বাঁধা, ব্যারিকেড দেওয়া, অতিথিদের আপ্যায়ণ, সাজানো গোছানো, গোটা মিছিল এবং সভার লাইভ স্ট্রিমিং—সবটা করতে এই টাকা খরচ হয়েছে।
যদিও পূর্ত দফতরের কোনও কর্তা এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে।
অনেকেরই প্রশ্ন, যাই হোক না কেন, তাই বলে এক কোটি তিরিশ লক্ষ টাকা? মুখ্যমন্ত্রী যে রোজ বলেন আমাদের টাকা নেই, আমাদের টাকা নেই। এত এত ঋণের বোঝা! এই অর্থের পরিমাণ শুনেই নবান্নের বিরুদ্ধে বড় দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, “এর পিছনেও নির্ঘাত ভাগ-বাটোয়ারা আছে। না হলে এই জিনিস হতে পারে না। রাজ্যের সব কর্মসূচিতেই এটা হয়। আমরা সরকারে এসে ধরে ধরে সবগুলোর তদন্ত করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারটাকে মোচ্ছবের জায়গা বানিয়েছেন।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এ ব্যাপারে বলেন, “আর কিছু বলার নেই। একটা মিছিল করতে এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকা একটা সরকার খরচ দেখাচ্ছে! এদের লজ্জাও করে না, মানুষের টাকা নিয়ে এ ভাবে নয়-ছয় করছে। অবিলম্বে এর তদন্ত হওয়া উচিত।”
বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এই সরকার পরের ধনে পোদ্দারি করছে। যে শুনবে সে-ই বলবে এই পরিমাণ অর্থ একটা মিছিলে খরচ হতে পারে না। বাংলায় রানির রাজত্ব চলছে। ওঁর মর্জিতেই সব। গণতন্ত্র বলে কিচ্ছু নেই।”