কলকাতা, ২১ জুন (হি স)। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিয়োগ পর্ষদের নিয়োগ নিয়ে একটি মেধা তালিকা সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশে এত বেশি সংখ্যায় একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের এর ফলে তদন্তের নিরপেক্ষতা ব্যাহত হবে কি?
তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক বামেদের থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে পরিবর্তিত হয়েছে। আর তার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল জয় এসেছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বস্ত করেছিলেন রাজ্যে মুসলিমদের উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের চাকরিতেও উন্নতি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের এক পদস্থ আধিকারিক অবশ্য দাবি করেন, “এই নিয়োগে বেআইনি কিছু হয়নি। সাচার কমিটির রিপোর্ট এবং পরবর্তী নানা সিদ্ধান্ত খতিয়ে রাজ্যে নিয়োগ হচ্ছে মুসলমানদের।“
যে মেধা তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেটি পুলিশে ওবিসি বিভাগের। পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি-এ বিভাগে মোট ৮০ টি গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৭২ টি মুসলিম গোষ্ঠী। ওবিসি-বি বিভাগে প্রায় ৪০ টি গোষ্ঠী মুসলিম। সুতরাং, ওবিসি বিভাগে তালিকাভুক্ত ১২০ টি গোষ্ঠীর মধ্যে ১১২টি মুসলিম। এই নিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের ওবিসি-এ বিভাগে শূন্যপদ পূরণ করা। তালিকায় দেখা গেছে যে একজন বা দু’জন ব্যক্তি বাদে সকলেই মুসলমান। ২০১৯ সালেও একই ঘটনা ঘটে।
শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ অচিন্ত্য বিশ্বাস এই প্রতিবেদককে বলেন, “এই নিয়োগের ফলে পুলিশি তদন্তের নিরপেক্ষতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের কৌশল নয়, রীতিমত অন্যায়। ওবিসি-র নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে কাজের সুযোগ দেওয়ার অর্থ হিন্দুদের প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্ছিত করা। ওবিসি-তে হিন্দুরাও তো আছে? নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদেরও নাম-তালিকা প্রকাশিত হওয়া উচিত।“
ওবিসি-এ ‘আরও পিছিয়ে’ এবং ওবিসি-বি পিছিয়ে হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সুতরাং, পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি শ্রেণিবদ্ধকরণে মুসলমানদের অত্যধিক প্রতিনিধিত্ব করা নিয়ে বিতর্ক উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের জনগোষ্ঠীতে মুসলমান সংখ্যাগুরু হয়ে উঠছে, তথ্য দিয়ে একাধিকবার তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেঘালয় ও ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। কিন্তু ওবিসি-গোষ্ঠীর এই নিয়োগ সম্পর্কে ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর কাছে মন্তব্য করতে চাননি। বিজেপি-র পরামর্শদান কমিটির চেয়ারম্যান তথা দলের রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক অসীম ঘোষ বলেন, “ওবিসি-র ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা পরিস্কার নয়। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না।“
বুদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার প্রেসিডেন্ট ও ট্রাস্টি তথা মহাবোধী সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রাস্টি হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে জানান, “যেভাবে ওবিসি কোটায় মুসলমানদের কাজ দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমরা মোটেই খুশি নই। আগে এ নিয়ে নানা সময়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। লাভ হয়নি। তাই এখন মেনে নিই। গোটা রাজ্যে আমাদের লোক লাখ দুই হবে। প্রতিবাদের জোরটা কোথায়?”
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রান্ত প্রচারপ্রমুখ বিপ্লব রায় ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বলেন, “পুলিশে ওবিসি-এর মাধ্যমে মুসলমানদের এই নিয়োগ আমাদের চোখে এসেছে। তবে, আগেও বিশেষ করে তৃণমূল আমলে বিভিন্ন সময়ে এ রকম নক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। ওবিসি-ভূক্ত হিন্দুদের বঞ্ছনা করা হচ্ছে।“
নবগঠিত ‘স্বাভিমান জাগরণ’-এর রাঢ় বঙ্গের মুখ্য সংগঠক তথা জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের প্রাক্তন রাজ্য কার্যকরী সদস্য ডঃ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান,সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা যুগপৎ ওবিসি সম্প্রদায়ের সুযোগ ভোগ করছে যা সংবিধান স্বীকৃত নয়। পশ্চিমবঙ্গের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্য সংবিধানের নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর ( শুধুমাত্র হিন্দু সমাজের) মধ্যে ‘এ’ ও ‘বি’ দুই শ্রেনীতে বিভক্ত করে তার মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্তকরেছেন। ‘এ’ অর্থাৎ অতি পিছিয়ে পড়া জাতির মধ্যে শতকরা নিরানব্বইটি মুসলিম পদবী ঢুকিয়ে তারা একদিকে হিন্দু সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশটিকে বঞ্চিত করছেন। অপরদিকে ইসলাম ধর্মের মূল কাঠামোটিকেই অস্বীকার করছেন।“
তবে ওবিসি বিভাগে মুসলমানদের এমন শ্রেণিবিন্যাস অন্যান্য রাজ্যেও পাওয়া যাবে। বিহারে ওবিসি বিভাগে ১৩৩ টি গোষ্ঠীর মধ্যে ২৪ গোষ্ঠী মুসলিম। মুসলিম দলগুলিও বিহারের অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাদপদ শ্রেণীর বর্ণের তালিকায় রয়েছে।
(ক্রমশ)
হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক
অশোক সেনগুপ্ত
http://bengali.hindusthansamachar.in/NewsDetail?q=583FFC6E06BDBBBF29128A3433BA5683