কথায় আছে ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে- বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেই প্রবাদ বাক্যকে এখন একশো ভাগ সত্যি করছে৷ ভোটের মুখে তৃণমূলের একের পর এক নেতারা যখন বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন তখন প্রদেশ কংগ্রেস বলছে, ‘দেখ কেমন লাগে’৷
গত তিনমাসে তৃণমূলের বড় তিনটে উইকেট ফেলেছে বিজেপি৷ প্রথমে সৌমিত্র খাঁ, তারপর অনুপম হাজরা এবং সদ্য অর্জুন সিংকে দলে টেনে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধাক্কা দিয়েছেন বিজেপির মুকুল রায়৷ অফিসিয়ালি তৃণমূলের সদস্য না হলেও একসময় মমতার ঘনিষ্ঠ ভারতী ঘোষও এখন গেরুয়া বাহিনীর একজন৷
বৃহস্পতিবার অর্জুন সিং বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর ঘনিষ্ঠরা দাবি করে, ভাটপাড়া পুরসভার সিংহভাগ কাউন্সিলর অর্জুনের সঙ্গে রয়েছেন। অর্জুন সিং ভাটপাড়ার বিধায়কের পাশাপাশি ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যানও। ফলে অর্জুন দল বদল করায় তৃণমূল পরিচালিত ভাটপাড়া পুর বোর্ডও বিজেপির দখলে চলে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ মুকুল রায় বলেছেন, এটা ট্রেলার মাত্র৷ পুরো সিনেমা এখনও বাকি রয়েছে৷
ভোটের মুখে তৃণমূলের এমন অবস্থা দেখে খুশি চেপে রাখতে পারছেন না প্রদেশের নেতারা৷ তাঁরা বলছেন, এই তৃণমূল কংগ্রেসই তাদের সাজানো সংসার ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে৷ কাউন্সিলর থেকে সাংসদ-সবাইকে দলে টেনে নিয়েছে৷ দখল করেছে একাধিক পুরসভা, পঞ্চায়েত৷ গত দুবছরে ১৭ জন বিধায়ক কংগ্রেসের তৃণমূলে গিয়েছেন৷ সদ্য দল ছেড়েছেন সাংসদ মৌসম নূর৷ এবার বিজেপি তৃণমূলের ঘর ভাঙছে৷ প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এটা দিদির রাজনৈতিক পাপের ফল৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যর প্রশ্ন, “দিদি আমাদের ঘর যখন ভাঙেন তখন তো আপনার হাসি চওড়া হয়৷ এখন কেমন লাগছে?” তিনি বলেন, “তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গকে আয়ারাম-গয়ারামের রাজ্য বানিয়ে দিল৷”
অর্জুন সিংয়ের দলবদলের পরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছিলেন, “দল ভেঙে আসা মাল নিয়েই তো তৃণমূল। উনি তো কংগ্রেস ভেঙে ছিলেন। কোন মুখে নীতির কথা বলছেন। ধার করা মাল নিয়ে ঘর তৈরি করলে ঝড় এলে সেই ঘর টিকবে না। তৃণমূল দলটাই ধার করা। অন্যের ঘর ভাঙালে মনে রাখতে হবে আমার ঘরও ভাঙতে পারে। বিজেপির থেকেও খারাপ দল তৃণমূল।”
অর্জুন সিং-এর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে নিজের ফেসবুক পেজে মমতাকে খোঁচা দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, “যে রাজনৈতিক নোংরা খেলায় ‘দিদি’ কংগ্রেস দল ভাঙলো, সেই একই খেলায় ‘দিদি’র দল ভাঙছে বিজেপি।” তিনি আরও লিখেছেন, “আমি অনেক আগে বলেছিলাম যে ‘দিদি’কেও একদিন একই খেলার শিকার হতে হবে। History repeats itself বলবো না, বলবো Poetic Justice।”
কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, “যে মুকুল রায়কে দিয়ে তৃণমূল আমাদের দল ভেঙেছিল সেই মুকুল রায় এখন ওনার দল ভাঙছে৷ এবার দেখো কেমন লাগে৷” এটা স্পষ্ট, ‘সাইনবোর্ড’ প্রদেশ কংগ্রেস ভোটের মুখে তৃণমূলের এই হাল দেখে মজা নিচ্ছে৷