ওরে পাগলা ইতিহাস ভুলিস না
১৯৪৬ সালে ঠিক আজকের দিনে লাখো, লাখো হিন্দু হত্যা, হিন্দু রমনী ধর্ষিত হয়েছিল মোল্লাদের হাতে।
ভাই, ভাই স্লোগান ছাড়।
ইতিহাস পড়।
নোয়াখালী গনহত্যা (বা নোয়াখালী হত্যাযজ্ঞ নামেও পরিচিত), হচ্ছে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত স্বাধীন হওয়ার এক বছর পূর্বে, ১৯৪৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলায় স্থানীয়দের দ্বারা সংঘটিত ধারাবাহিক গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, হিন্দুদের জোরপূর্বক ধর্মান্তর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এতে নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া ও সন্দ্বীপ থানা এবং ত্রিপুরা জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম থানার অধীনে সর্বমোট প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থান
নোয়াখালী, বেঙ্গল, ব্রিটিশ ভারত
তারিখ
অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৪৬
লক্ষ্য
বাঙালি হিন্দু
হামলার ধরন
হত্যাযজ্ঞ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, ধর্ষণ
নিহত
৫০,০০০ – ১০০,০০০
হামলাকারী দল
মুসলিম ন্যাশনাল গার্ড, প্রাক্তন-সারভাইসম্যান, ব্যক্তিগত মিলিশিয়া
কারণ
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, মুসলিম জনগোষ্ঠী দ্বারা হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ধর্মীয় কারণে
তৎকালীন অবিভক্ত নোয়াখালী ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী নিয়ে এবং অবিভক্ত ত্রিপুরা জেলা ছিল বর্তমান কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া অঞ্চল নিয়ে গঠিত।
হিন্দুদের উপর এই গণহত্যার শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন এবং প্রায় চার সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ছিল। এতে প্রায় কমপক্ষে ৫০,০০০ হিন্দু হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এছাড়া অনেক হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন এবং হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। প্রায় ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়। এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিছু এলাকায় হিন্দুদেরকে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত। জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিতদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত রাখা হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বা ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হত এবং যখন কোন আনুষ্ঠানিক পরিদর্শক দল পরিদর্শনে আসত তখন তাদেরকে ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে যাবার অনুমতি দেয়া হত। হিন্দুদেরকে ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দিতে হত যাকে বলা হত জিজিয়া (যা একসময় ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। মুসলিম শাসন আমলে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তৎকালিন শাসকদের জিজিয়া নামক বাড়তি প্রদান করত)।
বঙ্গীয় আইন সভার নোয়াখালী থেকে একমাত্র হিন্দু প্রতিনিধি হারান চন্দ্র ঘোষ চৌধুরী এই দাঙ্গাকে হিন্দুদের প্রতি মুসলিমদের প্রচণ্ড আক্রোশের প্রকাশ বলে বর্ণনা করেন। বাংলার সাবেক অর্থ মন্ত্রী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নোয়াখালী দাঙ্গাকে একটি সাধারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে দেখানোর বিতর্ককে প্রত্যাখান করেন। তিনি এ ঘটনাকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সংখ্যাগুরু মুসলিমদের সুপরিকল্পিত এবং সুসংঘটিত আক্রমণ বলে বর্ণনা করেন।৪ঠা নভেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে ভারত ও বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) আন্ডার সেক্রেটারি আর্থার হেন্ডারসন হাউস অব কমেন্সে উল্লেখ করেন,নোয়াখালী আর ত্রিপুরাজেলার (কুমিল্লা,চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমন্বয়ে ছিল ত্রিপুরা জেলা) মৃতের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় সম্ভব হয়নি।এই দুই জেলায় কয়েক হাজার বাড়ি লুট হয়েছে,শুধুমাত্র ত্রিপুরাতেই ৯,৮৯৫ টি ধর্মান্তকরনের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে;নোয়াখালীতে যার সংখ্যা অগনিত। এছাড়া হাজার হাজার হিন্দু নারীদের অপহরণ করা হয়েছে।
মহত্মা গান্ধী নোয়াখালীতে ক্যাম্প করেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নোয়াখালী ও এর আশেপাশের এলাকা গুলো ঘুরে দেখেন। যদিও এই শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কংগ্রেস সভাপতি আচার্য্য কৃপালনির স্ত্রী সুচেতা কৃপালনি নোয়াখালিতে নারী উদ্ধার করতে যান। বেঁচে যাওয়া হিন্দুদের আত্মবিশ্বাস চিরতরে নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা কোন দিন তাদের নিজেদের গ্রামে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেনি। এর মধ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব ভারত বিভাগ মেনে নেন যার ফলে শান্তি মিশন এবং আক্রান্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিত্যক্ত হয়। বেশির ভাগ বেঁচে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুরা তাদের বাড়ি-ঘর ফেলে পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা,আসাম।