আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় পড়াটা ছোটবেলার অভ্যাস । মতে মিলত না অনেক ক্ষেত্রেই, এখনও মেলেনা অনেক ক্ষেত্রেই, তবু পড়ি, এখনও, কারণ এখন না পড়লে পিছিয়ে পড়ার একটা মারাত্মক ভয় থাকে । আগে যেটা ছিল না । অকপটেই বললাম ।
এই অভ্যাসের পেছনে ছিল দুটো কারণ – ১. সম্পাদকীয় ভাষা ২. সম্পাদকীয় যুক্তি বোধ । দুটোই ছিল শেখার মত । না মিললেও আহরণ করতাম অনেক কিছু । মত পার্থক্য থাকলেও বারবার পড়তাম । পরের দিনও পড়তাম । যদি কিছু নেওয়া যায় । নিতামও । আজও এই বয়সকালে কাজে লাগে তা নিরন্তর ।
সেদিন পড়তাম, পড়ে ভাবতাম আরও একবার পড়ি । এখন ? পড়ে ভাবি কেন পড়লাম । সময়টা নষ্ট করলাম, আমার অনেকখানি ।
কেন বললাম ? আজকের,পঁচিশ এগারোর, আনন্দবাজারের অভিজ্ঞতাটা বলি ।
প্রথমে সম্পাদকীয় ” আলোচনা ধাতে নেই ” । যার ওপর থেকে নীচ, প্রতি ছত্রে, প্রতি শব্দে কেন্দ্র বিরোধী বিদ্বেষ । সম্পাদকীয় স্তম্ভে লেখা হয়েছে
” সেই ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে বিস্তীর্ণ রহিয়াছে মোদী সরকারের অ গণতান্ত্রিক মানসিকতা ।”
শেষের দিকে লেখা ” আলোচনা না করিবার রীতি তাহাদের ধর্ম । এই ধর্ম গণতন্ত্রের স্বধর্ম এর বিপরীত । কৃষক আন্দোলন সেই সত্যকেই দেশের ও দুনিয়ার সন্মুখে উন্মোচিত করিয়া দিয়াছে । “
আনন্দবাজারের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই শুধু ইতিহাস ঘেঁটে দেখলাম কেন্দ্রীয় সরকার ১৮ বার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেছিলেন । ফলপ্রসূ হয়নি সেই প্রয়াস । ফলে বিল প্রত্যাহৃত হয় । ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী ।
প্রশ্ন হল আনন্দবাজার তাহলে এ কথা লিখল কেন ? লিখল কেন ” আলোচনা না করিবার রীতি তাহাদের ধর্ম ” ?
উত্তর নেই, উত্তর থাকারও কথা নয় । প্রশ্ন করাটাও উচিত নয়, করলে পিছিয়ে পড়ার সমূহ সম্ভবনা ।
সম্পাদকীয় স্তম্ভের পাশের কলমে এদিন লিখেছেন দেবাশিস ভট্টাচার্য । আনন্দবাজারে ” মামা ” বলে যিনি পরিচিত । মমতা হাঁক পারলেই যিনি দৌড়ান মিলখা সিংয়ের দ্রুততায় । পুর নির্বাচন নিয়ে সেই দেবাশিস লিখতে গিয়ে লিখেছেন – “পুর নির্বাচনগুলি দীর্ঘ দিন বকেয়া ছিল ২০১৮ থেকে ।….বিবিধ কারণে কোথাও যথা সময়ে ভোট হয়নি । সরকার জানিয়ে রেখেছিল বড় ভোট মিটলে ছোট ভোট করাতে বিলম্ব হবে না । এ বার সেই সময় এসেছে ।”
তাহলে ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ চার বছর ধরে পুরসভা গুলিতে নির্বাচন না করাটা কোন অ-গণতন্ত্র নয় ? তাইতো ?
কৃষি বিল নিয়ে আলোচনা না করাটাই শুধু অগণতান্ত্রিক, যেহেতু সেটা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ? তাইতো ?
আর চার বছর ধরে নির্বাচনটা না করানোটা ‘অগণতান্ত্রিক নয়’ কারণ সেখানে জড়িত রাজ্য সরকার ? তাই তো ?
প্রশ্নটা আনন্দবাজারের সম্পাদক সমীপেষুতে লিখব ভেবেছিলাম । লিখিনি, কারণ নিতে পারবে না । লিখলাম তাই এখানেই । এই দেওয়ালেই ।
এরপর আপনি ভাবুন যা লিখলাম তা ঠিক কি না ! এবার আপনি বিচার করুন কেন আনন্দবাজার লেখে তাদের না পড়লে কেন যে কেউ পিছিয়ে পড়বে !!
আমি ঠিক এই কারণেই সম্পাদকীয়টা নিয়ম করে পড়ি । পড়ি আনন্দবাজারও । কারণ না পড়লে সত্যিই জানতেই পারতাম না যুক্তিবোধে আমি ঠিক কতটা আদতে ব্যাকডেটেড !!
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)