মেদিনীপুর কলিজিয়েট স্কুল মাঠে আয়োজিত বিজেপির জনসভায় দলে যোগ দিয়ে ভাইপো হটাও ডাক দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সভায় উপস্থিত লক্ষাধিক মানুষের দিকে স্লোগান তুলে তিনি বারবার বললেন তোলাবাজ ভাইপো হটাও। এদিন বিজেপির সভা মঞ্চে অমিত শাহ শুভেন্দু অধিকারীর হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন। তাকে বরণ করে নেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। জনসভায় বিজেপিতে যোগ দেন একজন তৃণমূল সাংসদ এবং ছয় জন তৃণমূল বিধায়ক। মোট ন’জন বিধায়কের মধ্যে অন্য তিনজন হলেন দুই বাম এবং এক কংগ্রেস বিধায়ক। এছাড়াও প্রাক্তন সাংসদ প্রাক্তন বিধায়ক পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান কাউন্সিলর এবং বিভিন্ন জেলার পদাধিকারী তৃণমূল নেতৃত্ব এদিন অমিত শাহের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দেন।
যোগদান পর্ব শেষ হতেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মুকুল রায় এবং দিলীপ ঘোষ। এরপরই শুভেন্দু অধিকারী ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, তিনি সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় দলের কোনও লোক তার খবর রাখেনি। কিন্তু ওই দুঃসময়ে অমিতজি বারবার তার খবর নিয়েছেন। গ্রামে গ্রামে আন্দোলন করে যে তৃণমূলকে এত উপরে তুলেছি আজ সেই তৃণমূল তার বদনাম করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কিছুদিন আগে মুকুলদা আমায় ঠিকই বলেছিলেন, তিনি বলেছিলেন তৃণমূলে আত্মসম্মান নিয়ে থাকা যায় না। সম্মান নিয়ে বাঁচতে তুই বিজেপিতে চলে আয়। পরে মুকুলদার কথা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। একটা অন্যায় এবং অত্যাচারের সরকারের প্রতিনিধি হয়ে কিছুদিন ধরেই দেখেছি অর্জুন সিংকে প্রায় একশোটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বারবার। কিন্তু অর্জুন সিংকে মারতে পারেনি এবং অর্জুন সিংহও মাথা নত করেননি। এই সরকারের কাজকর্ম দিন দিন বিতৃষ্ণা করে তুলছিল তাই সিদ্ধান্ত নিই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার। এখানে এই বিশ্বের সর্ববৃহৎ দলের একজন সৈনিক হিসেবে একজন কর্মী হিসেবে পতাকা লাগাতে বললে কিংবা দেওয়াল লিখন লিখতে বললে আমি লিখব। এখানে কোন মাতব্বরি করতে পারবো না। এখন থেকে আমাকে বুথে বুথে পাড়ায় পাড়ায় পাবেন। বিজেপিতে যোগদানের ফলে অনেকে আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলতে শুরু করেছে। কিন্তু পিছনের দিকে তাকালে সবাই দেখতে পাবেন আটানব্বই সালের জোটে তৃণমূলের সঙ্গে কে ছিল। কিছুদিন আগে এই মেদিনীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন কাঁথিতে আমরা প্রথম নির্বাচনে লোকসভায় দ্বিতীয় হয়েছিলাম। তিনি এমনভাবে কথাগুলো বললেন যেন অধিকারী পরিবারের সেখানে কোনও ভূমিকাই ছিল না। সেবার দ্বিতীয় হয়েছিল তারপর তৃণমূল বরাবর প্রথম হয়ে এসেছে কিন্তু এবার দিদির প্রার্থী সেই দ্বিতীয় হবে। কোনও অবস্থাতেই প্রথম হতে পারবে না। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, যেখানে সম্মান নেই সেখানে থাকবো না এটা তারপরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন মায়ের প্রতি অন্যায় করেছে শুভেন্দু। কিন্তু আমি জানি মা কাকে বলে। যিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন তিনি আমার মা অর্থাৎ গায়ত্রী অধিকারী আমার মা। মানুষের প্রতি যিনি অন্যায় করেন তিনি কখনও মা হতে পারেন না।
শুভেন্দু বলেন, এই রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে চলতে না দিয়ে বিভিন্ন সময়ে নাম পাল্টে দিয়েছে। সংকীর্ণ রাজনীতির মধ্যে থেকে তৃণমূল অমিত শাহ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকে বহিরাগত বলছে। কিন্তু তাঁদের বোধবুদ্ধি থাকা দরকার যে আমরা সবাই ভারতীয়। এই সংকীর্ণতার মধ্যে ভুগতে ভুগতে রাজ্যের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে তৃণমূল সরকার। চাকরি নেই, এসএসসি, টেট থেকে শুরু করে কোনও পরীক্ষা হয়নি। এই সরকারের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয় তাই সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই বাংলাকে তুলে দিতে হবে মোদিজীর হাতে। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, সবক্ষেত্রে তোলাবাজি শুরু হয়েছে। তোলাবাজ ভাইপোকে হঠাতে হবে এবং বাংলায় বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আগে বলতাম বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও। এরপর স্লোগান হবে তোলাবাজ ভাইপো হটাও বাংলা বাঁচাও।