বাংলায় সাত দফায় লোকসভা ভোটের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হবে ১১ তারিখ। তার আগে আজ নিয়েলসেন কোম্পানির সমীক্ষা জানিয়ে দিল, বাংলায় তৃণমূলের ভোট শতাংশ আগের থেকে কমতে পারে। ফলে চোদ্দর ভোটের থেকে কমে যেতে পারে আসন সংখ্যাও। বিপরীতে এক লাফে বিজেপি-র ভোট বাড়তে পারে অনেকটাই। গত লোকসভার তুলনায় তাদের আসন বাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা কোনওভাবেই ততটা নয়, যতটা অমিত শাহ, মুকুল রায়রা দাবি করছেন।
তিন বছর আগে বাংলায় বিধানসভা ভোট হয়েছিল। তখন নির্বাচন ছিল ত্রিমুখী। এ বার চতুষ্কোণ লড়াই বাংলায়। ১৬-র ভোটে বাংলায় ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। নিয়েলসেনের সমীক্ষা মতে তা কমে নেমে আসতে পারে ৩৮ শতাংশে। অর্থাৎ ৭ শতাংশ ভোট কমতে পারে তৃণমূলের।
১৬-র ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ১২ শতাংশ ভোট। নিয়েলসেন জানাচ্ছে তা এ বার বেড়ে হতে পারে ২৮ শতাংশ। তুলনায় কংগ্রেস পেতে পারে ১০ শতাংশ ভোট। এবং বামেরা ২৪ শতাংশ। এমনিতে জনমত সমীক্ষার পূর্বানুমান সবসময় যে হুবহু মিলে যায় তা নয়। তবে ভোট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের সমীক্ষা থেকে জনমতের একটা আঁচ পাওয়া যায়।
নিয়েলসেনের সমীক্ষায় এ দিন জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত তারা যা ইঙ্গিত পেয়েছে, তাতে তৃণমূল পেতে পারে ৩১টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ৭টি, কংগ্রেস আগেরবারের মতোই চারটি। তবে ২৪ শতাংশ ভোট পেলেও সিপিএমের কপালে একটি আসনও না জুটতে পারে।
কোন কোন আসনে জিততে পারে বিজেপি?
নিয়েলসেন জানাচ্ছে, বিজেপি জিততে পারে দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট, ব্যারাকপুর, আসানসোল ও কৃষ্ণনগর আসন। কংগ্রেস জিততে পারে রায়গঞ্জ, বহরমপুর, জঙ্গিপুর এবং দক্ষিণ মালদহ। বাকি সব আসনে জিততে পারে তৃণমূল।
তৃণমূল অবশ্য এই সমীক্ষার হিসেব মানতে নারাজ। তাদের দাবি, বাংলায় দিদিই এক নম্বর। তৃণমূল অপ্রতিরোধ্য। বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশটি আসনই জিতবে তৃণমূল। একইভাবে বিজেপিরও দাবি, বাংলায় এ বার চোরা স্রোত বইছে। সমীক্ষা তা ধরতে পারছে না। কারণ তৃণমূল গোটা রাজ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে। ভোট বাক্স খুললেই দেখা যাবে কে কোথায় দাঁড়িয়ে।
নিয়েলসেনের এই সমীক্ষা প্রকাশ করেছে একটি টিভি চ্যানেল। তার ভিত্তিতেই এই প্রতিবেদন। তবে এই সমীক্ষা যদি ঠিকঠাক পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে তাহলে একটা বৃহত্তর ছবিও পাওয়া যাচ্ছে। তা হল, অতীতে ঠিক যে ভাবে বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সুবিধা পেত বামেরা, এখন তৃণমূলও সেই সুবিধা পাচ্ছে। যেমন বামেরা প্রায় ২৪ শতাংশ ভোট কেটে নিলেও তাতে কোনও আসনেই তৃণমূলকে পরাস্ত করতে পারছে না। বরং বিজেপি-র যাত্রা ভঙ্গ করে তৃণমূলেরই সুবিধা হচ্ছে। ঠিক এই জায়গা থেকেই রণকৌশল সাজাতে চাইছেন মোদী, অমিত শাহ। তাঁদের মূল কৌশলই হল, ভোটটাকে ক্রমশই তৃণমূল বনাম বিজেপি-র লড়াইয়ে পর্যবসিত করা। অর্থাৎ মেরুকরণ ঘটানো। এবং তা শুধু ধর্মীয় প্রশ্নে নয়। উন্নয়ন, দুর্নীতি দমনের মতো বিষয়কে সামনে রেখে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, নিয়েলসেনের প্রথম সমীক্ষা এবং দ্বিতীয় সমীক্ষায় একটা ফারাক রয়েছে। কারণ ভোটের সময় প্রতিদিনই একটু একটু করে মুড বদলায়। আর এ বার তো সাত দফার ভোট। লম্বা খেলা। ১৯ মে পর্যন্ত কোথাকার জল কোথায় গড়ায় সেটাই এখন দেখার।