ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে দ্রুত রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অমিত শাহের মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে রাজ্যে যে বেনজির হিংসার ঘটনা ঘটে চলেছে সে নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট না পাঠালে বিষয়টা গুরতর দৃষ্টিতে দেখা হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা চিঠি লিখে বলেছেন, গত ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হয়। তারপর থেকেই রাজ্যে হিংসার ঘটনা ঘটে চলেছে। বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। উঠেছে খুনের অভিযোগও। এই ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে ৩ তারিখে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু আজ অবধি কোনও রাজ্যের তরফে কোনও রিপোর্ট পেশ করা হয়নি বলেই অভিযোগ। স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছেন, “প্রথম চিঠির উত্তর পাইনি। এটা আমার দ্বিতীয় চিঠি। মনে করিয়ে দিতে চাই রাজ্যে যে হিংসার ঘটনা ঘটে চলেছে সে ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না করা হলে বিষয়টা আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
বস্তুত, রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও চিঠি দিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এখনও হিংসার ঘটনা ঘটে চলেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপরে নিরন্তর হামলার ঘটনা ঘটছে। ভোট পরবর্তী হিংসা চলছে সমান তালে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
রবিবার ভোট গণনার পর রাত থেকেই রাজ্যের একাধিক প্রান্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। পরদিন থেকে সংঘর্ষের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তৃণমূল বিজেপি হাতাহাতির খবর আসতে থাকে বারবার। বিরোধীদের অভিযোগ, ফল প্রকাশের পর থেকেই বল্গাহীন সন্ত্রাস চালাচ্ছে শাসক দল তৃণমূল। কোথাও পার্টি অফিসে ভাঙচুর করছে, জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কোথাও কর্মীদের মারধর করছে। এমনকি ইতিমধ্যে ৬ জন বিজেপি কর্মী খুন হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানাতে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখাও করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রাজ্যপালকে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্যে তদন্তকারী দল পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পশ্চিমবঙ্গে ৩৫৬ ধারা জারি ও সিবিআই তদন্তের আর্জিও জমা করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, লাগাতার প্রাণহানি ও হিংসার ঘটনার থামাতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তকারী দল পাঠানোর ঘোষণা করেছে মানবাধিকার কমিশন। সেই তদন্তকারী দলকে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতেও বলা হয়েছে।