শুক্রবার রাত তখন ৮ টা বাজে। কসবার অ্যাক্রোপলিস মলের দরজায় ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে স্থানীয় থানার পুলিশ। মল ম্যানেজারকে নিচে ডেকে কসবা থানার এক অফিসার বলেন, ‘খারাপ খবরটা আমাকে এসেই দিতে হয়। কাল থেকে মল বন্ধ রাখতে হবে’। পুলিশের সঙ্গে মল ম্যানেজারকে কথা বলতে দেখে সিকিউরিটি গার্ড, ইন শপ কর্মীদের মুখে উদ্বেগ ও কৌতূহলের ছাপ তখন বেশ স্পষ্ট। মল ম্যানেজার প্রশ্ন করেন, কতদিন পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে? জবাবে থানার অফিসার বলেন, তা এখনও ঠিক নেই। যতদিন না পরিস্থিতি একটু ভাল হয়।
ব্যাপারটা এখন এরকমই। শনিবার সকাল থেকে রাজ্যের সমস্ত বাজার,হাট খোলার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সকালে ৩ ঘণ্টা। বিকেলে ২ ঘণ্টা। সমস্ত শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বার, সিনেমা হল, স্যুইমিং পুল, জিম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। তবে ব্যাপারটা এখানেই হয়তো থেমে থাকবে না। লকডাউন অবধারিত হয়ে উঠতে পারে। রবিবার ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা হবে। তাই যানবাহণ চলাচলে এখনও কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যে সরকার যে পদক্ষেপ করেছে তাতে রাজ্যের মানুষ সতর্ক না হলে ধাপে ধাপে কঠোর পদক্ষেপ করতে পারে প্রশাসন।
নবান্নের শীর্ষ কর্তারা বলছেন, সবটাই এখন বাংলার নিজের মানুষের হাতে। রাজ্যে বল্গাহীন ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষেরই চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ আরও বেশি হারে বাড়লে সামাল দেওয়া যে মুশকিল হবে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ফলে শুক্রবার সরকার যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে মানুষ কীরকম সাড়া দেয় তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এর পরেও যদি দেখা যায়, লোকজন সতর্ক হচ্ছে না, বেপরোয়া ভাবে অকারণে রাস্তায় ভিড় করছে, ঘোরাঘুরি করছে, তা হলে ক্রমশ কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।লকডাউনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে সে ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
বস্তুত সরকারি অফিসগুলিতে ইতিমধ্যেই দৈনিক ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে রোটেশনের ভিত্তিতে কাজ চলছে। বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানও সেরকম ব্যবস্থা নিয়েছে। কেউ কেউ আবার ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু করে দিয়েছে। তাতে কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলির রাস্তায় গাড়িঘোড়ার চাপ এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। ট্রেন ও মেট্রোর সংখ্যা কমেছে। সরকারি সূত্রের মতে, সংক্রমণের প্রকোপ বাড়লে সরকারি যানবাহনের সংখ্যা আরও কমিয়ে দেওয়া হতে পারে।
নবান্নের এক শীর্ষ আমলার কথায়, শুরুতেই লকডাউন করার পক্ষপাতী নয় কেন্দ্র ও রাজ্য। তা অন্তিম বিকল্প হিসাবেই ভাবা হয়েছে। কিন্তু অন্তিম বিকল্প পর্যন্ত ব্যাপারটা যাতে না গড়ায় সে জন্য সাধারণ মানুষকেও সরকারের সার্বিক উদ্যোগের অংশীদার হতে হবে। নইলে সংক্রমণের মোকাবিলা করা একা সরকারের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়তে বাধ্য।