বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন তৃণমূলের ছাত্রনেতা সুজিত শ্যাম। এদিন হেস্টিংসে বিজেপির নির্বাচনী দফতরে তাঁর হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন সর্বভারতীয় বিজেপির সহ সভাপতি মুকুল রায়।
কেন তৃণমূল ছাড়লেন সুজিত?
এ ব্যাপারে আগের মতোই অকপট এই ছাত্রনেতা। তাঁর কথায়, “তৃণমূলে ছাত্র বা যুব সংগঠন বলে কিছু অবশিষ্ট আছে কি? কে তার দায়িত্বে, তারা কী করছে, কী তাদের কর্মসূচি, কোথাও দেখা যাচ্ছে কি!”। সুজিত বলেন, “১৬ বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে দেখি নন্দীগ্রামে গণহত্যাকে সমর্থন করে যাঁরা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী করার ডাক দিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন মমতাদির কাছের লোক। মমতাদির বিরুদ্ধে যাঁরা প্রচার করেছিল, তাঁরাই এখন দিদির মঞ্চে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেই তৃণমূল আর নেই”।
বাঁকুড়ার ছেলে সুজিত। সেখানেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তৃণমূলে মুকুল রায় যখন সেকেন্ডম্যান তখন তাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলেন সুজিত। পরবর্তীকালে ২০১৭ সালে মুকুলবাবু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ধরে নেওয়া হয়েছিল সুজিতও বিজেপিতে যাবেন।
কিন্তু সুজিত তা করেননি। তা ছাড়া অভিযোগ, একদিকে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছিল। আবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ছাত্র বা যুব সংগঠনে কার্যকরী ভূমিকা দেওয়া হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিই সার। গত প্রায় চার বছর ধরে সুজিতকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হয়নি।
ফলে অনেকের মতে, সুজিতের বিজেপিতে যাওয়া প্রায় অনিবার্যই ছিল। খাতায় কলমে যে হেতু সুজিত তৃণমূলে ছিলেন, তাই মুকুলবাবুর সঙ্গে গত কয়েক বছর দেখা সাক্ষাৎ প্রায় বন্ধই রেখেছিলেন। উৎসবে পার্বণে শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া ফোনেও যোগাযোগ রাখতেন না। তবে কয়েক দিন ধরে মুকুলবাবুর বাড়িতে যাতায়াত বাড়াতে শুরু করেন সুজিত। একটি সূত্রের দাবি, সে খবর পেয়ে শাসক দলের এক মুখপাত্র তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর গুরুত্ব বাড়ানোরও প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে মন শক্ত করে ফেলেছেন এই ছাত্রনেতা।
এদিন সকালে ফেসবুক পোস্টে সুজিত লেখেন, “১৬ বছরের সম্পর্ক ভাঙা সহজ নয়। কিন্তু জীবনে এমন কিছু সময় আসে, যখন সামনে তাকাতে হয়”।
তবে সুজিত বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর মুকুলবাবু বলেন, “ফেসবুক দিয়ে রাজনীতি হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না। সুজিত মাটির ছেলে। বাঁকুড়ার মতো জেলায় সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজনীতি করেছে। আবার কলকাতাতেও ছাত্র রাজনীতি করেছে। ও বিজেপিতে আসার পর ছাত্র ও যুব আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি”।
এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ভাতারের সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের নেতা সৌমেন কার্ফা। এদিন সকালেই পূর্ব বর্ধমানের সিপিএম জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিককে চিঠি লিখে দলীয় সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন। বিকেলে হেস্টিংসে বিজেপি কার্যালয়ে তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন।