বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন থেকে রাজনৈতিক ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন শুভেন্দু অধিকারী। দিদির নাম মুখে আনেননি, তবে ঠারেঠোরে বলেছেন।
কিন্তু মঙ্গলবার এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন এই তরুণ তুর্কী। এদিনও অবশ্য দিদির নাম মুখে আনেননি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি চিটফান্ড মালিকদের বিক্রির প্রসঙ্গ টেনে বলতে চেয়েছেন, দুর্নীতির উর্ধ্বে তিনিও নন।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আজ না হয় কাল এ প্রসঙ্গ হয়তো আসতই। কিন্তু এত দ্রুত কেন দুর্নীতির প্রশ্নে দিদির নাম জড়াতে চাইলেন শুভেন্দু তা কৌতূহলের বইকি।
শুভেন্দু এদিন বলেন, আমি তোলাবাজ ভাইপো বলেছি, তাই ভাইপোর রাগ হয়েছে। সেদিন ডায়মন্ডহারবারে আমার উদ্দেশে সারদা-নারদা বলেছে। বলেছে আমিও তোলাবাজ। শুভেন্দুর কথায়, সে তো তদন্ত হবে। তাতেই পরিষ্কার হবে কে দোষী, কে নির্দোষ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হলফনামায় কী বলা হয়েছে? মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি চিটফান্ড সংস্থাগুলোকে কে কিনতে বলেছিল? সারদার তারা টিভিতে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা কে ঢেলেছে? সব বেরোবে এ বার।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন থেকে দুর্নীতি প্রশ্নে মূলত ভাইপোকে নিশানা করছিলেন শুভেন্দু। স্লোগান তুলেছিলেন, তোলাবাজ ভাইপো হঠাও। কিন্তু শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের কথায়, তৃণমূল কৌশলে গোটা বিতর্ক শুভেন্দু-বনাম অভিষেক করে দিতে চাইছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখাতে চাইছেন, তিনি উন্নয়নের রাজনীতিতে রয়েছেন। সেই সঙ্গে টিভিতে সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, কাটমানির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রশান্ত কিশোর বলছেন, মমতাজির বিরুদ্ধে কি কোনও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে?
শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তৃণমূলের এই কৌশলটাই ভেস্তে দিতে চেয়েছেন ‘দাদা’। দুর্নীতির প্রশ্নে পিসি-ভাইপো দুজনকেই টেনেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, সততা-স্বচ্ছতার পর্দা ঝুটো। এই যে কয়লা, বালি, পাথর, গরু পাচার হয়েছে, তোলাবাজি হয়েছে, কে করেছে, কীভাবে করেছে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত জানে, আর আসল লোক জানেন না। তা কি হয়! কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, ব্লকে ব্লকে তিনিই পর্যবেক্ষক। কে কোথায় কী করছে, তিনি সব খোঁজ রাখেন।
এদিনের সভাতেও কয়লা, বালি, পাথর, গরু পাচারের প্রসঙ্গ তোলেন শুভেন্দু। বলেন, “দেখবেন রাস্তা দিয়ে সারি সারি ট্রাক যাচ্ছে। সেই ট্রাক আটকালে একটা কাগজ দেখাবে। ওটা ভাতিজা গেটপাস!… পিসি ভাইপোর সরকার বাংলায় আর ফিরছে না।”
তৃণমূলনেত্রীর বিরুদ্ধে আগে বিরোধীরা এই অভিযোগ তোলেনি তা নয়। কিন্তু আবদুল মান্নানদের কথায়, সারদার সিবিআই তদন্ত করাতে আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। তা আদায় করে এনেছি। কিন্তু সততার মুখোশ খুলে দিতে গেলে একটা মজবুত মুখের দরকার।
অনেকের মতে, শুভেন্দু সেই ভূমিকাতেই নামতে চাইছেন। এদিন টিটাগড় থেকে খড়দহ পর্যন্ত মিছিলের আয়োজন করেছিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। তাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, মুকুল রায়ের ছেলে তথা বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় প্রমুখ সামিল হয়েছিলেন। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে তা শুভেন্দুর রোড শো হয়ে ওঠে। বৈদ্যুতিন ও ডিজিটাল মাধ্যমে সেভাবেই দেখানো হয়। পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, আগামী দিনে ক্রমশই হয়তো এটা মমতার সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ে পরিণত করতে চাইবেন শুভেন্দু। মমতাকে বিতর্কে টানতে চাইবেন। তৃণমূল এর কী জবাব দেয় এখন সেটাই দেখার।