রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলি শুধু নয়, কোভিড টিকাকরণের বৃহত্তর কর্মসূচীতে যোগ দিতে ইচ্ছুক বেসরকারি হাসপাতালগুলিও। কলকাতা সহ জেলার প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা বুধবার স্বাস্থ্যভবনের অধিকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নিজেদের হাসপাতালের কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষজনকেও টিকা দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেখানে। বাড়তি অর্থ ছাড়াই টিকাকরণের কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা। সেই আবেদনে স্বাস্থ্যভবনের সম্মতিও মিলেছে বলে খবর।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, যে সব বেসরকারি হাসপাতাল টিকাকরণ কেন্দ্র তৈরিতে ইচ্ছুক তাদের লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। টিকা দেওয়ার কী পরিকাঠামো আছে বিষয় নিশ্চিত হয়েই ছাড়পত্র দেওয়া হবে। যে হাসপাতালগুলিতে টিকাকরণের কেন্দ্র তৈরি হবে সেখানে কোভিশিল্ড টিকার ডোজ পাঠাবে রাজ্য সরকার। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী ও পরে সাধারণ মানুষকেও টিকা দিতে পারবে হাসপাতালগুলি। টিকাকরণের গোটা প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, চার থেকে পাঁচ জন মেডিক্যাল অফিসার, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তার যথাযোগ্য চিকিৎসা ইত্যাদি যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই।
কলকাতার পিয়ারলেস, উডল্যান্ডস, অ্যাপোলো সহ প্রথম সারির সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারাই ছিলেন গতকালের বৈঠকে। জানা গেছে, বেশিরভাগ বড় হাসপাতালই টিকাকরণের প্রস্তাব জমা করতে চায়। যে সব হাসপাতালে কর্মীর সংখ্যা পাঁচশোর বেশি, পরিকাঠামোও উন্নত, তাদেরই টিকাকরণের অনুমতি দেওয়া হবে। কোভিড টিকাকরণের কেন্দ্র তৈরি করতে হলে কয়েকটি ব্যবস্থা আগে থাকা দরকার, যেমন টিকা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন, টিকার ডোজে কোনওরকম জটিলতা তৈরি হলে অ্যাড্রিনালিন ইঞ্জেকশন ও অন্যান্য চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে, সেসব দেখেই অনুমতি দেওয়া হবে।
শনিবার ১৬ জানুয়ারি থেকে প্রথম দফায় কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া হবে রাজ্যজুড়ে। পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কলকাতায় ৬ লাখের বেশি টিকার ডোজ পৌঁছে গেছে। স্বাস্থ্য দফতরের দুটি ভ্যাকসিন ভ্যানে চাপিয়ে টিকার বাক্সগুলি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বাগবাজারের কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোর্স ও হেস্টিংসের গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল স্টোর্সে। শহর ও জেলা মিলিয়ে মোট ৯৪১টি কোল্ড-চেনে টিকার ভায়াল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। রাজ্যে টিকা দেওয়ার ৪০৮৯টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, বেলেঘাটা আইডি, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, বিসি রায় শিশু হাসপাতাল এবং ৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে শহরের প্রতিষেধক কেন্দ্র হিসেবে বাছা হয়েছে। প্রথম দিনে সাড়ে তিনশো কেন্দ্রে টিকাকরণ হতে পারে। তবে প্রয়োজনে টিকাকরণ শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। টিকা দেওয়ার জন্য রাজ্যজুড়ে প্রায় ৪৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনে ৩৫-৩৬ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হতে পারে। মোট ৬ লাখ ৯০ হাজার টিকার ডোজ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে।