ভাইপোর উইন্ডো, দিদির পাঠশালা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি রুখতে বাংলায় বদলের ডাক প্রধানমন্ত্রীর

রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সততা বজায় রাখাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব থেকে বড় পুঁজি। শনিবার খড়্গপুরে প্রচারে এসে সেই ধারণাতেই মোক্ষম আঘাত করতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্ট ভাবে বোঝাতে চাইলেন, বাংলায় গত দশ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। তা কীরকম?

সহজ করে বোঝানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক—‘দিদির পার্টি হল দুর্নীতির পাঠশালা। সেই পাঠশালার সিলেবাস হল কাটমানি, তোলাবাজি আর সিন্ডিকেট চক্র’। অর্থাৎ করে কম্মে খাওয়ার দল। যেখানে কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। মানুষের উপর অত্যাচার করে টাকা তোলাই উদ্দেশ্য। এবং দুই—“অন্যান্য রাজ্যে উন্নয়নের জন্য সিঙ্গল উইন্ডো রয়েছে। যাতে যে কোনও প্রকল্পের কাজে সুবিধা হয়। কিন্তু বাংলায় ভাইপোর উইন্ডোই হল সিঙ্গল উইন্ডো। সেই জানালা দিয়ে না গললে কোনও কাজ হয় না”।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, বাংলায় গত দশ বছরে একটাই উদ্যোগ হয়েছে। তা হল মাফিয়া উদ্যোগ। বাংলায় বাচ্চারাও জানে কারা সুবর্ণরেখা ও অন্যান্য নদীর বালি চুরি করছে। কারা মানুষের উপর অত্যাচার করছে। কারা আমফানের ত্রাণের টাকা লুঠ করেছে, রেশনের চাল চুরি করেছে, কারা শিক্ষক নিয়োগের কমিশনে দলের ক্যাডার বসিয়ে রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রীর এই সমালোচনার জবাব পরক্ষণেই দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হলদিয়ায় সভা ছিল তাঁর। সেখানে দিদি বলেছেন, “আমাকে তোলাবাজ বলছে। ওদের মতো বড় তোলাবাজ আর কেউ নেই।”

বাংলায় এ বারের নির্বাচনে বিজেপিকে বারবারই বাইরের পার্টি বলছেন মমতা। শনিবারও বলেছেন। অনেকের মতে, এ সবের মাধ্যমে তাঁর দশ বছরের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ঢাকা দিতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী। সে দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর কৌশলও পরিষ্কার। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বিষয়গুলিকে টেনে বের করা এবং শিল্প ও কাজের সুযোগের অভাবে ক্লিষ্ট রাজ্যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখানো।

এর আগেও বাংলায় প্রচারে এসে ডবল ইঞ্জিনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সেই বিষয়টিও উপমা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন মোদী। তিনি বলেন, গাড়ি কাদায় পড়লে যাত্রী কী করেন? গাড়ি থেকে নেমে সেটি ঠেলেন। কিন্তু অর্ধেক লোক একদিকে বাকি অর্ধেক লোক অন্য দিক ঠেললে গাড়ি কাদা থেকে উঠবে না। কেন্দ্রের সরকার বাংলাকে ঠেলে কাদা থেকে তোলার চেষ্টা করছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁকে সরিয়ে দিন। দেখবেন গাড়ি কাদা থেকে উঠে যাবে।

চোদ্দ সালের ভোটে দিল্লির তখতে পরিবর্তন আনতে বিজেপি স্লোগান তুলেছিল আব কি বার মোদী সরকার। শনিবার সেই স্লোগান বাংলায় এনে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। খড়্গপুরের সভা থেকে স্লোগান তুলেছেন, ‘বাংলায় এ বার বিজেপির সরকার। এই ভোটে তাই ভয় নয়। মানুষের জয় হবে’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.