‘রক্তস্নাত সূর্যোদয়’-এর বর্ষপূর্তি ছিল ১০ নভেম্বর। ওই দিন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভা থেকে শুভেন্দু বলেছিলেন, ৭ জানুয়ারি সূর্য ওঠার আগে শহিদ বেদীতে মালা দিতে যাবেন তিনি। প্রতি বছরই যান।
বুধবার রাতে জানা যায়, ৭ জানুয়ারি দুপুরে নন্দীগ্রামের তেখালি ব্রিজ লাগোয়া মাঠে সভা করতে যাবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে ওইদিন কাকভোর এবং ভরদুপুরে নন্দীগ্রামের মাটিতে মুখোমুখি হতেন শুভেন্দু-মমতা। কিন্তু বিষ্যুদবার সন্ধ্যায় কাঁথির রোড শো শেষ করে সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া মাঠের সমাবেশে শুভেন্দু নিজের কর্মসূচির দিন বদলে দিলেন। ৭ জানুয়ারি সকালে শুধু শহিদ বেদীতে মাল্যদান হবে। কিন্তু সভা হবে ৮ জানুয়ারি।
এদিন শুভেন্দু বলেন, “গতকাল মিনি পাকিস্তান বলা মন্ত্রী আর অধ্যাপক রায় কাঁথিতে এসে যা বলে গিয়েছিলেন, তার অনেকটা জবাব আজ দিয়ে দিয়েছি। ৭ তারিখ মাননীয়া যা বলে যাবেন ৮ তারিখ ধরে ধরে তার জবাব দিয়ে দেব।”
অনেকের মতে, একই দিনে বিজেপি-তৃণমূল নন্দীগ্রামে সভা করলে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে কারণেই হয়তো শুভেন্দু কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে দিলেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ নেতার কথায়, “এ হল ইশপের গল্পের মতো। নন্দীগ্রাম নিয়ে আসল মা আর সৎ মায়ের মধ্যে হাত টানাটানি চলছিল। তাতে নন্দীগ্রামই আহত হত। তাই আসল মা হাত ছেড়ে দিলেন।”
এদিন শুভেন্দু মমতার উদ্দেশে বলেন, “আপনি এলে ভাল হবে। রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। আপনার জন্য সেগুলো আবার মেরামত হবে। তাতে আমার জেলারই লাভ। আপনি ৭ তারিখে পুলিশ দিয়ে লোক জড়ো করবেন। আমি ৮ তারিখে ভালবাসা দিয়ে লোক জোগাড় করব।” তিনি আরও বলেন, “আমি আজকে সকালে আমাদের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে ফোন করেছিলাম। তাঁকে বলেছি, আমি ৮ তারিখ নন্দীগ্রামে সভার আয়োজন করছি। আপনি জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলুন। তিনি সিলমোহর দিয়েছেন।”
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতার কথায়, “একদিকে বলছে শুভেন্দু গেল তো কী হয়েছে। দিদিমণি হাজারটা শুভেন্দু তৈরি করে নেবেন। আবার অন্য দিকে শুভেন্দুর মোকাবিলা করতে চারটে-পাঁচটা পাইলট ভ্যান দিয়ে জোড়ায় জোড়ায় মন্ত্রী পাঠাচ্ছে। দেখছে তাদের দিয়েও হচ্ছে না। এখন মুখ্যমন্ত্রীকে ছুটে আসতে হচ্ছে। এখন ওদের পায়ে কাঁটা ফুটেছে। তাই ল্যাংড়াচ্ছে। সেই কাঁটাটার নাম শুভেন্দু অধিকারী।”
গতকাল কাঁথিতে মিছিল এবং সভা করেছিল তৃণমূল। সেই সভার ভিড় দেখে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, “আজকে বুঝে গেলাম, পূর্ব মেদিনীপুরের ১৮টি আসনের ১৮টিই তৃণমূল জিতবে।” স্থানীয়দের বক্তব্য, গতকালের তৃণমূলের কর্মসূচির তুলনায় এদিন শুভেন্দু তথা বিজেপির কর্মসূচি ছিল আড়েবহরে অনেক গুণ বড়। সেই লোকারণ্যে দাঁড়িয়ে পাল্টা এদিন শুভেন্দু বলেন, “গোপীবল্লভপুরের দিলীপ ঘোষ আর কাঁথির শুভেন্দু অধিকারী হাত মিলিয়েছে। বঙ্গোপসাগরের বালুমাটি আর জঙ্গলমহলের লালমাটি এক হয়েছে। দুই মেদিনীপুর থেকে ৩৫টি আসন জেতাব।”
অনেকের মতে ২০১১ সালে ঠিক এমনটাই কৌশল নিয়েছিল তৃণমূল। যে মাঠে শনিবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা গৌতম দেবের জনসভা করত সিপিএম। রবিবার সে মাঠে পৌঁছে যেতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়রা। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা শক্তি প্রদর্শন করো। যাতে মানুষ টাটকাটাটকি তুলনা টানতে পারেন। গতকালের পর আজকের কাঁথি, ৭ তারিখের পর ৮ তারিখে নন্দীগ্রামে জনসভার কর্মসূচি দেখে অনেকেই বলছেন, এ যেন তৃণমূলের অস্ত্রেই তৃণমূল বধের ছক সাজাচ্ছে বিজেপি।