পুলওয়ামা বিস্ফোরণের পর থেকেই কাশ্মীরে বিপুল সংখ্যায় আধা সেনা মোতায়েন শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের ঠিক দিন সাতেক আগে থেকে উপত্যকায় সেনাবাহিনীর ব্যূহ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রশাসিত কাশ্মীরে ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। এবার সেখান থেকেই আধা সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে বাংলার ভোটের জন্য পাঠিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার।
শুক্রবার বেশি রাতে বাংলায় পা রাখার কথা ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। কিন্তু ট্রেন কিছুটা দেরি করায় শনিবার সাত সকালে দুর্গাপুর স্টেশনে নামল দুই কোম্পানি সিআরপিএফ। এদিন সিআরপিএফের একটি ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার সুহান জাহান বলেন, “সরাসরি কাশ্মীর থেকে ১২ কোম্পানি বাহিনী এসেছে। দুই কোম্পানি নেমেছে দুর্গাপুরে। তার মধ্যে এক কোম্পানি যাবে বাঁকুড়া এবং অন্য কোম্পানি বীরভূমে। বাকি বাহিনী অন্যান্য জেলায় মোতায়েন করা হবে ধাপে ধাপে।”
বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কর্মসূচি রয়েছে বাংলায়। জানা যাচ্ছে, ওই দিন সরকারি কোনও প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মোদী। ফলে তার পরেই ভোট ঘোষণা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই রাজ্যে পা রাখতে শুরু করল কেন্দ্রীয় বাহিনী।
২৫ তারিখের মধ্যে রাজ্যে আসবে ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর মধ্যে থাকছে সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, বিএসএফ। এছাড়াও থাকছে এসএসবি, আইটিবিপি।
গত পরশুদিন নামখানা থেকে অমিত শাহ বলেছিলেন এবার বাংলায় ভোটের দিন দিদির গুণ্ডারা রাস্তায় থাকবে না। সবাই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তাছাড়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম যেদিন দিল্লি গিয়ে শাহের সঙ্গে দেখা করেন সেদিন রাতে ফিরে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা দিয়েছেন, এবার বাংলার ভোট হবে সন্ত্রাসমুক্ত।
গত দুমাসে উপ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন দু’বার রাজ্য সফরে এসেছেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার নেতৃত্বে কমিশনের ফুল বেঞ্চও রাজ্যে এসেছিল। সেখানে বিরোধী দলগুলো এক যোগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছিল।
বাংলায় নির্বাচনের দিন সন্ত্রাসের ইতিহাস বহু পুরনো। কংগ্রেস আমল, বাম জমানা বা তৃণমূলের রাজত্ব– সেই রক্তাক্ত ভোটের কোনও পরিবর্তন হয়নি বলেই মত অনেকের। গত পঞ্চায়েত ভোটে মৃত্যুর পর মৃত্যু হয়েছিল রাজ্যে। তৃণমূল জমানায় নির্বাচনী সন্ত্রাসের হার্ট ল্যান্ড বীরভূম। পাড়ুই, ময়ূরেশ্বর, মহম্মদ বাজার, মুরারই– ব্লকে ব্লকে অশান্তি হয় সব ভোটে। এদিন সেই জেলাতেই প্রথম মোতায়েন হতে চলেছে বাহিনী। সেইসঙ্গে বাঁকুড়ায়।
বিজেপির এক রাজ্য নেতা অবশ্য বলেন, যতক্ষণ রাজ্য পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আধা সামরিক বাহিনী থাকবে ততক্ষণ কিছুই হবে না। বড় রাস্তা দিয়ে শুধু ফ্ল্যাগ মার্চ করাবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিলে তবেই যদি কাজের কাজ কিছু হয়।