‘চলছে না, চলবে না’—রাজনীতিতে এক সময়ে বাঙালি যখন ক্লান্ত, তখন পরিবর্তনের পর হরতাল, ধর্মঘট একপ্রকার নিষিদ্ধ হওয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। পরবর্তী কালে জামাই ষষ্ঠীতেও হাফ বেলা ছুটি ঘোষণা হওয়ায় তা বেশ ঘেঁটে গিয়েছে বলে অনেকের মত।
উন্নয়ন নিয়ে বাঙালির ক্ষুধা রয়েছে, তৃষ্ণাও রয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই নীতির পথ ছেড়ে ইদানীং যেমন ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধানের’ পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার, তেমনই বিজেপিও পৌঁছতে চাইছে মানুষের দরজায়।
বুধবার এ ব্যাপারে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, রন্তিদেব সেনগুপ্ত প্রমুখ একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন,– ‘লক্ষ্য সোনার বাংলা’। তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন, সবার পায়ের জুতোর মাপ যেমন সমান নয়, তেমনই রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়নের দাবি ও আগ্রহও সমান নয়। তাই বিজেপির নেতা ও বুদ্ধিজীবী সেলের পঞ্চাশ জনের টিম জানুয়ারি মাসের ২ তারিখ থেকে রাজ্যের সবকটি কেন্দ্রে পৌঁছবে। তাঁরা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁদের অনগ্রসরতার কথা বোঝার চেষ্টা করবেন। পরবর্তীকালে জেলা ও রাজ্যস্তরেও এ ব্যাপারে একটি কনক্লেভ হবে।
সাংবাদিক বৈঠকে অরিন্দম বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলার উন্নয়নে কোনও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির করা হয়নি। সেই গভীর শূন্যতার মাঝেই সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবারই ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। তা ছাড়া উত্তর ও পশ্চিম ভারতের উন্নয়ের সঙ্গে পূর্বের উন্নয়নে যে ভারসাম্যের অভাব রয়েছে সেটা চিহ্নিত করে ‘পূর্বের উদয়ের’ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৃহত্তর লক্ষ্যকে মাথায় রেখেই এই কর্মসূচি।
অন্যদিকে স্বপন দাশগুপ্তের কথায়, সেদিন বোলপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শুনেছি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সোনার বাংলার গড়ে দিয়েছিলেন, আর নতুন করে সোনার বাংলা গড়ার দরকার নেই। কিন্তু প্রথমেই বলা প্রয়োজন, উনি যাঁদের ডানদিকে ও বামদিকে নিয়ে হাঁটছিলেন তাঁরা প্রকৃতই রবীন্দ্রভাবনার ধারক ও বাহক বলে মানুষ বিশ্বাস করেন কি! দুই, এটা ঠিক যে এক সময়ে সোনার বাংলা ছিল। গত পঞ্চাশ বছরে তার অনেকটাই অবক্ষয় হয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে ক্রমশই নিম্নগামী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে, সার্বিক উন্নয়ন বলতে যে ছবিটা দেখানো হয় তা রুগ্ন। তাই আমরা মনে করছি, বাংলার সামগ্রিক উন্নয়ন প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের নবজাগরণও প্রয়োজন।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মোদ্দা বিষয় হল, বিজেপি একটি বিকল্প উন্নয়নের মডেল মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাইছে। রাজ্যে বর্তমান সরকার ও শাসক দলের বিরুদ্ধে বিজেপি নেতারা অহোরাত্র দুর্নীতি, তোলাবাজি, স্বজনপোষণ, তুষ্টিকরণ, পুলিশ রাজের মতো অভিযোগ করছেন। কিন্তু তার সমান্তরালে মানুষকে এও দেখাতে চাইছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে বাংলায় কী ধরনের উন্নয়নের ভাবনা রয়েছে তাঁদের। এবং তা করতে গিয়ে যে ভাবে একটা উন্নয়নের তর্ক রাজ্য জুড়ে শুরু করতে চাইছেন, যার রাজনৈতিক তাৎপর্যও রয়েছে। প্রথমত এতে রাজ্যের মধ্যেই আঞ্চলিক অনগ্রসরতা নিয়ে অসন্তোষ উস্কে দেওয়ার কৌশল রয়েছে, সেই সঙ্গে মানুষের কাছে পৌঁছনোরও চেষ্টা রয়েছে। তা কতদূর সফল হবে তা সময় বলবে।